বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়ে আর জামাতাকে নিজের কাছে রাখতে ঘর বানিয়ে দিতে চেয়েছিলেন মা কানন বালা চৌধুরী। এ জন্য মৃত স্বামীর ভিটায় বসতঘর নির্মাণের আয়োজনও শুরু করেছিলেন। কিন্তু বাদ সাধল একই বাড়ির প্রভাবশালীরা। কিছুতেই তারা বৃদ্ধ কানন বালাকে ঘর বানাতে দেবেন না। সব আপত্তি-হুমকি উপেক্ষা করে বিধবা কানন বালা তার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। সেই রাগে কানন বালাকে মারধর করে মাথার চুল কেটে দিয়ে উল্লাস করেছে বিরোধিতাকারীরা।
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রতœপুর গ্রামে গত বুধবার ঘটেছে বর্বর এঘটনাটি। নির্যাতনের খবর পেয়ে থানা পুলিশ ওইদিন দুপুরেই বিধবা কানন বালাকে উদ্ধার করেছে ও গ্রেপ্তার করেছে ঘটনার সঙ্গে জড়িত উত্তম চৌধুরীকে।
আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসেন জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর বৃদ্ধ কানন বালা দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন এবং ছেলেমেয়ে নিয়ে স্বামীর ভিটায় থাকতেন। দেড় বছর আগে তার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়ে বীথি রানীকে মাদারীপুর সদর থানার পূর্ব রাজদী গ্রামের ননী গোপাল দাসের ছেলে মিন্টু দাসের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। বীথির স্বাভাবিক জ্ঞানবুদ্ধি না থাকায় মেয়ে ও তার জামাতাকে কানন তাদের নিজের বাড়িতে রাখেন। কয়েক দিন আগে কানন বালা তার স্বামীর সম্পত্তিতে মেয়ে-জামাতার জন্য বসতঘর নির্মাণ করতে নিজেদের গাছ কাটেন। ওই সময় মেয়ে জামাতাকে ঘরজামাই না রাখতে ও গাছ কাটতে বাধা দেন একই বাড়ির প্রভাবশালীরা। এমনকি তারা বীথি ও তার স্বামীকে ওই বাড়িতে থাকতে দেবে না বলেও হুমকি দিতেন।
ওসি মো. আফজাল হোসেন জানান, বাড়ির লোকজনের বিরোধিতার পরও মেয়ে ও তার জামাতাকে বাড়িতে রাখায় প্রতিপক্ষের লোকজনে ক্ষিপ্ত হয়। একপর্যায়ে তারা বুধবার সকালে বিধবার বসতঘরে ঢুকে তার ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে। এ সময় মেয়েজামাতা মিন্টু তার শাশুড়িকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করে আহত করা হয়। হামলাকারীরা বিধবা কানন বালাকে জোরপূর্বক আটকে রেখে তার মাথার চুল কেটে দিয়ে উল্লাস করে। পরবর্তীতে কানন বালার পায়ে লোহার শিকল দিয়ে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ বিধবা কানন বালা চৌধুরীকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নির্যাতনকারী একই বাড়ির মৃত রাজেশ্বর চৌধুরীর ছেলে উত্তম চৌধুরীকে (৪৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ওইদিন বিকালেই আগৈলঝাড়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন