ইয়াবা ও অস্ত্র মামলায় স্বামীকে আসামি করে কারাগারে পাঠানোর ভয় দেখিয়ে এক গৃহবধুকে ধর্ষণ করে এয়ার হোসেন সোহেল নামের পুলিশের এক উপ-পরিদর্শক (এসআই)। ঘটনাটি স্বজনরা জেনে যাওয়ার পর লোকলজ্জা আর অপমান থেকে রক্ষা পেতে টয়লেটের হারপিক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান ওই গৃহবধু। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চট্টগ্রাম মহানগরের জিইসি মোড়ে অবস্থিত মেট্টোপলিটন হাসপাতালে তাকে ভর্তি করেছেন সেই এসআই নিজেই। বর্তমানে তিনি মেট্রোপলিটন হাসপাতালের জেনারেল ওয়ার্ডের এফ -৩ এ চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় আইনগত প্রতিকার চেয়ে সিএমপির উত্তর জোনের উপ- পুলিশ কমিশনারকে লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছেন ওই গৃহবধুর স্বামী মো. শাহজাহান শেখ।
এ প্রসঙ্গে সিএমপির উত্তর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ ধরনের একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। ঘটনা সত্য হলে অবশ্যই বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
জেলার কর্ণফুলী থানার শাহ-মিরপুর পুলিশ ফাঁড়ির (ক্যাম্পের) ইনচার্জ (এসআই) এয়ার হোসেন সোহেল বদলি হয়ে সিএমপির বায়েজীদ বোস্তামী থানায় রয়েছেন।
চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. মোহাম্মদ নুরুন নবী জানান, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া এক বিষ খাওয়া রোগীকে গত ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি আশংকামুক্ত হলেও শারীরকিভাবে খুবই দুর্বল ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।’
প্রতিকার চেয়ে গৃহবধূর স্বামীর দায়ের করা সেই অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, পূর্বপরিচয়ের সূত্রধরে এসআই এয়ার হোসেন সোহেল পুলিশের পোশাক কারখানায় চাকরি ও নগরের মধ্যে দোকান নিয়ে দেয়ার আশ্বাস দেন। বিশ্বাস করে গত ১৫ আগস্ট স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসেন শাহজাহান। নগরের বাকলিয়া থানার কালামিয়া বাজার এলাকায় একটি ভবনের ৫ম তলায় বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে উঠেন। এরপর এসআই এয়ার হোসেন সোহেল সে বাসায় কিছু দিন থাকার সুযোগ চেয়ে শাহজাহানকে অনুরোধ করেন। সোহেলের সে অনুরোধ ফেলতে পারেননি শাহজাহান। পরে এক মহিলাকে নিয়ে শাহাজাহানের ভাড়া বাসায় উঠেন এসআই সোহেল। কিছুদিন থাকার পর ওই মহিলাকে কোথায় পাঠিয়ে দিয়ে একা থাকা শুরু করেন।
শাহজাহানের অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ১৮ আগস্ট শাহজাহান রাতে বাসায় ফিরেই ঘুমিয়ে পড়েন। এরপর এসআই এয়ার হোসেন সোহেল ডিউটি শেষে বাসায় এসেই খুবই জ্বর উঠেছে বলে শাহজাহানের স্ত্রীর সাহায্য চান। সে সময় শাহজাহানের স্ত্রী সোহেলের কক্ষে যেতেই তার স্বামী শাহজাহানকে ইয়াবা ও অস্ত্র মামলা দিয়ে চালান দেয়ার ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে ধর্ষণ করেন।
ঘটনাটির একদিন পর জানাজানি হলে শাহজাহান স্ত্রীকে গ্রামের বাড়িতে চলে যেতে বলেন। আর তখন এসআই সোহেল শাহজাহানের স্ত্রীকে বাসা থেকে বের করে নিয়ে গিয়ে নগরের বিভিন্ন স্থানে রেখে টানা নয় দিন ধর্ষণ করেন। পরে কোনো দিক না পেয়ে শাহজাহানের স্ত্রী এক বাসার টয়লেটে ঢুকে হারপিট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। তখন এসআই এয়ার হোসেন সোহেল নিজেই শাহজাহানের স্ত্রীকে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে নিয়ে ভর্তি করেন জিইসি মোড় মেট্টোপলিটন হাসপাতালে।
ধর্ষণের শিকার সেই গৃহবধু বলেন, এসআই এয়ার হোসেন সোহেল বাসায় এসেই আমার স্বামীকে ইয়াবা ও অস্ত্রদিয়ে ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে দু’জনকে জিম্মি করে ফেলেন। একই সঙ্গে আমাকে অস্ত্র টেকিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে বাসার তার কক্ষে আটকে রেখে সারারাত জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। পরে ঘটনাটি স্বামী শাহাজাহনকে জানাতেই রেগে বকাবকি করে গ্রামের বাড়ি চলে যেতে নির্দেশ দেন। তখন এসআই সোহেল শাহজাহানের স্ত্রীকে গ্রামের বাড়িতে পৌছে দেয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের করে নিয়ে বিভিন্ন বাসায় আটকে রেখে টানা নয় দিন ধর্ষণ করেন। তবে বাঁচার উপায় না দেখে গত ২৮ অক্টোবর হারপিক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান।
এ প্রসঙ্গে সিএমপির বায়েজিদ বোস্তামী থানার উপ-পরিদর্শক এয়ার হোসেন সোহেলের হাসপাতালে ভর্তি রেজিস্ট্রারে দেয়া মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন