ঢাল নেই-তলোয়ার নেই নিধিরাম সরদার! গ্রামের এ প্রবাদ বাক্যের মতোই একজন চিকিৎসক দিয়ে খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে চলছে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। নামে ৫০ শয্যা হলেও বাস্তবে নেই একটিও। দুই বছর আগে ৫০ শয্যার বেড আসলেও এখনো রয়েছে বাক্সবন্দি। ৫০ শয্যার বেড, অ্যাম্বুলেন্স, এক্স-রে, ইসিজি, ওটিসহ প্রয়োজনীয় প্রায় সকল যন্ত্রপাতি থাকালেও নেই কোনো কার্যক্রম। নেই কোনো ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী। যার ফলে ইনডোর চিকিৎসা একেবারেই চালু হয়নি। বহির্বিভাগের রোগীদের আসা-যাওয়া আর পরামর্শ নেয়াই হলো ৫০ শয্যা এ হাসপাতালের নিত্যদিনের চিত্র।
ফলে এখানে চিকিৎসা নিতে আসা জরুরি রোগীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। কেউবা আবার দালালের খপ্পরে পড়ছেন। ১৩০ দশমিক ২০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ উপজেলার সোয়া ২ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার ভরসাস্থল এ হাসপাতাল চলছে একজন ডাক্তার দিয়ে। ফলে এ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ২৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫০ শয্যা এ হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর ২০১৫ সালের ২৫ অক্টোবর সাবেক খাদ্যমন্ত্রী স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি তৎকালীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নুরুল হককে সাথে নিয়ে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতাল উদ্বোধন করেন।
হাসপাতালে গিয়ে ভবনের প্রধান ফটকে দেখা যায় জটলা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এরা সবাই বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি এবং স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালাল। হাসপাতালে ঢোকার পর নিচ তলার বারান্দায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভিড় পরিলক্ষিত হয়।
হাসপাতালের ২য় তলায় গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কক্ষে একজন চিকিৎসক বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, আউটডোরের সরঞ্জাম দিয়েই চালানো হচ্ছে এখানকার চিকিৎসা কার্যক্রম।
প্রতিদিন ২শ’ থেকে আড়াইশ’ রোগীর ব্যবস্থ্যপত্র দেয়া হয় এখান থেকে। ইনডোর চালু না থাকায় গড়ে প্রতিদিন ৮-১০ জন রোগী অন্যত্র রেফার্ড করা হয়।
হাসপাতালের (ভারপ্রাপ্ত) উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আমিনূর রসুল জাকি বলেন, ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে আমি ছাড়া অন্য কোন চিকিৎসক নেই। বেডসহ মালামাল আসলেও প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় এ হাসপাতালের ইনডোর সেবা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সীমিতভাবে প্যাথলজি, অ্যাম্বুলেন্স, আউটডোর ও জরুরি বিভাগে সেবা চালু আছে। এ হাসপাতাল পুরোপুরি চালু করতে সকল শূন্যপদ পূরণ করতে হবে। এখানে জুনিয়র কনসালট্যান্ট ১০ জন থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র একজন তাও আবার প্রেষণে কাজ করেন টাঙ্গাইলে। সহকারী সার্জন থাকার কথা ৫ জন আছে মাত্র ১ জন। তার মতে সার্বিক স্বাস্থ্য চিত্রই এখানে একেবারেই নাজুক।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে শূন্যপদ পূরণসহ সকল প্রকার চাহিদাপত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠিয়েছি।
২০১৮ সালের নিয়োগ বিধিমালায় পরিবর্তন আসায় ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির নিয়োগ এখন সরকারিভাবে বন্ধ। এ হাসপাতালের সকল শূন্যপদ পূরণ, অর্থ ছাড় এবং জিও (সরকারি আদেশ) হলে এ হাসপাতাল পুরোপরি চালু করা সম্ভব হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানে চাহিদামত ঔষধ নেই। টাঙ্গাইল থেকে যা দেয়া হয় তা দিয়েই বিপুল সংখ্যক রোগীর ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয়। ইনডোর চালু না থাকায় জরুরি রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অন্যত্র রেফার্ড করা হয়।
কথা হয় চিকিৎসা নিতে আসা রোগী নিজবর্ণি গ্রামের আব্দুল মালেক, ধনবাড়ী কলেজপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, নতুন বাজার গ্রামের আয়েশা বেগম, বানিয়াজান গ্রামের সালেহা বেগম, রোজিনা বেগম, আব্দুর রশিদসহ কয়েকজন রোগীর সাথে। তারা জানান, সব ওষুধ এখানে পাওয়া যায় না। বাইরে থেকে কিনতে হয়।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. শরীফ হোসেন খান জানান, এটা প্রশাসনিক ব্যাপার। জনবল নিয়োগ, অর্থ বরাদ্দ এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আসলেই এ হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন