স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর সংবর্ধিত হলেন মুক্তিযুদ্ধে স্বামী-সন্তান-স্বজনহারা সোহাগপুরের বিধবারা। শুক্রবার বিকেলে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলা মুক্তমঞ্চে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের সংবর্ধিত করা করা।
এ উপলক্ষে আয়োজিত ‘শহীদ জায়া সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান অতিথি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক এমপি এবং প্রধান বক্তা কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি।
বর্তমানে বেঁচে থাকা ২৫ জন সংবর্ধিত বিধবার হাতে এদিন ক্রেস্ট, শাড়ি ও নগদ ১০ হাজার টাকা করে তুলে দেন অতিথিরা। জেলা পুলিশের এমন সংবর্ধনায় আপ্লুত হন শহীদ পরিবারের বিধবারা।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক এমপি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা যেখানেই পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ হয়েছে সেখানেই স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে ২৮টি জেলায় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। যেসব মুক্তিযোদ্ধা এখনও বেঁচে আছেন তাদের যুদ্ধস্মৃতি কমপক্ষে ১০ মিনিটের ভিডিও করে সংরক্ষণ করা হবে। সারাদেশের বধভূমিগুলোতে একই ডিজাইনের স্মৃতিসৌধ করা হবে। প্রতিটি এলাকায় মৃত্যুর পর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাহিত করার জন্য একই ডিজাইনের কবরস্থান ও জেলা উপজেলায় অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১৫-১৮ লাখ টাকা ব্যয় করে বাসস্থান নির্মাণ করে দেয়া হবে।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরি বলেন, দেশের জন্য যদি কেউ কিছু করে থাকে, সেটা আওয়ামী লীগের সরকার, বঙ্গবন্ধুর সরকার, শেখ হাসিনার সরকার করেছে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যা করেছে দেশের কোনো সরকার তা করেনি। মুক্তিযোদ্ধাদের রেশন থেকে শুরু করে বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম-এর সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি নিবাস চন্দ্র মাঝি, জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব বক্তব্য রাখেন।
এসময় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির রুমান, উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ছানোয়ার হোসেন ছানু, জেলা মহিলা আওয়ামীলীগ সভাপতি শামসুন্নাহার কামাল এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, সরকারী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি এবং দলীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
১৯৭১ সালের এই দিনে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর সোহাগপুর বেনুপাড়া গ্রামে পাকিস্তানি হায়েনার দল নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ১৮৭ জন নিরীহ পুরুষ মানুষকে নির্মমভাবে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। সকল পুরুষকে হত্যা করায় এ গ্রামের নাম হয় ‘বিধবাপল্লী’। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে এ গণহত্যায় নেতৃত্বদানকারী আলবদর কমান্ডার জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। রায় কার্যকরের পর ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ ‘৭১ সোহাগপুর বিধবাপল্লীকে ‘সোহাগপুর বীরকন্যা পল্লী’ নামে ঘোষণা করেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন