পরিবেশ দূষণের কারণে যে পলিথিন এক সময় পরিত্যাজ্য ঘোষণা করা হয়েছিল, দোর্দ-প্রতাপে তার ফিরে আসায় সচেতন নাগরিকমাত্রই উদ্বিগ্ন। পলিথিন জনস্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি পরিবেশ দূষণেও এর জুড়ি নেই। এটিকে মানবজীবনের শত্রু হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়। পলিথিনের তুলনায় পাটেরব্যাগ বা কাগজের ঠোঙাকে বিবেচনা করা হয় বন্ধু হিসেবে। আমরা কী বন্ধুকে দূরে সরিয়ে শত্রুকে আলিঙ্গন করব? যদি সেটি না করি, এখনই পলিথিন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
বাসায় মেহমান আসার সময় শিশুদের জন্য এনেছেন চিপস, চকলেট, জুস ও আইসক্রিম। আরও নিয়ে আসা হয় বিস্কুট ও চানাচুর ইত্যাতি। এসবই প্লাস্টিকের মোড়কে মোড়ানো। খাওয়া শেষে আবর্জনার ঝুড়িতে মোড়ক ফেলতে গিয়ে আঁতকে ওঠার মতো অবস্থা। আঁতকে ওঠার কারণ হচ্ছে- বাসার ময়লার ঝুড়ির ভেতরের পলিব্যাগ ভর্তি হয়ে গেছে বিভিন্ন মোড়ক ও প্লাস্টিকের নানা মাপের বোতলে। এবার ফেলে দেবার পালা ময়লার ডাস্টবিনে। কিন্তু তারপর এসব প্লাস্টিকের পণ্য কোথায় যায়, কী হয়, ভেবেছি কী?
১৮৪৫ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার পার্কস নাইট্রো- সেলুলোজ, প্লাস্টিসাইজার ও তার সঙ্গে অন্য দ্রাবক পদার্থের মিশ্রণ ঘটিয়ে প্রথম তৈরি করেছিলেন প্লাস্টিক। হালের পলিথিন এই প্লাস্টিকেরই অন্যরূপ। কী তৈরি হচ্ছে না এ প্লাস্টিক দিয়ে? কম্পিউটার, টেলিভিশন, গাড়ির যন্ত্রাংশ, বৈদ্যুতিক সুইচ ও তার, ব্যাগ, পোশাক, বিভিন্ন আসবাব, খেলনা, মোড়ক থেকে শুরু করে দাঁতমাজা, চুল আঁচড়ানো এমনকি খাবার পরিবেশনের অতি প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গটিও প্লাস্টিকের তৈরি। শিল্প ও বাণিজ্যের অনেক কাজই প্লাস্টিক ছাড়া কল্পনা করাও এখন অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সেখানে প্রতিদিনের গৃহস্থালির কাজেও এর ব্যাপক ব্যাবহার থাকবে, এতে আর অবাক হবার কী আছে? কিন্তু ইদানীং জানতে পারছি, শুধু খাবার পরিবেশনেই নয়, স্বয়ং খাবার হয়ে উঠেছে প্লাস্টিক। প্লাস্টিকের চাল, ডিম এরপর নাকি তরল দুধও প্লাস্টিকের অবদান!
কিন্তু কেন শিল্প, বাণিজ্য, পরিবহন ও গৃহস্থালি সবক্ষেত্র এত দ্রুত গ্রাস করছে প্লাস্টিক? কারণ সহজ- এর কাঁচামাল দামে সস্তা, টেকসই ও তুলনামূলক কম খরচে এটি থেকে যে কোনো আকৃতি দেওয়া যায়, ওজনে হালকা, দেখতে স্বচ্ছ, বিদ্যুৎ, পানি ও কেমিক্যাল বিরোধী হওয়ায় খাবার ও অন্য উপাদান অনেকদিন নিরাপদ ও সংরক্ষিত থাকে। আর তাই মানুষ ঝুঁকছে প্লাস্টিকের দিকে। প্লাস্টিকের দাপটের কারণে আমরা হারাতে বসেছি মাটি, স্টিল, কাঁসা, সিরামিক, বাঁশ, বেত, পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার।
প্রতিদিন সারা বিশ্বে যে ৩৬ লাখ টন কঠিন বর্জ্য ফেলা হয়, তার মাঝে প্রায় ১০ শতাংশ এই সর্বনাশা প্লাস্টিক। প্রতিবছর সাগরের কোলে ঠাঁই নেয় প্রায় এক কোটি টন প্লাস্টিক। গবেষণার ফলাফলে জানা যায়, সাগরের যত প্লাস্টিক বর্জ্য তার ৯০ শতাংশ এশিয়া ও আফ্রিকার ১০টি নদী বয়ে নিয়ে আসে।
এশিয়ার ইয়াংসি নদী একাই প্রায় ১৫ লাখ টন বর্জ্য সাগরে বয়ে নিয়ে যায়। বর্তমানে যেভাবে চলছে, ঠিক সেভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ সাগরে মাছের চেয়ে প্লাস্টিকের ওজন বেশি হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন