বৈচিত্রময় এই পৃথিবীতে বিচিত্র কর্মে জীবিকা নির্বাহ করে চলেছে মানুষ। ভূ-মণ্ডল থেকে বিশ্ব ব্রম্মাণ্ডে বিচরণ করছে মানুষ। বেঁচে থাকার তাগিদে করছে নানা ধরনের কাজ। কিন্তু পিঁপড়ার ডিম বিক্রি করে অনেকের জীবিকা চলতে পারে এমন প্রমাণ মিলেছে রাজশাহীর তানোরে।
তানোর উপজেলার বাধাইড় গ্রামের মজিদ কর্মকার জীবিকা নির্বাহ করেন লালশো বা লাল পিঁপড়ার ডিম বিক্রি করে।
শুক্রবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলার পাঁচন্দর গ্রামের আওয়ালের মোড়ে এক আম বাগানের পাশে দেখা হয় মজিদ কর্মকারের সঙ্গে। তার হাতে লম্বা একটা বাঁশ ও হাসুয়া। প্রতিটি আম গাছ তন্নতন্ন করে কিছু খুঁজছিলেন তিনি। কিছুক্ষণ পরেই কয়েক থোকা পিঁপড়ার বাসা ভেঙ্গে নিয়ে আম গাছ থেকে নিচে নামলেন।
এরপর ফোটানো ছাতার মধ্যে ঝেড়ে ঝেড়ে রাখলেন সেগুলো। একটু পরেই কলা পাতায় ঢেলে কিছু লতা-পাতা দিয়ে চাপা দিলেন। পিঁপড়াগুলো লতা-পাতায় উঠে পড়া মাত্র ডিমগুলো আলাদা করে একটি মাটির হাড়িতে সংরক্ষণ করলেন।
আব্দুল মজিদের কাছে জানা যায়, তিনি লালশো বা লাল পিঁপড়ার বাসা খোঁজ করছেন। সব পিঁপড়ার বাসা হলে চলবে না। ডোল পিঁপড়ার বাসা দরকার। যেখানে মিলবে প্রচুর পরিমাণে সাদা রঙের ডিম যা তার জীবিকা নির্বাহের হাতিয়ার। মজিদ কর্মকার জানায় রইনা, মেহগনি, আম, লিচুসহ দেশীয় গাছগুলোতেই সাধারণত ডোল পিঁপড়ার বাসা পাওয়া যায়। পিঁপড়ারা লালা ব্যবহার করে গাছের ডালের আগার দিকে চার-পাঁচটা পাতা জোড়া দিয়ে শক্ত বাসা তৈরি করে। পরে সেখানে ডিম পাড়ে।
পিঁপড়ার একটি বড় বাসা থেকে ডিম পাওয়া যায় এক থেকে দেড়শ গ্রাম। আশ্বিন-কার্তিক মাসে এই ডিমের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তবে বেশি ডিম পাওয়া যায় শীত শেষে ফাল্গুন মাসে। কিন্তু সেই সময় ডিমের চাহিদা তেমন একটা থাকে না। এই ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজটি খুব সতর্কের সাথে করতে হয়। কারণ ভাঙ্গা ডিম বিক্রি হয় না।
মজিদ আরো জানান, মাছের খাদ্য হিসেবে বাজারে লাল পিঁপড়ার ডিমের চাহিদা ব্যাপক। প্রতি কেজি ডিম ৭০০টাকা থেকে শুরু করে ১২০০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়। রাজশাহীর আরডিএ মার্কেটে এক দোকানীর কাছে পাইকারী দামে বিক্রি করেন তিনি। এছাড়াও এলাকার সৌখিন মাছ শিকারীরা তার কাছ থেকে এই ডিম ক্রয় করে থাকেন। বরশিতে আটা-ময়দা-পাউরুটি, একানির মতো আদারের সঙ্গে লালশো বা লাল পিঁপড়ার ডিম দেয়া হলে বড় মাছেরা সহজে টোপ গেলে।
যারা সৌখিন মাছ শিকারি বা টিকিট কিনে মাছ শিকার করে তাদের কাছে টোপ হিসেবে জনপ্রিয় এই পিঁপড়ার ডিম। পানির নির্দিষ্ট স্থানে আদার ফেলে মাছ ডেকে আনার জন্য এই ডিমের চাহিদা রয়েছে জেলেদের কাছেও। মজিদ কর্মকার আরো জানান, এই কাজে কোনো পুঁজি লাগে না। এজন্য তিনি জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসাবে বেঁছে নিয়েছেন এটিকে। সারাদিনে এক থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করতে পারেন তিনি। আর তাতেই স্ত্রী ও পাঁচ ছেলে- নিয়ে চলে ৭ সদস্যের সংসার।
এ কর্মে আসা কিভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে মজিদ কর্মকার জানান, প্রায় ১৫ বছর আগে রাজশাহী শহরে গিয়ে রিকশা চালানোর কাজ করতেন তিনি। দুই বছর সেখানে রিকশা চালানোর পরে শহরের আরডিএ মার্কেটের পাশে এক দোকানে পিঁপড়ার ডিম বিক্রি করতে দেখেন। কৌতুহলবশত ওই বিক্রেতার কাছে গিয়ে মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে থাকতেন। এক পর্যায়ে তিনি রিকশা চালানো বাদ দিয়ে নিজের গ্রামে এসে পিঁপড়ার ডিম সংরক্ষণ শুরু করেন। বর্তমানে পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন এই কাজকে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন