ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকের ছাদ থেকে নিজের শিশু সন্তানকে ছুড়ে ফেলে হত্যার পর সীমা আক্তার (২৫) নামে এক গৃহবধূর আত্মহত্যার রহস্য এখনো উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
কী নিয়ে স্বামীর সঙ্গে সীমার অভিমান? কী কারণে সীমা আত্মহত্যা করেছে- এসব বিষয় মাথায় নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে পুলিশ।
এছাড়া সীমা মানসিক কোনো সমস্যায় ভুগছিলেন কি-না সে বিষয়টিও গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। চিকিৎসকদের ধারণা, সীমা হয়তো মানসিক কোনো সমস্যায় ভুগছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক চিকিৎসক গুলজার হোসেন উজ্জল জাগো নিউজকে বলেন, সীমা হয়তো ‘পোস্ট-পারটাম সাইকোসিস’ রোগে ভুগছিলেন। এটি প্রসবোত্তর জটিল একটি মানসিক সমস্যা। প্রতি হাজার শিশু জন্মের মধ্যে একজন অথবা দুইজন প্রসূতি এই সমস্যায় ভোগেন। স্বামী-শ্বশুরবাড়ির অবহেলা-বঞ্ছনা, দাম্পত্য কলহ এই মানসিক জটিলতাকে আত্মহত্যার প্রবণতার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, সাধারণত প্রসবের দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে এই রোগের উপসর্গ দেখা দিলেও কিছু ক্ষেত্রে উপসর্গ প্রসবের দু-একদিনের মধ্যেই দেখা দিতে পারে। প্রথম গর্ভধারণ এবং অবিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে রোগের ঝুঁকি বেশি।
এদিকে, ঘটনার দুইদিন পেরিয়ে গেলেও সীমার আত্মহত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় সীমার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ না দেয়ায় সদর মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
তবে সীমার স্বামী মনির মিয়ার সঙ্গে পারিবারিক বিষয়ে কলহ থেকেই সীমা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছেন তার বাবা শামায়ান মিয়া।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আলমগীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের তদন্ত কাজ চলছে। সীমার ব্যবহৃত মেবাইল আমরা জব্দ করেছি। সেখান থেকে ক্লু পাওয়া যায় কি-না সেটিও খতিয়ে দেখছি। সীমার পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে আমরা এখন পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য পাইনি। তারা শোকাবহ অবস্থায় আছেন। যতটুকু তথ্য পেয়েছি স্বামীর সঙ্গে ঝগড়ার জেরেই সীমা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
এর আগে গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জেলা শহরের পুরাতন জেলরোডস্থ পাঁচতলা বিশিষ্ট দি ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও স্পেশালাইজড হাসপাতালের ছাদ থেকে নিজের চারদিন বয়সী ছেলে সন্তানকে নিচে ফেলে হত্যার পর সীমাও লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। তিনি ল্যাবএইড হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী লাইফ কেয়ার শিশু ও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। গত ১৬ অক্টোবর বিকেলে প্রসব বেদনা নিয়ে হাসপাতালটিতে ভর্তি হন তিনি। ওইদিন রাতেই সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ছেলে সন্তানের জন্ম দেন সীমা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন