চুরির অভিযোগ তুলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের বিক্ষোভের পর দুস্থদের জন্য বরাদ্দ ভিজিএফের ৩ হাজার ২শ ৫৬ কেজি চাল জব্দ করে চুয়াডাঙ্গা থানায় রাখা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এই ঘটনা ঘটেছে। পৌর মেয়রের দাবি- তিনি চালগুলো বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, পৌরসভা থেকে রাতে ট্রাকযোগে চালগুলো বের করা হচ্ছিল। তখন স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা চুরির অভিযোগ তোলে বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভ শেষে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাহাবুল ইসলাম, গরিব রুহানী মাসুম প্রমুখ। তারা পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপুর বিরুদ্ধে ‘চাল চুরির বিচার চাই’ ও ‘দিনের বদলে রাতে কেন, চাল নেওয়া হচ্ছে বাইরে’ স্লোগান দেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কলিমুল্লাহ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াশীমুল বারী ফোর্স নিয়ে রাত সোয়া ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে চালভর্তি পৌর মিনি ট্রাকটি থানায় নেওয়ার নির্দেশ দেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাতে পৌরসভার সামনে অতিরিক্ত পুলিশও মোতায়েন করা হয়।
জব্দ করা ৭৪টি বস্তায় ৪শ ৪৪টি প্যাকেটে ৩ হাজার ২শ ৫৬ কেজি চাল ছিল।
স্থানীয়রা জানান, শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মিনি ট্রাকযোগে পৌর গাড়িচালক খোকন, পৌর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাজের সুপারভাইজার জুবায়ের রহমানসহ দুজন চাল নিয়ে পৌরসভা থেকে বের হচ্ছিলেন। এসময় এলাকাবাসী পৌর গেটেই ট্রাকটির গতিরোধ করে। রাতের আঁধারে পৌর এলাকার গরিব মানুষদের চাল চুরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলে তারা সদর থানা পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘটনার বর্ণনা শুনে চালসহ মিনি ট্রাকটি থানায় নিয়ে যায়।
পৌর কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম, আবুল হোসেন,সিরাজুল ইসলাম মনি, পৌর প্যানেল মেয়র একরামুল হক মুক্তা ও তিন জন সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর জানান, পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপুর তত্ত্বাবধানে ভিজিএফ কার্ডধারীদের চাল বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। দিনে চাল বিতরণের সময় অতিরিক্ত ভিড়ে তা বিতরণে সমস্যা হওয়ার কারণে গত বৃহস্পতিবার (১৬ আগস্ট) থেকে পৌর এলাকার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চাল বিতরণ করা হচ্ছে।
আটক ট্রাকের চালক খোকন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে একইভাবে চাল পৌঁছে দিয়েছি। শনিবার রাতেও চাল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছিল। পৌরসভার গেটেই কিছু ব্যক্তি আটকে দেওয়ায় পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে ওঠে।’
এদিকে চুয়াডাঙ্গা শহরের তালতলা পশুহাটপাড়া মহল্লার আমিরুলের স্ত্রী জরিনা ১০ কেজি, একই মহল্লার বজলুর রহমানের স্ত্রী মর্জিনা ৮ কেজি ও রমজনা মন্ডলের ছেলে নায়েব মন্ডল ১০ কেজি করে চাল পেয়েছেন বলে জানান।
জব্দ করা চালএই প্রসঙ্গে পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘বেশি মানুষের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য চালের পরিমাণ কোনও কোনও ক্ষেত্রে কম হতে পারে। রাতে বাড়ি বাড়ি চাল পৌঁছে দিয়ে যখন সুনাম হচ্ছে, ঠিক তখন একটি চক্র আওয়ামী লীগ সরকারের জনকল্যাণমূলক কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। ওরা কারা চুয়াডাঙ্গা পৌরবাসী জানে। তাছাড়া রাতে ভিজিএফ কার্ডধারীদের বাড়ি বাড়ি চাল পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি তদন্ত করলেই প্রমাণ মিলবে।’
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াশীমুল বারী বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে চাল থানায় নেওয়া হয়েছে। সরকারি চাল ঈদের আগেই হতদরিদ্রদের মাঝে বিতরণের কথা রয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ’
চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. কলিমুল্লাহ বলেন, ‘অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে পৌরসভা গেট থেকে মিনি ট্রাকভর্তি চাল থানায় নিয়ে রাখা হয়েছে। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন