খুনি আর অপরাধীদের নিরাপদ আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা। একের পর এক ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধারে আতঙ্কিত উপজেলাবাসী। গত দুই মাসে গোলাপগঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এসব ঘটনা তদন্ত ও খুনিদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে পুলিশ। কারা, কী কারণে নির্মম হত্যার পর মরদেহ ফেলে রেখে যাচ্ছে দীর্ঘ তদন্তে কোনো রহস্য উন্মোচন করতে পারছে না পুলিশ।
ছয়জনের মরদেহ উদ্ধারের পর তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেলেও বাকি তিনজনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি। কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি এসব হত্যাকাণ্ডের।
ছয়টি মরদেহের মধ্যে একটির পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয় কানাইঘাট থানা পুলিশের সহযোগিতায়। বাঘার চুনু নামে এক বৃদ্ধ ব্যক্তির পরিচয় মিলে স্বজনদের মাধ্যমে। তবে ওই বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে সন্তানরা উধাও।
৬ আগস্ট সিলেটের গোলাপগঞ্জের লক্ষ্মীপাশার একটি ডোবা থেকে ৩০ বছর বয়সী এক অজ্ঞাত যুবকের গলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে বেওয়ারিশ হিসেবে ময়নাতদন্তের পর সিলেট নগরের মানিকপীরের টিলায় তাকে দাফন করা হয়। ওই ঘটনার কোনো ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
গত ৮ অক্টোবর উপজেলার বাঘা ইউনিয়নের রস্তমপুর এলাকার একটি ব্রিজের নিচ থেকে এক পুরুষের (৫০) রক্তমাখা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তারও কোনো পরিচয় না পাওয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে ময়নাতদন্তের পর সিলেট নগরের মানিকপীরের টিলায় দাফন করা হয়।
পরে মরদেহের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ২৮ অক্টোবর কানাইঘাট থানা পুলিশের সহযোগিতায় ওই ঘটনার ক্লু এবং মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ।
এই খুনের ঘটনায় জানা যায়, নিহতের শাশুড়ি তার ভায়রাকে দিয়ে খুন করান। এ ঘটনায় শাশুড়িসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়। খুন হওয়া ওই ব্যক্তি কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের গোরকপুর গ্রামের ফয়জুর রহমানের ছেলে মুহিবুর রহমান (৫০)।
২৮ অক্টোবর সকালে গোলাপগঞ্জ উপজেলা সদর ইউনিয়নের সুরমা নদী থেকে ৪০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহ ভেসে যেতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। কোনো পরিচয় না পেয়ে ময়নাতদন্তের পর সিলেট নগরের মানিকপীরের টিলায় বেওয়ারিশ হিসেবে তাকে দাফন করা হয়। এই ঘটনারও ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
৩০ অক্টোবর গোলাপগঞ্জের সুরমা নদী থেকে চুনু মিয়া (৬০) নামে এক বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত চুনু মিয়ার বাড়ি বাঘা ইউনিয়নের মাজেরমহল্লা গ্রামে। মরদেহ উদ্ধারের পর নিহতের স্বজনরা সাংবাদিকদের জানান কেউ তাকে হত্যা করেছে। এ ঘটনার পরবর্তী আর কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
গত ৩ নভেম্বর গোলাপগঞ্জে নিখোঁজ হওয়ার চারদিন পর বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি পুকুর থেকে উপজেলার মাইজভাগ গ্রামের মৃত আছাব আলীর ছেলে আজমল আলীর (৫৬) হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
মরদেহ উদ্ধারের সময় নিহতের প্রতিবেশীরা সাংবাদিকদের জানান, নিহতের ছেলেরা তাদের বাবাকে দীর্ঘদিন থেকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে আসছিল। ঘটনার পর থেকে তার ছেলেরা উধাও হয়ে যান।
সর্বশেষ গত ৮ নভেম্বর গোলাপগঞ্জের লিচু বাগান থেকে ২৬ বছর বয়সী অজ্ঞাত এক তরুণীর হাত-পা বাঁধা গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্তের পর বেওয়ারিশ হিসেবে সিলেট মানিকপীর টিলায় তাকে দাফন করা হয়। কে বা কারা ওই তরুণীকে হত্যা করেছে তার কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ।
এছাড়া গত সেপ্টেম্বর মাসে উপজেলার সুরমা নদী দিয়ে একটি গলিত মরদেহ ভেসে যায়। স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিলে জানানো হয়, ভারত থেকে ওই মরদেহ সুরমা নদী দিয়ে ভেসে আসছে। ফলে ওই মরদেহ উদ্ধার করেনি পুলিশ।
গোলাপগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম ফজলুল হক শিবলী বলেন, ছয়টি মরদেহের মধ্যে আমরা দুটির পরিচয় পেয়েছি। উদ্ধার অপর মরদেহগুলোর নাম-পরিচয় জানা যায়নি। নিহতদের স্বজন ও খুনিদের খুঁজছে পুলিশ। এসব হত্যার রহস্য উন্মোচন করা যাবে এবং জড়িতদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক দল মাঠে রয়েছে বলেও জানান ওসি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন