পাবনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভুয়া নাটক সাজিয়ে হয়রানির অভিযোগ করেছেন আটঘড়িয়া সাব রেজিস্ট্রার ইশরাত জাহান। ‘ঘুষের টাকা’সহ ইশরাত জাহানকে গত ১০ জুলাই গ্রেফতার করেছিল দুদক।
ইশরাত জাহানের দাবি, দুদকের সহকারী পরিচালক গোলাম মাওলার উপস্থিতিতে তার ব্যাগে জোর করে ওই টাকা রাখার চেষ্টা হয়েছে। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলেন ওই দিনের ঘটনার সময়।
তবে, ইশরাত জাহানের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে পাবনায় কর্মরত দুদক কর্মকর্তারা দাবি করেন, বিধি মোতাবেক সব কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
কী ঘটেছিল সেদিন
দুদক পাবনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী-পরিচালক গোলাম মওলা জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১০ জুলাই বিকেলে পাবনার আটঘড়িয়া সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে হানা দেয় দুদক পাবনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের একটি দল। আটক করা হয় সাব-রেজিস্ট্রার ইশরাত জাহানকে।
গণমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় দুদক দাবি করে, ইশরাত জাহান বেশকিছু দলিল নিবন্ধনের জন্য দলিল লেখক গোলাম মোস্তফার কাছ থেকে চৌদ্দ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন, যা তার ব্যাগে পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় ওই রাতে আটঘরিয়া থানায় মামলা দায়েরের পর গ্রেফতার দেখানো হয় ইশরাত জাহানকে। পরদিন, আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হন তিনি।
সম্প্রতি এ ঘটনায় ইশরাত জাহানকে অভিযুক্ত করে চার্জশিটও দাখিল করেছেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা।
ভিন্ন ঘটনা শোনালেন ইশরাত জাহান
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে দুদকের বিরুদ্ধে সাজানো নাটকের অভিযোগ আনলেন ইশরাত জাহান।
তার দাবি, গত ১০ জুলাই বিকেলে আটঘরিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক গোলাম মোস্তফা আমার খাস কামরায় আসেন। তিনি বেশ কিছু টাকা বের করে আমাকে বলেন, ম্যাডাম এটা রাখেন।
আমি নিতে না চাইলে জোরপূর্বক আমার ব্যাগে টাকা রাখার চেষ্টা করেন। আমার চিৎকারে অফিস সহকারী তৌফিক ছুটে আসে।
এ সময় দুদকের সহকারী পরিচালক গোলাম মাওলা আমার কক্ষে প্রবেশ করে তৌফিককে বের করে দেন। পরে, আমার ব্যাগ নিয়ে তাতে টাকা ঢুকিয়ে, আমাকে আটক করে নিয়ে যান তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা যা বলছেন
প্রত্যক্ষদর্শী অফিস সহকারী হাসান তৌফিক জানান, চিৎকার শুনে আমি স্যারের খাস কামরায় গিয়ে দেখি, দলিল লেখক গোলাম মোস্তফা আমাদের স্যারের (ইশরাত জাহান) ব্যাগ ধরে টানাটানি করছে। এ সময় হঠাৎ দুদকের একজন লোক আসেন এবং আমাকে বের করে দেন। পরে আরো লোকজন এসে ম্যাডামকে আটক করে নিয়ে যায়।
অন্য দলিল লেখকদের বক্তব্য
আটঘরিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অন্য দলিল লেখকদের দাবী, ঘটনার পর কার্যালয়ে ডেকে ইশরাত জাহানের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক লিখিত অভিযোগ নিয়ে তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠাতে বাধ্য করে দুদক। এর প্রতিবাদ জানিয়ে, এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বরাবর লিখিত পত্রও দিয়েছেন তারা।
আটঘরিয়া দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আফজাল হোসেন বলেন, ১৯৮৪ সাল থেকে আমি দলিল লেখার কাজের সাথে জড়িত থাকলেও এমন ঘটনা এই প্রথম দেখলাম।
দলিল লেখক গোলাম মোস্তফা সাব-রেজিস্ট্রার স্যারকে (ইশরাত জাহান) দিয়ে অনৈতিক কাজ করাতে ব্যর্থ হয়ে দুদক কর্মকর্তাদের দিয়ে ফাঁসিয়েছে।
দলিল লেখক সারওয়াউল আলম মুকুল বলেন, এটি একটি সম্পূর্ণ সাজানো নাটক। আমাদের দুদক কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক স্যারের (ইশরাত জাহান) বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।
ক্ষুব্ধ জেলা রেজিস্ট্রার!
বিষয়টি নিয়ে জেলা রেজিস্ট্রার লিখিতভাবে অবহিত করেছেন আইন মন্ত্রণালয়কেও।
পাবনা সদর উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার ইব্রাহীম আলী বলেন, আটঘরিয়া সাব-রেজিষ্ট্রার ইশরাত জাহানকে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে ফাঁসানোর প্রতিবাদ করায় আমাদেরকেও প্রকাশ্য হুমকি দিয়ে হেনস্থা করার চেষ্টা করছেন দুদকের উপ পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক।
গত ১৮ জুলাই এক বেনামী অভিযোগের বরাত দিয়ে আমার সম্পদের বিবরণী চাওয়া হয়েছে। সেখানে কোনো প্রকার অসঙ্গতি না পেয়ে আমার এবং আমার প্রবাসী কন্যার ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার আবেদন করেছে দুদক।
দলিল লেখক মোস্তফা কোথায়?
এ বিষয়ে কথা বলতে শনি ও রোববার অভিযোগকারী দলিল লেখক গোলাম মোস্তফাকে টেলিফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায় নি।
দুদক যা বলছে
তবে, সাজানো নাটকের অভিযোগ আস্বীকার করে দুদক পাবনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী-পরিচালক গোলাম মওলা বলেন, প্রচলিত বিধি মেনেই কাজ করছে দুদক, তদন্তে সত্যতা মেলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এটি সাজানো কোন নাটক নয়। মামলা চলমান বলে এর বিষয়ে বিস্তারিত জানানো সম্ভব নয়।
‘আপনার উপস্থিতিতে ব্যাগে টাকা ঢুকানা হয়েছে কিনা’ জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন, পাবনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, দুদক অত্যন্ত স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কাজ করে থাকে। কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমরা কখনো কোনো অভিযান পরিচালনা করি না।
ইশরাত জাহানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন