বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার অভিযোগে এবার বিএনপির সঙ্গ ছেড়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি। নিজেদের দীর্ঘদিনের জোটের বাইরে তিনটি দলকে নিয়ে বিএনপি 'জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট' নামে একটি নতুন জোট গড়ার তিন দিনের মাথায় গতকাল মঙ্গলবার জোট ছাড়ার ঘোষণা দিল দুটি দল। একই সঙ্গে বিএনপির বিরুদ্ধে জোটের শরিক দলগুলোকে অন্ধকারে রাখার অভিযোগও এনেছে তারা।
অবশ্য বিএনপি দাবি করেছে, দল দুটির অভিযোগ সঠিক নয়। তারা সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে জোট ত্যাগ করেছে। এটি সরকারেরই একটি ষড়যন্ত্র। তবে আওয়ামী লীগ বলছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদ্দেশ্য খারাপ, তাই বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে ভাঙনের সুর বাজছে। এদিকে গত রাতেই ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির একাংশ নির্বাহী কমিটির সভা ডেকে চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্তুজাকে বহিস্কার করে ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। সভায় একই সঙ্গে সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. আবদুল মুকাদ্দিমকে পার্টির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার গুলশানের ইমানুয়েলস ব্যাঙ্কুয়েট হলে সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয় ন্যাপ ও এনডিপি। নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবি ও ১১ লক্ষ্য নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য নতুন করে জোট করেছে বিএনপি। এই জোট নিয়ে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে গেল দুটি দল। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আরও কয়েকটি দলও ২০ দলীয় জোট ছাড়তে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, দল ও ২০ দলীয় জোটবিরোধী কার্যকলাপ এবং সবশেষে জোট ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় এনডিপির নির্বাহী কমিটির বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে খোন্দকার গোলাম মোর্তুজাকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এনডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গত রাতে নির্বাহী কমিটির বৈঠকে গঠনতন্ত্র মোতাবেক বহিস্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ সিদ্ধান্ত গতকাল কার্যকর করা হয়। এর আগে জোট ও সংগঠনবিরোধী কার্যক্রমের অভিযোগে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মঞ্জুর হোসেনকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মো. ওসমান গণি পাটোয়ারীকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মনোনীত করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্তুজা ও মহাসচিব মঞ্জুর হোসেন ঈসা, ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া ছাড়াও আরও অনেক নেতা উপস্থিত ছিলেন। তবে সংবাদ সম্মেলনে জেবেল রহমান গাণি ছাড়া কেউ কথা বলেননি।
দুই দলের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের সময় খুব কাছাকাছি হলেও বিএনপি সে বিষয়ে শরিকদের পরিস্কার করছে না। বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা করতে চাইলে তারা কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছে। সংসদ নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির সাড়া না পাওয়ার কথাও বলেন তিনি। অন্যদিকে, এক-এগারোর কুশীলবদের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। এর থেকে তারা মনে করছেন, বিএনপি তার সব নৈতিক অবস্থান থেকে বিচ্যুত। গাণি অভিযোগ করেন, বিএনপি নতুন জোটে যাওয়ার বিষয়ে সব সময় ২০ দলীয় জোট শরিকদের অন্ধকারে রেখেছিল।
অবশ্য জোট ভাঙনের ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সমকালকে বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে তাদের অভিযোগ সঠিক নয়- ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে আলোচনা করে জোট গঠনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত জোটের বৈঠকেই নেওয়া হয়েছে। এখন তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে জোট থেকে বেরিয়ে গেছেন। তবে এটা স্পষ্ট, তারা সরকারের সঙ্গে একটি সম্পর্ক তৈরি করেই গেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জোট ভাঙনে সরকারের ষড়যন্ত্র রয়েছে। বিএনপির বিরুদ্ধে সরকারের নানামুখী ষড়যন্ত্রের মধ্যে এটিও একটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সমকালকে বলেন, এতে ২০ দলীয় জোটে কোনো প্রভাব পড়বে না। জোট যেভাবে আছে, সেভাবেই থাকবে। ওয়ান-ইলেভেনের সঙ্গে যুক্তরাও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে আছে বলে জোটত্যাগী নেতাদের অভিযোগ সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, এ অভিযোগ সঠিক নয়।
২০ দলের সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, তারা সব সিদ্ধান্ত জোট নেতাদের জানিয়েই নিয়েছেন। গত সোমবারের বৈঠকেও দল দুটির শীর্ষ নেতারা ছিলেন। এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সবাই সম্মত হয়েছেন। মূল্যায়ন নিয়ে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, তারা দুটি দলের শীর্ষ নেতা। আসন তো তারা পেতেই পারেন। তবে এখনও তো নির্বাচনের তফসিলই হয়নি। আসন বণ্টন নিয়ে কোনো আলোচনাও তো শুরু হয়নি। আসলে আসন বণ্টন এখানে বিষয় নয়, এর পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে বলে মনে করি।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ন্যাপ নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হলেও এনডিপির নিবন্ধন উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। এ বিষয়ে এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার মোর্তুজা সমকালকে জানান, তার দলের নিবন্ধনের মামলা এর আগে তিনবার আপিল আদালত খারিজ করে দেন। তবে গত সোমবার আবারও আপিল করা হয়েছে। এবার নিবন্ধন ফিরে পাওয়া যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ ন্যাপের এক নেতা জানান, তারা আপাতত দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেন। তবে অচিরেই তারা ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় মহাজোটে যোগদান করবেন। আগামী নির্বাচনে সংসদীয় আসন বণ্টনের বিষয়েও তাদের সঙ্গে সুরাহা হয়েছে। এর মধ্যে তাদের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণির নির্বাচনী আসন নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা দলীয় ফোরামে কঠোর গোপনীয়তায় নানা আলোচনা ও বিশ্নেষণের মাধ্যমে গত সোমবার মধ্যরাতে ২০ দলীয় জোট ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে ২০ দলীয় জোট ত্যাগের পর জেবেল রহমান গাণি সমকালকে জানান, আগামী নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করবেন। তারা নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গোলাম মোর্তুজা সমকালকে বলেন, তারা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চান। তবে সেই দাবি পূরণ না হলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপের চেয়ারম্যান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুর পর এ দলের চেয়ারম্যান হন প্রখ্যাত রাজনীতিবীদ মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়া। তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। বিএনপি প্রতিষ্ঠার আগে ন্যাপ দলটি স্থগিত করেন তিনি। পরে তার মৃত্যুর পর শফিকুল গাণি এই দলকে সক্রিয় করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ নামকরণ করেন। তার মৃত্যুর পর দলের চেয়ারম্যান হন মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়ার নাতি জেবেল রহমান গাণি।
যাদু মিয়ার মেয়ে ও বিএনপির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রীতা রহমান সমকালকে বলেন, জেবেল রহমান গাণির সিদ্ধান্তে তার পরিবার আহত হয়েছেন। বর্তমান সরকার যেনতেন নির্বাচন করার জন্য ২০ দল ভাঙার চেষ্টা করছিল। কষ্ট পেয়েছি, এজেন্ডা বাস্তবায়নের এই ফাঁদে প্রথমেই ভাইয়ের ছেলে পা দিয়েছে।
তিনি বলেন, ২০ দল ছেড়ে যাওয়ার আগে তাদের কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। যতদূর জেনেছেন, মনোনয়নের বিষয়ে জেবেলের একটা আক্ষেপ ছিল। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে পারত সে। তা না করে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে তিনি সত্যিই মর্মাহত।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ন্যাপ, এনডিপিসহ আরও কয়েকটি দল একসঙ্গে বিএনপি জোট ত্যাগের কথা আলোচনায় ছিল। তবে শেষ মুহূর্তে এসে নানা সমীকরণে মনোভাব পরিবর্তন করে জোটের অন্য শরিক দলগুলো। এ মুহূর্তে জোট ত্যাগ না করলেও নির্বাচনে আশানুরূপ আসন না পেলে যে কোনো অজুহাতে তারা চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর মধ্যে অন্তত তিনটি দল বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ রাখছে। এ ছাড়া আরও ৪-৫টি দলও অসন্তুষ্ট রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করে বর্তমানে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা সমকালকে বলেন, বিগত এপ্রিল মাস থেকে তারা আসন বণ্টনের বিষয়টি ফয়সালা করতে চাপ দিচ্ছিলেন। তবে বিএনপি বিষয়টি পাশ কাটিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়তে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তখন থেকে জোটের অনেক শরিক দলের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। আসনের নিশ্চয়তা না পেলে আরও বেশ কয়েকটি দল এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তারা মনে করেন, বিএনপি একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ২০ দলীয় জোটকে বহাল রেখে বিএনপির একক কর্মসূচি পালন, পুরনো মিত্রদের বাদ রেখে নতুন মিত্রদের সঙ্গে যৌথ কর্মসূচি পালন তাদের জন্য সম্মানজনক নয়।
জোটের অন্য এক শীর্ষ নেতা বলেন, ২০ দলে বিএনপি ছাড়াই আটটি দল নিবন্ধিত। দলগুলো হচ্ছে- এলডিপি, বাংলাদেশ ন্যাপ, কল্যাণ পার্টি, বিজেপি, খেলাফত মজলিস, জাগপা, জমিয়তে ওলামা ইসলাম ও মুসলিম লীগ। এ দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মতো যোগ্যতা রাখে। কাজেই তাদের বিএনপি অবমূল্যায়ন করলে তারা তো সুযোগ নেবেই। বিএনপির ওপর অসন্তুষ্ট হওয়ার পাশাপাশি নানা চাপ ও লোভ-লালসা, হুমকি-ধমকিও রয়েছে বলে জানান ওই নেতা। সরকার তো সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবেই। বিএনপিকে বাইরে রেখে অন্য দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচন করতে চাইবে। ওই নেতা এও বলেন, জেবেল রহমান বিগত কয়েকটি জোটের মিটিংয়ে যোগ দেননি। বিএনপির উচিত ছিল তার সঙ্গে যোগাযোগ করা। জোটের সমন্বয়ে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারক কয়েকজন নেতা জানান, নির্বাচন সামনে থাকায় হয়তো কোনো প্রলোভনের কারণে তারা জোট ছেড়েছে। রাজনীতিতে জোট গড়া, জোট ভাঙা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কোনো দল জোটে না থাকতে চাইলে জোর করার কিছু নেই। বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি ভাবার কিছু নেই।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপি যোগ দেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে জেবেল রহমান গাণি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট গঠন নিয়ে যাদের অগ্রণী ভূমিকা দেখা যাচ্ছে, তাদের প্রায় সবাই ১/১১-এর অরাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাদের অনেকেই মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এমনকি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন যে মামলায় কারাগারে রয়েছেন, সে মামলা দায়েরের নেপথ্য নায়করা আজ বিএনপির পাশে। এক প্রশ্নের জবাবে গাণি বলেন, খালেদা জিয়া আট মাস আগে কারাগারে যাওয়ার পর জোটের ব্যানারে কোনো কর্মসূচি করতে না পেরে তারা 'ব্যথিত'।
ন্যাপের চেয়ারম্যান বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা যে আচরণ করেছেন, তা 'রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত'। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যুক্ত হয়ে বিএনপি তার রাজনৈতিক আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ন্যাপ ও এনডিপি নেতারা। তবে সোমবার রাতে ২০ দলের বৈঠকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ার বিষয়কে স্বাগত জানানো হয়েছিল জোটের পক্ষ থেকে।
আওয়ামী লীগ থেকে কোনো প্রস্তাব পেয়েছেন কি-না- জানতে চাইলে গাণি বলেন, কোনো দল তাদের কাছে তালিকা চায়নি। মহাজোট থেকেও কোনো প্রস্তাব পাইনি। তারা এ মুহূর্তে পর্যবেক্ষণ করতে থাকবেন।
তবে বিএনপির জোটে পুনরায় ফেরার পথও রেখেছেন গাণি। তিনি বলেন, তারা বিএনপির বর্তমান যেসব কর্মকাে র বিরোধিতা করছেন, এগুলো থেকে তারা ফিরলে আবারও বিএনপির সঙ্গে ঐক্য সম্ভব।
২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘদিনের জোটগত সম্পর্ক ত্যাগ করে ইসলামী ঐক্যজোট। এর আগের বছর ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বিএনপি জোটে ভাঙন ধরিয়ে বেরিয়ে যায় শেখ শওকত হোসেন নিলুর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)। অবশ্য ওই দু'দলের একটি করে অংশ ২০ দলীয় জোটে থেকে যায়। ন্যাপ ও এনডিপি বেরিয়ে যাওয়ায় গত দুই বছরে তৃতীয়বারের মতো ভাঙনের কবলে পড়বে বিএনপি জোট।
১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জামায়াত এবং ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হককে সঙ্গে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠনের ঘোষণা দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এর পর ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল কলেবরে বেড়ে ১৮ দলীয় জোট হয়। পর্যায়ক্রমে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও সাম্যবাদী দল যোগ দিলে তা ২০ দলীয় জোটে পরিণত হয়।
গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে শনিবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে বিএনপি। শর্ত না মানার কারণ দেখিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়নি বিকল্পধারা। পরে বিকল্পধারাকে বাদ রেখেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। বিএনপি এখন নতুন জোটের দিকে বেশি মনোযোগ দেবে। আগামী ২৩ অক্টোবর সিলেট থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচি শুরু হবে। পরে দেশের সব বিভাগ ও মহানগরীতে কর্মসূচি পালন করবে ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপি আগের জোটকে সঙ্গে রেখে নতুন জোট নিয়ে সরকার পতনের আন্দোলন এগিয়ে নিতে চায়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন