গোলাম সামদানি ডন ব্যতিক্রমী একজন উদ্যোক্তা। হতাশ ও পিছিয়ে পড়া তরুণ ও কর্মজীবিদের অনুপ্রেরণামূলক পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও বক্তব্য দিয়ে উৎসাহ দিয়ে চলেছেন। নিজের নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ডন সামদানি ফ্যাসিলিটেশন অ্যান্ড কন্সাল্টেন্সি’। এর চিফ ইন্সস্পিরেশনাল অফিসার হিসেবে তিনি এখন বিভিন্ন কর্পোরেট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পেশাদারী বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন।
মেহেদী শামীমের উপস্থাপনায় ৯৬.৪ স্পাইস এফএমের ‘রাইজিং বাংলাদেশ’র ১০ম পর্বের অতিথি হয়ে তিনি শ্রোতাদের শুনিয়েছেন দেশের তরুণদের অবস্থান ও তার প্রশিক্ষণ জীবনের বিভিন্ন সারকথা। এবারের বিষয় ‘কর্মজীবন গড়তে প্রফেশনাল ট্রেনিং কি জরুরি’। ‘রাইজিং বাংলাদেশ’ গ্রন্থনা ও প্রযোজনা করেন জামিল আশরাফ খান। দৈনিক সমকাল এই অনুষ্ঠানটির প্রিন্টিং পার্টনার। পাঠকদের জন্য অনুষ্ঠানটির সাক্ষাৎকার পর্বের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
বর্তমানে কি নিয়ে ব্যস্ততা যাচ্ছে?
আমি মূলত একজন কর্পোরেট প্রফেশনাল ট্রেইনার। বাংলাদেশের প্রথমসারির যত মাল্টিন্যাশনাল এবং লোকাল কোম্পানিগুলো আছে তাদের ট্রেইনিং দিচ্ছি। সম্প্রতি ইস্টার্ন ব্যাংক, ব্র্যাক, নাভানা গ্রুপসহ দেশের বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছি।
আপনি যে পেশায় আছেন সেখানে আসার গল্প শুনতে চাই?
২০১৩ সালে আমি তখন ফিলিপ মরিস ইন্টারন্যাশনালে ম্যানেজার ফর কনজিউমার অ্যাংগেজমেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলাম। তখন সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে যাতায়াতের সুবিধার্থে একটি প্রাইভেট কার কিনেছিলাম। একরাতে বাসায় ফেরার সময় বসুন্ধরার কাছে আমার পায়ে গুলি করে গাড়িটি ছিনতাই করে নিয়ে যায় দুষ্কৃতিকারীরা। এরপর অপারেশন করে হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম অনেকদিন। তখনই আমার চিন্তা ভাবনা বদলাতে শুরু করে। তখন ভাবতে শুরু করলাম কেন আমি এখানে, জীবনের মানে কী? যেখানে সারা জীবনের সঞ্চয় মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম, জীবনে অর্থপূর্ণ কিছু করতে হবে। আমাকে বাঁচতে হবে জীবনের জন্য, পরিবারের জন্য, আগামীর জন্য। এরপর চাকরি ছেড়ে দিই এবং পরবর্তী বছর জুনে মানে প্রায় এক বছরের মধ্যে নিজের প্রতিষ্ঠান ডন সামদানি ফ্যাসিলিটেশন এন্ড কন্সাল্টেন্সির যাত্রা শুরু করি।
কর্মজীবন গড়তে প্রফেশনাল ট্রেইনিং কি জরুরি ?
আমার মনে হয় অবশ্যই দরকার, কারণ স্কুল, কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যপুস্তকে ফাংশন ও টেকনিক্যাল স্কিলটা শিখে আসে। কিন্তু কিভাবে কমিউনিকেশন করতে হবে, কিভাবে আইডিয়া সেল করতে হবে, কিভাবে যথাযথ প্রেজেন্টেশন তৈরি করে কিভাবে প্রেজেন্ট করতে হয়, কিভাবে কঠিন সমস্যাগুলো সমাধান করতে হয়, কিভাবে বসকে ম্যানেজ করতে হবে আর এই বিষয়গুলো স্কুল, কলেজে বা ভার্সটিতে শেখানো হয় না। একজন কর্পোরেট প্রফেশনাল ট্রেইনারের কাজ হলো এই বিষয়গুলো শেখানো। যেটা ফাংশন ও টেকনিক্যাল স্কিল থেকে অনেক বেশি জরুরি।
আপনার কাছে মূলত কারা বা কোন বয়সের লোকজন ট্রেইনিং নিতে আসে?
আমার কাছে ১৮ থেকে ৩৫ বছরের ব্যক্তিরাই আসে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ তরুণ যাদের মধ্যে কাজ করার উদ্যমতা আছে, কিন্তু পড়াশুনা শেষ করে কাজের চাপ সেই কাজের উৎসাহ কমিয়ে দেয়-তারা আসে। এরা ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে চায়। এদের জানার ইচ্ছা অনেক বেশী, সব হয়তো আমি জানি না। কিন্তু চেষ্টা করি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমি যা জানি সবাই কে তা জানাতে ।
এখন তরুণরা নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ার বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয় মোটিভেশনাল স্পিকারের কোন বক্তব্য শুনে, এই বিষয়টাকে আপনি কিভাবে দেখেন?
আমার মনে হয় প্রত্যেক মানুষের একজন মেন্টর দরকার। কোন কিছু করার আগে কারো পরামর্শ নেয়ার আগে থেকেই ছিল। তাই বিষয়টি আমার কাছে খুবই ইতিবাচক, তবে আমার মতামত থাকবে যাচাই-বাছাই করে ভালো কারো কাছে যাওযার।
আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে আমরা কতটুকু এগিয়েছি বলে আপনার মনে হয়?
এখন কর্পোরেট কোম্পানিরগুলোর উচ্চপদস্থ ব্যবস্থাপনায় দেশীয় লোকবলের অভাব রয়েছে, তার মধ্যেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। দেশে অনেকে আছে যারা বড় বড় কোম্পানি পরিচালনা করছে। কিন্তু সংখ্যাটি কম। শুধুমাত্র ফাংশন ও টেকনিক্যাল স্কিলের পাশাপাশি প্রফেশনাল কোম্পানি ম্যানেজম্যান্ট শেখাটাও জরুরি। তাহলে ধীরে ধীরে আমাদের জনশক্তি আরো দক্ষ হবে। তখন দেশের বাইরে গিয়ে টপ ম্যানেজম্যান্টের কাজ করবে এটা আমার বিশ্বাস।
আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
আমি মনে করি এখন যে কর্মক্ষেত্রে আছি সেটা আমার জন্য সবচেয়ে উপযোগী। অনেক মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা ও আমার দ্বারা তাদের জীবনে একটু হলেও ভ্যালু অ্যাড করাতেই সবচেয়ে বেশি আনন্দ খুঁজে পাই। যা হওয়ার কথা ছিল আমি তাই হয়েছি। আর বর্তমান ও ভবিষ্যত ভাবনা সবকিছুই বর্তমান পেশা নিয়ে। আমি বাংলাদেশের সবচেয়ে লিডিং ট্রেইনার হতে চাই। এর জন্য যে কাজ করা প্রয়োজন, আমি সেটা করে যাচ্ছি এবং যাবো।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন