নরসিংদীর শিবপুরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চুরির সন্দেহভাজন হিসেবে আতিকুর রহমান ভূঁইয়া (২২) নামের এক যুবককে আটক করে শরীরে গরম পানি ঢেলে ও পায়ে গুলি করে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠেছে। নির্যাতনের শিকার আতিকুর রহমান ভূঁইয়া শিবপুর উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের লামপুর গ্রামের আবদুল হান্নান ভূঁইয়ার ছেলে।
গত রবিবার (১১ নভেম্বর) আতিকুর রহমান ভূঁইয়াকে আটক করা হয়। এরপর ওইদিনই শরীরে গরম পানি ঢেলে নির্যাতন ও পরে পুলিশ হেফাজতে রেখে গত বুধবার (১৪ নভেম্বর) রাতে নির্জনস্থানে নিয়ে ডান পায়ে গুলি করে আহত করা হয় বলে অভিযোগ করেছে আতিকুরের পরিবার। তবে পুলিশ বলছে, গত বুধবার রাতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আতিককে একটি পিস্তলসহ গ্রেফতার করা হয়।
আহতের পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেন, ১০/১৫ দিন আগে লামপুর গ্রামের সানাউল্লাহর একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা চুরি হয়। এ ঘটনায় গত রবিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে একটি সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে সাদা পোশাকে শিবপুর থানার উপপরিদর্শক মনিরের নেতৃত্বে চার জন পুলিশ লামপুর এলাকায় গিয়ে আতিককে খুঁজতে থাকেন। এসময় কোনও কিছু না বুঝেই আতিকুর রহমান দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে আটক করে। পরে আতিকের বাবা পুলিশকে ৮ হাজার টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। তার ১০ মিনিট পরেই টাকা ফেরত দিয়ে আতিককে আবার আটক করে থানায় নিয়ে যায়। ওই সময় উপস্থিত লোকজনকে পুলিশ জানায়, সিএনজি অটোরিকশা চুরির অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছে। ওইদিন সন্ধ্যার পর আতিকের বাবা থানায় গিয়ে পুলিশকে এক হাজার টাকা দিয়ে আসেন যাতে তাকে নির্যাতন না করা হয়। কিন্তু পরদিন সোমবার সকালে থানায় গিয়ে আতিকের শরীর গরম পানিতে ঝলসানো দেখতে পান বাবা। পরে তাকে ওষুধ কিনে দিয়ে আসেন তিনি। এসময় আতিকের বাবা পুলিশের কাছে জানতে চান তাকে কখন আদালতে পাঠানো হবে। তখন পুলিশ জানায় সুস্থ না হলে তাকে আদালতে দেওয়া হবে না। একইভাবে মঙ্গলবার ও বুধবার থানায় গিয়ে আতিকের খোঁজ নেন তার বাবা আবদুল হান্নান ভূঁইয়া। বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ফোন করে জানানো হয় তার ছেলে আতিক পায়ে চোট পেয়েছেন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় আহতের বাবা আবদুল হান্নান ভূঁইয়া বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট আতিকুর। তার বিরুদ্ধে কোনও মামলা নাই। গত রবিবার সাদা পোশাকে চার জন পুলিশ আমাদের এলাকায় আসলে ভয়ে আমার ছেলে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। পরে পুলিশ তাকে দৌড়ে ধরে আটক করে। পরে আমি ধার করে এনে নগদ ৮ হাজার টাকা দিলে পুলিশ আতিককে ছেড়ে দেয়। এর মিনিট দশেক পরই আবার আমাকে ডেকে নিয়ে আমার কাছে টাকা ফেরত দিয়ে তাকে আটক করে নিয়ে চলে যায়। পরে আমার ছেলেকে নির্মমভাবে নির্যাতন চালানো হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে খাবার নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ আমাকে ফোন করে জানায় আতিক পায়ে চোট পেয়ে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে ভর্তি। পরে সেখানে গিয়ে দেখি তার ডান পায়ে গুলি করা হয়েছে। হাসপাতালে আতিক আমাকে জানায় রাতে তাকে চোখ বেঁধে কোথাও নিয়ে গিয়ে পায়ে গুলি করা হয়।’
এ ব্যাপারে বাঘাব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তরুণ মৃধা বলেন, ‘আতিককে গত রবিবার আটক করার পর তার বাবার সঙ্গে থানায় গিয়ে সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু পুলিশ জানায় গাড়ি চুরির অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, ছাড়া যাবে না। তাকে কোর্টে চালান করা হবে। পরে আর খোঁজ নেইনি।’
এদিকে শিবপুর থানা পুলিশ বলছে, গত বুধবার রাতে ডাকাতির প্রস্তুতির খবর পেয়ে উপজেলার মুরগিবেড় এলাকায় অভিযান চালায় তারা। সেখানে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি চালায় ডাকাত সদস্যরা। কিছুক্ষণ পর পুলিশ রুবেল নামের একজনকে চার রাউন্ড গুলি এবং আতিকুর রহমান নামের একজনকে একটি পিস্তলসহ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক করা হয়। তবে ওইসময় পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও গুলি চালানো হয়নি বলে জানান শিবপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মমিনুল ইসলাম। তিনি আহতের পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আতিকের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। একটি গত মাসের ১০ তারিখের ডাকাতির অভিযোগে এবং অপরটি চলতি মাসের ৭ তারিখে ডাকাতির প্রস্তুতির অভিযোগে। গত বুধবার রাতে মুরগিবেড় এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একটি পিস্তলসহ আতিকুর রহমান নামের একজন এবং রুবেল নামের একজনকে চার রাউন্ড গুলিসহ আটক করি। এ ঘটনায় এসআই মনির বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে তাদের বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতি ও অস্ত্র আইনে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আতিকের পরিবারের লোকজনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তাকে আমরা আগে আটক করিনি।’
নরসিংদী জেলা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) এমএন মিজানুর রহমান বলেন, ‘গত বুধবার দিনগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে পুলিশ হেফাজতে আতিক নামের একজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তার ডান পায়ের হাঁটুর নিচে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন