শুক্রবার সকাল ৬টা ৫৫ মিনিট। রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানাধীন স্বামীবাগ এলাকার ৩৫ নম্বর বাসার সামনে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করছিলেন মধ্য বয়সী দুই নারী-পুরুষ। হাতে তাদের একটি হলুদ ও নেভি ব্লু রঙয়ের কাপড়ের শপিং ব্যাগ। সকাল ৭টার দিকে লোকজনের উপস্থিতি কমলে ব্যাগটি সেই ৩৫ নম্বর বাসার সামনের রাস্তায় ফেলে দ্রুত যান তারা।
এদিকে ফেলে যাওয়া ব্যাগটির ভেতর থেকে ভাঙা কণ্ঠে কান্নার শব্দ পেয়ে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে প্রথমে ভেবেছিলেন ব্যাগের মধ্যে বিড়াল ছানা। ঝামেলা ভেবে কোনো এক দম্পতি হয়তো রাস্তায় ফেলে গেছে প্রাণীটিকে। কাছে গিয়ে ব্যাগ খুলতেই চমকে যান তারা। দেখতে পান, বিড়াল ছানা নয়; ব্যাগের ভেতর হাত-পা ছুঁড়ে কাঁদছে ফুটফুটে এক নবজাতক! তার সদ্য ছেড়া নাড়ীতে তখনো লাগানো ছিল ক্লিপ। এতে বুঝতে কষ্ট হয় না যে সদ্যই ভূমিষ্ট হয়েছে শিশুটি। সময় নষ্ট না করেই স্থানীয়রা নবজাতককে নিয়ে যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে।
শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা গেন্ডারিয়ার স্থানীয় বাসিন্দা স্কুল শিক্ষিকা রোমানা আক্তারসহ উপস্থিত সবাই চেয়েছিল শিশুটি বেঁচে থাকুক। কিন্তু তা হলো না। না ফেরার দেশে চলে গেল শিশুটি। দীর্ঘ সাত ঘণ্টা মৃত্যু যন্ত্রণায় ভুগে আজ দুপুর ২টার দিকে ঢামেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় শিশুটির।
এই ঘটনায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় রাজধানীতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও শিশুটির মা-বাবাকে ধিক্কার জানিয়েছেন অনেকেই। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ শিশুটিকে ব্যাগে ভরে রাস্তায় ফেলে যাওয়া সেই নারী-পুরুষকে খুঁজছে।
শিক্ষকা রোমানা আক্তার জানান, তিনি সপরিবারে স্বামীবাগের ৩৫ নম্বর বাসায় থাকেন। আজ সকালে তার বাসার সামনের রাস্তায় পড়ে থাকা হলুদ ও নেভি ব্লু রঙয়ের একটি ব্যাগে নবজাতকটিকে দেখতে পেয়ে প্রতিবেশীরা তাকে খবর দেয়। পরে শিশুটিকে ঢামেক হাসপাতালের নবজাতক (ওয়ার্ড-২১১)ওয়ার্ডে ভর্তি করেন তিনি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরের দিকে মৃত্যু হয় শিশুটির।
নবজাতক ওয়ার্ডের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নিহত নবজাতকের ওজন ছিলো ৭৯০ গ্রাম। ২২ থেকে ২৪ সপ্তাহ মাতৃগর্ভে থাকার পর আজ ভোরের দিকে ভূমিষ্ট হয়েছে শিশুটি। নবজাতকের নাভিতে ক্লিপ দেখে ধারণা করা হচ্ছে, কোনো একটি ক্লিনিকে তার মায়ের গর্ভপাত ঘটানো হয়েছে। শিশুটির মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। ছুঁড়ে ফেলার কারণে শিশুটি এই আঘাত পেয়েছে বলে ধারণা করছেন তারা।
গেন্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মিজানুর রহমান জানান, নবজাতটিকে তার মা-বাবা রাস্তায় ফেলে গেছে না শিশুটি দুর্বৃত্তায়নের শিকার তা এখনো জানা যায়নি। নবজাতকটি কারা ফেলে গেছে, আশেপাশের ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা দেখে তা শনাক্তের চেষ্টা চলছে। এই ঘটনায় একটি হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন