উপরে বদি আর ইয়াহিয়া নিচে বাম থেকে সাইফুল করিম, জাফর আলম, নুরুল আলম
ইয়াবা গডফাদারের নতুন তালিকা প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছে কক্সবাজারের স্থানীয় প্রশাসন। টেকনাফ থানার ওসি রনজিত কুমার বড়ুয়াকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে আনা হয়েছে নতুন ওসি।
ইয়াবা কারবারিরা আগে থেকেই গা ঢাকা দেয়ায় এই তালিকা ধরে তাদের বাড়িতেও হানা দেয়া হচ্ছে। গত রোববার থেকে এই সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে।
ইতোমধ্যে ইয়াবার অবৈধ অর্থে গড়া একাধিক ব্যক্তির ‘প্রাসাদতুল্য’ বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
টেকনাফের শীর্ষ ইয়াবা গডফাদার জিয়াউর রহমান, আবদুর রহমান ও নুরুল হক ভুট্টর বাড়ি গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভি আজিজ
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, বাংলাদেশে যাতে ইয়াবা ঢুকতে না পারে, সেজন্য তারা কঠোর এই অভিযানে নেমেছে। গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশে করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ৭৩ ইয়াবা গডফাদারের প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালানো হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তালিকাতেও শীর্ষ ইয়াবা গডফাদার হিসেবে উঠে এসেছে উখিয়া-টেকনাফের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি ও তার পরিবারের এক ডজন সদস্যের নাম।
কক্সবাজারে মাফিয়া ডন হিসেবে পরিচিত আনিসুর রহমান ইয়াহিয়া। টেকনাফের শাহাপরীর দ্বীপের মৃত নবী হোসেনের এই ছেলে শাহাপরী গ্রুপেরও মালিক। ইয়াহিয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উখিয়া-টেকনাফ আসনে আওয়ামী জোটের শরিক জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনিও আছেন শীর্ষ মাদক কারবারির তালিকায়।
নতুন তালিকায় বরাবরের মতো এবারো শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে নাম এসেছে হাজি সাইফুল করিমের। আছেন টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম ও তার চার ছেলে।
উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সংসদ অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর দুই ছেলে— রাশেদ মোহাম্মদ আলী ও মাহবুব মোরশেদও দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তারাও হালনাগাদ তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন।
এই তালিকায় আছেন টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নুরুল আলম চেয়ারম্যান, টেকনাফ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল্লাহর দুই ভাই— আবদুর রহমান ও জিয়াউর রহমান, টেকনাফ উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান মৌলভি রফিক, তার ভাই টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মৌলভি রফিক।
কক্সবাজারের মহেশখালীর আওয়ামী লীগ নেতা শরিফ বাদশা ও পূর্ণ চন্দ্র দে’র নামও এসেছে তালিকায়। রয়েছে চকরিয়ার কাউন্সিলার রেজাউল করিম এবং আজিজুল হক সোহেল।
অভিযানের বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সোমেন মণ্ডল পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘সরকারি বিভিন্ন সংস্থার তথ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত সেপ্টেম্বরে তালিকা হালনাগাদ করেছে। এতে আসা ৭৩ গডফাদারসহ কক্সবাজারের ইয়াবা কারবারিদের ধরতে বাড়ি বাড়ি টাস্কফোর্স অভিযান চালাচ্ছে।’
সাবেক সংসদ মোঃ আলীর পুত্র মাহবুবুর মোরশেদ
টেকনাফ থানার নবাগত ওসি প্রদীপ কুমার দাস পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘টেকনাফ থেকে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের নির্মূল করার শপথ নিয়েই আমি কাজ শুরু করেছি। এজন্য যা যা করা প্রয়োজন, সবই করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের নির্দেশ পালন করতেই টেকনাফে এসেছি। ইয়াবা গডফাদাররা যত শক্তিশালীই হোক, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন