এই তো বছর কয়েক আগের কথা। বড় স্বপ্ন দেখতে কেমন যেন ভয় ভয় করতো। পত্রিকায় দেখতাম ‘কোটি টাকার প্রকল্প’। কোটি শব্দটাই তো ছিল বিশাল কিছু। টিভিতে বিভিন্ন উন্নত দেশের যোগাযোগের মাধ্যম দেখতাম আর হা হয়ে থাকতাম। বাংলাদেশে আবার এসব হবে নাকি কোনো দিন!
বছর তিন আগের কথা। থাইল্যান্ড গিয়েছিলাম সরকারি সফরে। ওখানকার মেট্রোরেলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে গ্রাম থেকে শহরে আসা স্বল্পশিক্ষিত কোনো ব্যক্তি হিসেবে মনে হলো। প্রথম দেখছি, প্রথম চড়ছি মেট্রোরেলে। সবকিছুতেই মুগ্ধতা। শুধু মনে মনে একটু বিষন্ন লাগলো... আমাদের যদি থাকতো!
ওসব যদি, কিন্তু আর হয়তোর দিন ফুরিয়েছে। পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হওয়ার পর আমাদের হৃদয়ের বিশালতা বেড়েছে কয়েক গুণ। এবার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে মেট্রোরেল। বসেছে স্প্যান, পিয়ার আর দৃশ্যমান হয়েছে বহু পিলার।
ওসবে হয়তো আমাদের মন নাও ভরতে পারে। আমরা শুনতে চাই কবে টিকেট কেটে চড়তে পারবো মেট্রোরেলে। সে দিন খুব বেশি দূরে নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিপ্রায় অনুযায়ী আগামী বছরের শেষভাগে (নির্ধারিত সময়ের আগেই) মেট্রোরেল চালু হবার কথা।
সবার মনেই একটা কুয়াশা আছে, মাটির ওপর নাকি পাতালে চলবে মেট্রোরেল? জবাব দুটোই। কোনো লাইনে রাস্তার উপরে, কোনো লাইনে মাটির নিচে চলবে আমাদের স্বপ্নের মেট্রোরেল। তবে, আগামী বছরে চালু হতে যাওয়া লাইনটি থাকছে মাথার উপরে।
সেদিন দু’চোখ ভরে দেখেছি মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ।
প্রকল্পের safety first মোটোতে এখন পর্যন্ত নির্মাণ কাজে প্রাণ হারান নি কোনো শ্রমিক। উন্নত বিশ্বের মতো আমরাও ভাবছি সমানতালে ভাবছি শ্রমিক সুরক্ষা নিয়ে।
দিয়াবাড়ির অংশে নির্মাণ কাজ দেখলে আপনার মন ছুঁয়ে যাবে নিশ্চিত। তবে, আমার মন ছুঁয়ে গেছে আরও একটা বিষয়। দেশের পতাকার সাথে মিলিয়ে মেট্রোরেলের রং হবে লাল-সবুজের মিশেল।
একটা বিষয় আমারও অষ্পষ্টতা ছিল। রাস্তার স্পেস কমে যাবে না তো? দূর হয়েছে দুশ্চিন্তা। রাস্তার মেডিয়ান কিংবা ন্যুনতম জায়গা নিয়ে গড়ে উঠছে মেট্রোরেলের ট্র্যাক। উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে কত ঘন্টা লাগবে জানেন স্বপ্নের মেট্রোরেলে? শুধু জানিয়ে রাখি, হিসেবটা হবে মিনিটে।
হিসেব তো আরেকটা বাকি রয়ে গেল। এটাও কত কোটি টাকার প্রকল্প? এখানেও বদলাবে একক। জিজ্ঞেস করুন, কত হাজার কোটি। উত্তর: ২২ হাজার কোটির কম না।
আজ সকালেই অফিসের পথে চোখে পড়লো নতুন কর্মযজ্ঞ। মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ফার্মগেটের আনোয়ারা পার্ককে। চোখের নিমেষে এগিয়ে যাচ্ছে সব।
যানজটের ভোগান্তি কমাবে মেট্রোরেল। শুধু কি যানজটই কমাবে? কিছু কি বাড়াবে না?
বাড়াবে তো বটেই। লাল-সবুজে রাঙ্গা বাংলা মায়ের সন্তানদের বুকের সাহস আর বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর আরও এক আত্মবিশ্বাস।
তিন বছর আগে ব্যাংককের মেট্রোরেলে বসা আমাকেই এখন ফিরে গিয়ে কানে কানে বলতে ইচ্ছে করছে, ‘এখন আমরাও...’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন