কিশোরগঞ্জ কালেক্টরেট ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার আবু তাহের মো. সাঈদের মৃত্যু নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি অফিসার্স কোয়ার্টারে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হলেও তার মুখ, নাক ও কপালে আঘাতের চিহ্ন থাকায় এসব রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
পরিবারের দাবির মুখে আজ শনিবার সকালে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনালের হাসপাতালে মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। সকালে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রমজান মাহমুদের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি চিকিৎসক দল ময়নাতদন্ত করেন।
এ সময় সেখানে কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, ‘ মৃতদেহের মুখ, নাক ও কপালের মাঝখানে এবং কপালের বামপাশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঠিক কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে সেটি জানার জন্য ভিসেরা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে।’
এদিকে ময়নাতদন্তের পর শনিবার দুপুরে কালেক্টরেটের একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আবু তাহের সাঈদের মরদেহ তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার বাহেরচর গ্রামে পাঠানো হয়। এর আগে শুক্রবার রাত ১০টায় শহরের পাগলা মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শহরের অলোর মেলা এলাকায় সরকারি কর্মকর্তাদের ডরমেটরি ভবনের একটি কক্ষ থেকে অচেতন অবস্থায় সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট আবু তাহেরকে উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ জেলারেল হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তফদার মো. আক্তার জামাল জানান, ‘শুক্রবার সকালে তার (আবু তাহের সাঈদ) ট্রেজারি থেকে জেএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বের করে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভোরে একজন জুনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট অমার কাছে ট্রেজারির চাবি নিয়ে এসে জানান তিনি অসুস্থ। তাই আসতে পারেব না। আমি জেলা প্রশাসক স্যারের সঙ্গে কথা বলে প্রশ্ন বের করে পরীক্ষা হলে চলে যাই। বিকেলে জানতে পারি আবু তাহের সাঈদ ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়।’
জানা গেছে, হাসপাতালে নেয়ার পর জরুরি বিভাগের কর্মরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ডাক্তার জানান, হাসপাতালে নেয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ম্যাজিস্ট্রেট আবু তাহের সাঈদের মৃতদেহ সার্কিট হাউসে নেয়া হয়। সেখানে খোলা জায়গায় তার মরদেহ রাখা হয়। এ সময় তার নাক, কপালসহ মুখের কয়েকটি জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। খবর পেয়ে, গ্রামের বাড়ি থেকে তার ছোট ভাই সাইফুর ইসলামসহ কয়েকজন আত্মীয় আসেন।
এ সময় জেলা প্রশাসক সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, প্রথমে ময়নাতন্ত ছাড়া তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হলেও তার ছোট ভাই সাইফুল ইসলামের আপত্তির মুখে ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
যোগাযোগ করা হলে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী জানান, ‘পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাওয়ার পর এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
উল্লেখ্য, ম্যাজিস্ট্রেট আবু তাহের সাঈদ দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে কিশোরগঞ্জে চাকরি করছেন। একজন সৎ ও সাহসী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তার খ্যাতি ছিল। ব্যক্তিজীবনে অবিবাহিত এ মানুষটি ৭ম ব্যাচে সহকারী কমিশনার হিসেবে চাকরিতে যোগদান করলেও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একই পদে কর্মরত ছিলেন। পদোন্নতির জন্য আবেদনও করেননি। তাই কিশোরগঞ্জবাসীর কাছে তিনি ছিলেন একজন আদর্শ ব্যক্তিত্ব।
পাঠক মন্তব্য
""দীর্ঘ ১৭ বছর ... একজন সৎ ও সাহসী ম্যাজিস্ট্রেট. . . মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একই পদে . . .পদোন্নতির জন্য আবেদনও করেননি।"" আবেদন না করলে প্রমোশন হবেনা- ক্যাডারপোস্টে এমন হয় কি??
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন