সরকারের অধিগ্রহণকৃত বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রায় ৭৬ একর জমি ব্যক্তি মালিকানায় একটি বিশেষ স্বার্থান্বেষী চক্রের হাতে ছেড়ে দিয়েছে ঢাকার জেলা প্রশাসন। রাজধানীর হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকার বিশাল আয়তনের এই জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল বিমানবন্দর সম্প্রসারণের লক্ষ্যে। বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচ) বা সিভিল এভিয়েশন অথরিটির মালিকানাধীন এই জমির মূল্য ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু সিভিল এভিয়েশনের মতামতের তোয়াক্কা না করে ঢাকা জেলা প্রশাসন কোটি কোটি টাকা ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে একক সিদ্ধান্তে এই জমি ছেড়ে দিয়েছে, যা আইনানুযায়ী জেলা প্রশাসন পারে না। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে এসব জমি স্বার্থান্বেষী চক্রের হাতে ছেড়ে দেয়ার কারণে বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ কার্যক্রমে এখন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিভিল এভিয়েশনের আপত্তি উপেক্ষা করে ঢাকার জেলা প্রশাসন হঠকারী এ সিদ্ধান্ত নেয় ২০১৪ সালে। একই বছর তা গেজেট আকারে প্রকাশের নির্দেশনা দেয়া হয়। ২০১৫ সালে এটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেআইনি ও অবৈধ এ সিদ্ধান্ত নেন। তাদের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দফায় দফায় চিঠিও দিয়েছে সিভিল এভিয়েশন। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আপিলও করেছিল বেবিচ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সিদ্ধান্ত বাতিল করেনি জেলা প্রশাসন। এতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানা গেছে।
ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও বেবিচ কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অনুকূলে অধিগ্রহণকৃত ১৮৫/৬২-৬৩ নং এলএ কেসের সরকারি ৭৫ দশমিক ৭৩৭৯ একর জমি অবমুক্ত করা হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই বেআইনিভাবে কোটি কোটি টাকা ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে ২০১৪ সালের ১৮ মে এক সভায় এ অবমুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যদিও এর বিরুদ্ধে আগেই আপত্তি জানিয়েছিল সিভিল এভিয়েশন অথরিটি। কিন্তু জেলা প্রশাসন সেই আপত্তিকে কোনো তোয়াক্কাই করেনি। এর জন্য তৎকালীন ঢাকা জেলা প্রশাসক শেখ ইউসুফ হারুন (বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, এপিডি) ও তখনকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন এই অবৈধ কর্মকা-ে সরাসরি দায়ী বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন বর্তমানে সাতক্ষীরার ডিসি পদে আছেন।
অভিযোগ আছে, ঢাকার জেলা প্রশাসক পদে থাকাকালে শেখ ইউসুফ হারুন অনৈক অনিয়ম-দুর্নীতি ও বেপরোয়া কর্মকা- চালিয়েছেন। তিনি কাউকে পাত্তা দিতেন না। নিজেকে আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে প্রচার করে থাকেন শেখ ইউসুফ হারুন। ঢাকা জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে পদায়নের আগে গোপালগঞ্জের ডিসি ছিলেন তিনি। গোপালগঞ্জের ডিসি থাকাকালীনই স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগসাজশে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। ঢাকায় আসার পর সেই মাত্রা আরও বেড়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক আছে এমন দোহাই দিয়ে ঢাকার ডিসি থাকাকালীন ক্ষমতার ব্যাপক অপব্যবহার করেন ইউসুফ হারুন। যার অন্যতম উদাহরণ- সিভিল এভিয়েশনের আপত্তি উপেক্ষা এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই সম্পূর্ণ অবৈধভাবে সিভিল এভিয়েশনের ৫ হাজার কোটি টাকার প্রায় ৭৬ একর সম্পত্তি ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেয়া। এ ক্ষেত্রে ডিসি হারুনকে সহযোগিতা করেন এডিশনাল ডিসি (এলএ) ইফতেখার হোসেন। এর মাধ্যমে তারা বেশ কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শুধু এটিই নয়, আরও অনেক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে শেখ ইউসুফ হারুনের বিরুদ্ধে।
যে ৭৬ একর জমি ছেড়ে দেয়া হলো
ঢাকা জেলা ও ঢাকা মহানগরীর মিরপুর, ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন সেনপাড়া পর্বতা, ইব্রাহীমপুর ও কাফরুল মৌজার ৮২.২৯২৯ একর জমি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের অনুকূলে ১৮৫/৬২-৬৩ নং কেসে অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। অস্থায়ী হুকুমদখল আইন ১৯৪৮ এর আওতায় ২৮/০৬/১৯৬৩ তারিখে ওই জমি হুকুমদখল করে ঢাকা জেলা প্রশাসন। পরবর্তীতে ২৫/০৭/১৯৬৩ তারিখে ওই জমি সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের অনুকূলে হস্তান্তর করা হয়। দখলকৃত জমির মধ্যে ১৮৬/৬২-৬৩, ৪৩/৬৪-৬৫ ও ৪৩/৬৫-৬৬ কেসের মাধ্যমে ৩.৩৩ একর, ১.১০ একর ও ২.১২ একরসহ মোট ৬.৫৫৫ একর জমি স্থায়ীভাবে অধিগ্রহণ করা হয়। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে ৮২.২৯২৯ একর জমির অবশিষ্ট ৭৫.৭৩৭৯ একর স্থায়ী অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে অনুরোধ জানায়। ৭৫.৭৩৭৯ একর জমির মধ্যে বেশির ভাগ জমিই সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের দখলে। কিছু জমি প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে দখল করে রাখে। প্রশাসনের দায়িত্ব হলো দখলকারীদের উচ্ছেদ করে সরকারি জমি সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে হয়েছে সম্পূর্ণ উল্টো। তৎকালীন ঢাকা জেলা প্রশাসক ইউসুফ হারুন ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মোহাম্মাদ ইফতেখার হোসেন বেআইনিভাবে ওই জমি ব্যক্তির অনুকূলে অবমুক্ত করার জন্য তৎপরতা চালান। যা বন্ধে ২০১৪ সালের ১৫ মে ঢাকা জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি পত্র প্রেরণ করে সিভিল এভিয়েশন। কিন্তু ওই চিঠিকে পাত্তা দেয়নি ঢাকা জেলা প্রশাসন। ১৮/০৫/২০১৪ তারিখে তড়িঘড়ি করে এ সংক্রান্ত একটি সভা আহ্বান করে জেলা প্রশাসন। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) ইফতেখার হোসেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা (৩ ও ৪) প্রভাংশু সোম মহান, অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা পরমানন্দ পাল, ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কানুনগো মো. আব্দুর রহমান ও সিভিল এভিয়েশন সদর দফতরের ড্রাফটসম্যান মো. কবির হোসেন। এছাড়া সভায় সিভিল এভিয়েশনের জুনিয়র পর্যায়ের দু’জন কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। এরা হলেন সহকারী পরিচালক (প্রশাসন-৪) এএসএম মোস্তাফিজুর রহমান এবং সহকারী পরিচালক (এটিএম) একেএম ফায়জুল হক। সভায় আলোচনা হয় ১৮৫/৬২-৬৩ নং এলএ কেসের মাধ্যমে সাবেক তেজগাঁও হালে মিরপুর ও ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন সেনপাড়া পর্বতা, ইব্রাহীমপুর ও কাফরুল মৌজায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের অনুকূলে ৭৫.৭৩৭৯ একর হুকুমদখল সম্পত্তির জটিলতা নিরসন নিয়ে। কিন্তু সভায় সিভিল এভিয়েশনের জুনিয়র এই দুই কর্মকর্তাকে উপস্থিত রাখা হলেও তাদের কোনও বক্তব্যকে আমলে নেয়া হয়নি। তৎকালীন জেলা প্রশাসন কোন রকমের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে স্বেচ্ছাচারী কায়দায় ওই সভায় সম্পূর্ণ অবৈধভাবে অতি মূল্যবান এই জমি বেসকারি মালিকানায় একটি বিশেষ চক্রের হাতে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এই বিতর্কিত ও অবৈধ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় ডিসি-এডিসির পক্ষ থেকে ডিসি কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা সভায় কিছু খোঁড়া যুক্তি তুলে ধরেন। বলা হয়, সরকারের অধিগ্রহণ করা এই জমির কিছুটা বেদখল হয়ে আছে। তাছাড়া জমির পূর্ব মালিকদের ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ এবং পরিশোধ জটিল প্রক্রিয়া। এতে মামলা মোকদ্দমা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এ জমি বেসরকারি মালিকদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে বলে যুক্তি দেখানো হয়।
বস্তুত, সরকারি জমি ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেয়ার ক্ষেত্রে এগুলো কোনও যুক্তিই নয়। তৎকালীন ডিসি-এডিসি মোটা অংকের ঘুষ জায়েজ করার জন্যই এমন খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন। তাছাড়া প্রত্যাশী সংস্থার আবেদন উপেক্ষা ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ব্যতিরেকে অধিগ্রহণ করা জমি ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেয়ার আইনতঃ কোনও ক্ষমতাই ডিসি-এডিসির নেই।
সিভিল এভিয়েশনের প্রতিনিধির দাবি
ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার এই বেআইনি যুক্তির বিরুদ্ধে সভায় আপত্তি জানান সিভিল এভিয়েশনের প্রতিনিধি এএসএম মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি সভায় জানান, উল্লেখিত জমি স্থায়ীভাবে হস্তান্তরের জন্য গত ২৯ মার্চ, ২০১৪ তারিখে ঢাকার জেলা প্রশাসককে পত্র পাঠানো হয়েছে। যার স্মারক নং সিএএবি/ভূঃমঃ/১০৫/৭৬/১৪-৩০৮২। এ ছাড়া গত ১৫ মে, ২০১৪ তারিখে (সিএএবি/ভূঃমঃ/ ১০৫/৭৬/১৪/১৪১৪ নং স্মারক) পত্র দেয়া হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিমান বাংলাদেশের পাশাপাশি ১৫টি বেসরকারি বিমান সংস্থা, কার্গো বিমান, হেলিকপ্টার সার্ভিস, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, প্রশিক্ষণ বিমান ও বিদেশি কয়েকটি সংস্থার বিমানসহ ৩৫টি বিমান সংস্থা বাংলাদেশ হতে তাদের ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছে। ৫১টি দেশের সাথে বাংলাদেশের বিমান চলাচল সংক্রান্ত চুক্তি রয়েছে। প্রতিটি বিমান সংস্থার বহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে উড্ডয়নের সুবিধা প্রদান করা সম্ভব না হওয়ায় দেশের অন্যান্য বিমানবন্দর হতে পরিচালনা করা হচ্ছে। ফলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিদ্যমান সকল প্রকার অবকাঠামোর সম্প্রসারণ, পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও আধুনিকায়ন অত্যবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। সুতরাং এলএ কেস নং ১৮৫/৬২-৬৩ এর মাধ্যমে হুকুম দখলকৃত জমি সিএএবির (সিভিল এভিয়েশন) বর্তমান প্রয়োজনে স্থায়ীভাবে হস্তান্তর করা জরুরি।
গায়ের জোরে সরকারি সম্পত্তি ছেড়ে দেয় জেলা প্রশাসন
সিভিল এভিয়েশনের আপত্তিকে গুরুত্ব দেয়নি জেলা প্রশাসন। খোড়া যুক্তি দেখিয়ে এক প্রকার গায়ের জোরেই শেষ পর্যন্ত বিশাল ওই সরকারি সম্পত্তি ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা জেলা প্রশাসন। ওই সভার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে ২৮ মে, ২০১৪ তারিখে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) ইফতেখার হোসেন স্বাক্ষরিত রেজুলেশনে বলা হয়েছে, ১৯৭৩ সালের পর হুকুমদখলের পর কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করেনি বেবিচ কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ ৪০ বছর পর অস্থায়ী হুকুমদখল আইন ১৯৪৮-এর ৫(১ক) ও ৫(৩) ধারা জারি এবং এ ক্ষেত্রে জমির মূল্য নির্ধারণে আইনগত জটিলতার সৃষ্টি হবে। এ বিবেচনায় ১৮৫/৬২-৬৩ নং এলএ কেসটি বতিল করে বিবেচ্য ৭৫.৭৩৭৯ একর ভূমি হুকুম দখলমুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে আরও বলা হয়, প্রত্যাশী সংস্থার প্রয়োজনে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল অধ্যাদেশ ১৯৮২ এর আওতায় অধিগ্রহণের জন্য নতুনভাবে প্রস্তাব কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটিতে দাখিল করতে হবে। এ বিষয়ে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ম্যানুয়াল ১৯৯৭ এর ২০.১ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত নির্দেশনার সহায়তা গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। যার স্মারক নং ০৫.৪১.২৬০০.০৩৮.১৪.০৩৮.১২-৮৫৪/৩(৫)।
এর পর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ওই বছরের ৩০ অক্টোবর গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয় সম্পত্তি ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্তটি। যা সম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনি। কারণ, সরকারি জমি ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেয়ার কোনো ক্ষমতা দেয়া হয়নি জেলা প্রশাসনকে। বরং সরকারি প্রতিষ্ঠানের কোনো জমি বেদখল হলেও তা উদ্ধার করার দায়িত্ব তাদের। কিন্তু সরকারের প্রতিনিধি হয়ে জেলা প্রশাসক ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের বিপক্ষে সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষসহ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ও। বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে পরে জেলা প্রশাসকের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ।
সিভিল এভিয়েশন কর্তকর্তারা বলছেন, হুকুমদখল আইন-১৯৪৮ এর আওতায় অস্থায়ী অধিগ্রহণ করা সম্পত্তি কোনোভাবে অবমুক্তির এখতিয়ার নেই ডিসির। সিভিল এভিয়েশনের অনুরোধ ও তাদের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে ৫ হাজার কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি ব্যক্তির অনুকূলে প্রদানের আদেশের পেছনে মূলত বড় অঙ্কের ঘুষ, দুর্নীতি হয়েছে। এ ধরনের অবমুক্তির সুযোগ আইনের কোথাও নেই। বিষয়টি জেলা প্রশাসনেরও অজানা নয়। কিন্তু অর্থের লোভে অনৈতিক ও বেআইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন সাবেক ঢাকা জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ)।
সিভিল এভিয়েশনের পদক্ষেপ
ঢাকা জেলা প্রশাসক অবৈধ সিদ্ধান্ত নেয়ার পর সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানায় সিভিল এভিয়েশন। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ২০১৪ সালের ২৪ আগস্ট চিঠি দেয় বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, ঢাকা জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের। সিভিল এভিয়েশনের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এয়ার কমডোর এম শফিকুল আলম ওই পত্র পাঠান। যার স্মারক নং সিএএবি/ভূঃসঃ/১০৫/৭৬/১৪/১৫৮৩।
চিঠিতে তিনি বলেন, বর্ণিত হুকুম দখলকৃত জমি বাংলাদেশের প্রবেশদ্বার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভবিষ্যৎ মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বেবিচ কর্তৃপক্ষের অনুকূলে স্থায়ীভাবে হস্তান্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকা জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু সেটি না করে জেলা প্রশাসক উক্ত অস্থায়ী হুকুম দখলকৃত জমি অবমুক্তকরণ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করার জন্য উপ-নিয়ন্ত্রক, বাংলাদেশ ফরম ও প্রকাশনা, তেজগাঁও, ঢাকাকে অনুরোধ করেছেন। যার সূত্র: জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ঢাকার ভূমি অধিগ্রহণ অনুবিভাগ, শাখা-৭ এর স্মারক নং ০৫.৪১.২৬০০.০৩৮.০১৪.০৩৮.১২-৯২৮/৭, তারিখ ১৮/০৬/২০১৪ এর সিদ্ধান্ত।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বিশ^ব্যাপী দ্রুত গতিতে বিমান চলাচল সংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বাংলাদেশের সকল বিমানবন্দর হতে যাতায়াতকারী বাণিজ্যিক, কার্গো, জেনারেল এভিয়েশন ও প্রশিক্ষণ ফ্লাইটের চলাচল বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাশাপাশি ১৫টি বেসরকারি বিমান সংস্থা কার্গো বিমান, হেলিকপ্টার সার্ভিস, মেডিকেল সার্ভিস ও প্রশিক্ষণ বিমান পরিচালনার কাজে নিয়োজিত আছে। বাংলাদেশ থেকে বিশে^র ৫১টি দেশের সঙ্গে বিমান চলাচল সংক্রান্ত ৩৫টি বিমান সংস্থার চুক্তি রয়েছে। কিন্তু জায়গা সল্পতার কারণে অনেক সংস্থার উড়োজাহাজকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে উড্ডয়নের সুবিধা প্রদান সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ ফ্লাইং ক্লাব ও গ্যালাক্সি ফ্লাইং একাডেমির প্রশিক্ষণ বিমানগুলোকে যথাক্রমে রাজশাহী বিমানবন্দর ও সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে ফ্লাইট পরিচালনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরও বেশ কিছু ফ্লাইং একাডেমি স্থাপনের আবেদন অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে, যাদেরকে বিভিন্ন বিমানবন্দর হতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু মেডিকেল সার্ভিসসহ বেশ কিছু জেনারেল এভিয়েশন পরিচালনকারী সংস্থাকে ঢাকা হতেই ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ দেয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ক্রমশ বাড়লেও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে তাদেরকে ফ্লাইট পরিচালনা করতে দেয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিঠিতে আরও বলা হয়, উড়োজাহাজ, যাত্রী ও কার্গো এভিয়েশন বৃদ্ধির কারণে হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিদ্যমান সকল প্রকার অবকাঠামো সম্প্রসারণ, পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও আধুনিকায়ন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়ায় একটি নতুন মাস্টার প্ল্যান করা হয়েছে। যার আওতায় এই বিমানবন্দরে ২য় রানওয়ে, ৩য় আন্তর্জাতিক টার্মিনাল, নতুন একটি ডমেস্টিক টার্মিনাল, নতুন কার্গো ভবন, ৩০টি বোর্ডিংব্রিজ স্থাপন, প্যাসেঞ্জার ও কার্গো এপ্রোনের সম্প্রসারণ ইত্যাদি নির্মাণের মাস্টার প্ল্যান গ্রহণ করা হয়েছে। এ মাস্টার প্ল্যানের আওতায় সব ধরনের জেনারেল এভিয়েশন পরিচালনাকারী সংস্থাসমূহকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে স্থানাস্তর করে তেজগাঁও বিমানবন্দর হতে ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ দিতে হবে। সেক্ষেত্রে উক্ত সংস্থাসমূহের এভিয়েশন কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ এবং তাদের উড়োজাহাজের উড্ডয়ন, অবতরণ নিরাপদ করতে তেজগাঁও বিমানবন্দরের সিএএবি’র প্রচুর জায়গার দরকার।
জেলা প্রশাসনের অভিযোগের জবাবে সিভিল এভিয়েশন (সিএএবি)-এর চেয়ারম্যান চিঠিতে আরও বলেছেন, হুকুম দখলকৃত ভূমির ক্ষতিগ্রস্ত মালিকদের মধ্যে কিছু সংখ্যক মালিক ফসলের পৌণঃপনিক ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করেছেন। সর্বশেষ ৮/০৮/১৯৭২ সালে পৌণঃপনিক ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদেরকে এর পর ১৩/০৪/১৯৭৩ তারিখে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, প্রত্যাশী সংস্থা উক্ত সম্পত্তি আংশিক দখলে থেকে তফসিলভূক্ত সম্পূর্ণ সম্পত্তি তাদের দখলে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া অস্থায়ীভাবে হুকুম দখলকৃত ভূমি স্থায়ীভাবে হুকুমদখলের জন্য প্রত্যাশী সংস্থা গত ২৯/০৪/২০১৪ তারিখে সিএএবি/ভূঃসঃ/১০৫/৭৬/১৪-৩০৮২ নং এবং ১৫/০৫/২০১৪ তারিখে সিএএবি/ভূঃসঃ/১০৫/৭৬/ ১৪-১৪১৪ নং স্মারকে জেলা প্রশাসক, ঢাকা বরাবরে পত্র প্রেরণ করে। অস্থায়ীভাবে হুকুম দখলকৃত ভূমি অবমুক্তিকরণ কার্যক্রম স্থগিত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রত্যাশী সংস্থার চেয়ারম্যান ৯/০৬/২০১৪ তারিখে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে একটি পত্র প্রেরণ করেন। উল্লেখিত ঘটনায় প্রমাণিত হয় যে, প্রত্যাশী সংস্থা তফসিলভূক্ত সম্পত্তি স্থায়ী হুকুম দখলকরণের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, এলএ কর্তৃক গৃহীত অবমুক্তি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত ও অবমুক্তির আদেশের পূর্বেই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। এতে আরও বলা হয়, উল্লেখিত ভূমি অবমুক্তির আদেশের বিরুদ্ধে বিমান মন্ত্রণালয় গত ৮/০৭/২০১৪ তারিখে প্রত্যাশী সংস্থাকে আপিল দায়েরের নির্দেশনা প্রদান করে। যার পত্র নং বিপম/সিএ-২/এম-৪৬/ (সম্পত্তি)/২০০৩-২৯৯/১(২)। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এলএ-এর সভাপতিত্বে ১৮/০৫/২০১৪ তারিখে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘কেসটি হুকুমদখল পর্যায়ে রয়ে গেছে। ১৯৭৩ এর পর হুকুমদখল সংক্রান্তেও কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি,’ যা অবান্তর। বক্তব্যটি ‘অবিবেচনা প্রসূত’। যা যুক্তিসংগত নয়। কারণ, বেবিচ কর্তৃপক্ষের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গৃহীত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আইনগত জটিলতা নিরসণের পরিবর্তে এতে জটিলতা আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, সর্বোপরি সিভিল এভিয়েশনের মতো জাতীয় ও জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে অস্থায়ীভাবে হুকুম দখলকৃত ভূমি অবমুক্তির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ), ঢাকা যে বিষয়গুলোর উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন, তা সর্বাবস্থায় ইক্যুইটি/ন্যাচারাল জাস্টিস ও ১৯৪৮ সালের সম্পত্তি জরুরি হুকুমদখল আইনের পরিপন্থী। এ ছাড়াও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নীতির অনুসরণ বা গুরুত্বারোপ করা হয়নি।
সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ বলছে, আধুনিক বিশে^র সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও যুগপোযোগী করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভবিষ্যৎ মানোন্নয়নের লক্ষ্যে এলএ কেস নং ১৮৫/৬২-৬৩ এর মাধ্যমে অস্থায়ীভাবে হুকুম দখলকৃত ৭৫.৭৩৭৯ একর জমি প্রত্যাশী সংস্থা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের অনুকূলে জনস্বার্থে স্থায়ীভাবে হুকুম দখলকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ গৃহীত অবমুক্তিকরণ সিদ্ধান্ত ও আদেশ বাতিল করণের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহেণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।
তবে সিভিল এভিয়েশনের এ আপিলকেও পাত্তা দেয়নি জেলা প্রশাসন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ পন্থায় শেষ পর্যন্ত একই বছরের ৩০ অক্টোবর ওই ভূমি অবমুক্তির গেজেট প্রকাশ করা হয়। যা সরকারি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি মুদ্রণ শেষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (এলএ) নিকট প্রেরণ করা হয় চালানের মাধ্যমে। আর জেলা প্রশাসন তা ৭ এপ্রিল, ২০১৫ তারিখে গ্রহণ করে। ফলে চূড়ান্তভাবে প্রায় ৭৬ একর সম্পত্তির মালিকানা হারায় বেবিচ কর্তৃপক্ষ। বন্ধ হয়ে যায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ তথা মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের উদ্যোগ।
উল্লেখ্য, শেখ ইউসুফ হারুন ছাত্রজীবনে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে থাকাকালীন ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন। চাকরি জীবনের শুরুতেও বিএনপির লোক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পদোন্নতি পেতে রাতারাতি রূপ বদলান। এতে লাভবানও হন তিনি। জানা গেছে, ওয়ান ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে নিয়োগ পাওয়া এম আবদুল আজিজ এক সময় হবিগঞ্জের ডিসি থাকাকালে তার স্টাফ অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন শেখ ইউসুফ হারুন। ওই সময় আবদুল আজিজের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হন ইউসুফ হারুন। চাকরি জীবনে আবদুল আজিজও বিএনপি সমর্থক কর্মকর্তা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। এদিকে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গোপালগঞ্জের ডিসি পদ শূন্য হলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আবদুল আজিজ এ পদে পদায়নের জন্য শেখ ইউসুফ হারুনের নাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তাব করেন। এভাবেই ইউসুফ হারুন গায়ে আওয়ামী লীগের সিল লাগাতে সক্ষম হন। সেই থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। অথচ, এর আগে চাকরিজীবনে, এমনকি ছাত্রজীবনেও কখনো আওয়ামী লীগ সমর্থক বলে পরিচিত ছিলেন না ইউসুফ হারুন।
জানা গেছে, শেখ ইউসুফ হারুনের ঢাকার ডিসি হওয়ার কাহিনী আরও অদ্ভূত। তিনি গোপালগঞ্জের ডিসি হওয়ার পর সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতাদেরকে নানান অবৈধ সুবিধা দেন। যে কারণে তারা ইউসুফ হারুনের ওপর বেজায় খুশি ছিল। এদের মাধ্যমেই তিনি পরে এক পর্যায়ে ঢাকায় উঠে আসার জন্য তদবির করেন। তাদের সুপারিশেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জের ডিসিকে ঢাকায় যেকোনো একটি পোস্টিং দিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামানকে বলেন। কিন্তু মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান মনে করেছিলেন শেখ ইউসুফ হারুনকে ঢাকার ডিসি পদে পদায়নের জন্যই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। কারণ, ওই সময় ঢাকার ডিসি পদটি শূন্য হচ্ছিল। তিনি শেখ ইউসুফ হারুনকে ঢাকার ডিসি পদে পদায়নের প্রস্তাব করেন। প্রধানমন্ত্রী তা দেখে অবাক হন এবং বলেন, আমি তো তাকে ঢাকার ডিসি করতে বলিনি। ঢাকায় যেকোনো একটি পোস্টিং দিতে বলেছি। অবশ্য, শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী সেই প্রস্তাবই অনুমোদন করেন। আর ঢাকার ডিসি পদ থেকে পরবর্তীতে পদায়ন হন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক পদে। সেখান থেকে পদোন্নতি ও পদায়ন পেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এপিডি) পদে বর্তমানে কর্মরত আছেন।
( সাপ্তাহিক শীর্ষকাগজে ২৭ আগস্ট ২০১৮ প্রকাশিত)
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন