পাকিস্তানী তরুণ আলেম মাওলানা ওয়ালীউল্লাহ্ মারুফের গৃহীত উদ্যোগে এবং নেত্রকোনার তরুণ আলেম মাওলানা মঞ্জুর আহমাদের আন্তরিক সহায়তায় ৩৫ বছর পর নিজ পরিবারের সদস্যদের সাথে ভিডিও কলে কথা বলার সুযোগ পেলেন জাহেদা খাতুন (৫০) নামে এক নারী।
মাওলানা মঞ্জুর আহমাদ নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার চানপুর গ্রামের মাওলানা আব্দুল মুকিতের সুযোগ্য পুত্র এবং কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
জাহেদার বাড়ি ঝিনাইদহ জেলা সদরের ভুটিয়ারগাতী গ্রামে। তার পিতার নাম মরহুম আব্দুস সাত্তার ও মাতার নাম রাজিয়া খাতুন।১৯৮০ সালের দিকে স্বামীর বাড়ি থেকে পারিবারিক কলহের জের ধরে একটি নারী পাচারকারী দল কর্তৃক পাকিস্তানের করাচীতে বিক্রি হয়ে যায় জাহেদা। এক পর্যায়ে পাকিস্তানের এক সহৃদয়বান আলেম তাকে খরিদ করে আজাদ করে দিয়ে স্থানীয় এক যুবকের সাথে বিবাহ দেন। দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানে বসবাস করলেও স্বদেশ ও স্বজনদের ভুলতে পারেননি জাহেদা। এ নিয়ে সর্বক্ষন তার মনে এক প্রকার অশান্তি বিরাজমান ছিল। অবশেষ স্থানীয় এক তরুন আলেম মাওলানা ওয়ালীউল্লাহ্ মারুফ জাহেদার মানসিক কষ্ট বুঝতে পেরে তার ছবি ও ভিডিও সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিস্তারিত বিবরণ লিখে জাহেদার পরিবারকে খুঁজে বের করতে বাংলাদেশী ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সাহায্যে কামনা করেন। ফেসবুক ব্যবহারের সুবাদে এই স্টেটাস মাওলানা মঞ্জুর আহমাদের চোখে পড়ার পর এই করুন কাহিনী পড়ে তিনি জাহেদার স্বজনদের খুঁজে বের করার দৃঢ সংকল্প করেন। কিন্তু তার কাছ তথ্যসূত্র শুধু এতটুকু যে, জাহেদার বাড়ি তৎকালীন যশোর জেলার ঝিনাইদহ থানার ভুটিয়ারগাতী গ্রামে।
এতটুকু তথ্য নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় আর্থিক অনটন সত্ত্বেও গত বুধবার (৭ নভেম্বর) তারিখে মাওলানা মঞ্জুর জাহেদার পরিবারকে খুঁজতে ঝিনাইদহ যান এবং অনেক খুঁজাখুঁজি করার পর অবশেষে জাহেদার পরিবারের সন্ধান লাভ করেন। অতঃপর পাকিস্তানী আলেম মারুফের মাধ্যমে ভিডিও কলে মা বোন সহ অন্যান্য স্বজনদের সাথে জাহেদাকে কথা বলার সুযোগ করে দেন মাওলানা মঞ্জুর। দীর্ঘদিন পর মেয়েকে দেখে জাহেদার বৃদ্ধা মা রাজিয়া খাতুন আবেগে আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এরপর বৃদ্ধা রাজিয়া খাতুন সহ অন্য স্বজনরা মাওলানা মঞ্জুরের জন্য প্রাণখুলে দুআ করেন ও আন্তরিক জ্ঞাপন করেন।
এ ব্যাপারে মানবতার সেবক, তরুন আলেম ও কবি মাওলানা মঞ্জুর আহমাদ ইনসাফকে বলেন, পাকিস্তানের ওয়ালীউল্লাহ্ মারুফ নামে সেই ভাইয়ের আইডি থেকে জাহেদা খাতুনের বিবরণ লেখা একটি পোস্ট ফেসবুকে ঘুরছিল। ফেসবুকের এক ওয়াল থেকে অন্য ওয়ালে ঘুরতে ঘুরতে পোস্টটি আমার নজরে আসে। আমি তার এ করুন কাহিনী পড়ে তার আত্মীয় স্বজনদের খুঁজে বের করার দৃঢ সংকল্প করি। অতঃপর মহান আল্লাহ্ তা’আলার সাহায্যে আমি কাজটি করতে সমর্থ হই। জাহেদা দীর্ঘদিন পাকিস্তানে বসবাস করার কারনে তিনি বাংলা ভাষা প্রায় ভুলে গেছেন তবে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত খুব ভাল মনে আছে তার এবং তিনি জাতীয় সংগীত সুন্দর করে গাইতেও পারেন।
মাওলানা মঞ্জুর আরো বলেন, আমি পাকিস্তানী ভাইকে বললাম, জাহেদার পরিবার খুব গরীব। পাসপোর্ট ভিসা করে জাহেদাকে দেশে আনার সামর্থ তাদের নেই। এ ব্যাপারে আপনারা আরেকটু কষ্ট করে একটা উদ্যোগ নিলে ভাল হতো।
তখন পাকিস্তানী ভাই আমাকে জানালেন, তারা সেখানে জাহেদার জন্য একটি ফান্ড তৈরি করছেন এবং অতি তারাতারি তারা জাহেদাকে বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন