দেশে অভিন্ন কলরেট চালু হওয়ায় সাধারণ গ্রাহকের খরচ বাড়লো না কমলো- সেটা নিয়েই গতকাল মঙ্গলবার দিনভর ছিল আলোচনা। মার্কেট বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অভিন্ন কলরেট চালু হওয়ায় গরিবের খরচ কিছুটা বেড়ে যেতে পারে। আর ধনীদের খরচ কিছুটা কমতে পারে। সোমবার মধ্যরাত থেকে দেশে মোবাইল ফোনে অভিন্ন কলরেট চালু হয়েছে। এই কলরেট সর্বনিম্ন ৪৫ পয়সা আর সর্বোচ্চ ২ টাকা। আগে যেখানে ছিল অননেট (একই অপারেটরের নম্বরে) কল ছিল সর্বনিম্ন ২৫ পয়সা সর্বোচ্চ ২ টাকা। আর অফনেট (এক অপারেটর থেকে অন্য অপারেটরে) কল ছিল সর্বনিম্ন ৬০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ২ টাকা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সাধারণ দরিদ্র মানুষ সবসময় হিসাব করেই মোবাইল ফোনে কথা বলেন। তারা অনেকেই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। ফলে বিশেষ প্যাকেজ নিয়ে তারা ২৫ থেকে ৩০ পয়সার মধ্যে কথা বলতেন। এখন তাদের সেই খরচ প্রতি মিনিটে ২০ পয়সা বেড়ে যেতে পারে। অন্যদিকে যারা অফনেট অননেট দেখে কথা বলতেন না তাদের জন্য খরচ কমবে। এটা মূলত উচ্চ আয়ের মানুষ করে থাকেন। কারণ আগে অফনেটে কথা বলতে খরচ হতো ৯০ পয়সা থেকে দেড় টাকা পর্যন্ত। এখন সেটা অনেকখানি কমবে। তবে সার্বিক বিচারে বলা হচ্ছে মোবাইল ফোনের এখন খরচ কমে যাবে।
তবে বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেছেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরে স্টাডি করছিলাম, এর ফলে এখন সবগুলো অপারেটর সমান সুবিধা পাবে। ফলে, এখন যেকোন অপারেটরে ফোন করলে প্রতি মিনিট রাত-দিন ৪৫ পয়সা কলরেট হবে।’ কেউ গ্রামীণফোন থেকে গ্রামীণফোনে কথা বলতে যে খরচ হতো সেই গ্রাহকের একটু অসুবিধা হবে বলেও স্বীকার করেছেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান। সার্বিকভাবে গ্রাহকের সুবিধে হবে বলে মনে করেন তিনি। কিন্তু অপারেটররা ইচ্ছে করলে ৪৫ পয়সা না নিয়ে একটু বেশিও নিতে পারবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে গ্রাহকরা অভিযোগ করেছন, কলের খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে মোবাইলফোন অপারেটররা বলছে, খরচ আসলে কমলো। মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) চালু হলে গ্রাহকরা এখনের চেয়ে আরও কম খরচে মোবাইলে কথা বলতে পারবেন। অপারেটররা বলেছে, নতুন নিয়মে গ্রাহকরা সুফল পাবে। অননেট কলের সর্বনিম্ন সীমা ২৫ পয়সা হলেও গ্রাহকদের গড় খরচ হতো ৩৯-৪০ পয়সা। আর অন্য অপারেটরে (অফনেটে) কলের সর্বনিম্ন সীমা ৬০ পয়সা হলেও গ্রাহকের খরচ হতো ৮৯ পয়সা থেকে ১ টাকা ৪০ পয়সার মতো। নতুন কলরেট চালুর ফলে একই অপারেটরে কলের খরচ ৫ পয়সা বাড়লেও অন্য অপারেটরে কলের ক্ষেত্রে খরচ কমবে ৪৫ থেকে ৫০ পয়সা। মূলত গ্রাহক সংখ্যায় ছোট অপারেটরের গ্রাহকরা এই সুবিধা পাবেন বলে মনে করছে অপারেটররা। তবে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ মোবাইল ফোনে হিসেব করেই কথা বলতেন। তারা এফএনএফ বা বিশেষ প্যাকেজ ব্যবহার করে ২৫ থেকে ৩০ পয়সার মধ্যেই কথা বলতেন। এখন এই খেটে খাওয়া মানুষের খরচ বেড়ে যাবে।
গ্রামীণফোনের হেড অব কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স মাহমুদ হোসেন মাসখানেক আগে এ প্রতিবেদকসহ কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে বলছিলেন, অফনেট-অননেট তুলে দিলে একেবারে গরিব শ্রেণির মানুষের খরচ কমবে। এতে হয়ত অপারেটরদের খুব বেশি লাভ বা ক্ষতি হবে না, তবে এক শ্রেণির গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আবার যারা এক অপারেটর থেকে অন্য অপারেটরে বেশি কথা বলেন তারা লাভবান হবেন।
সাংবাদিকদের কাছে রবির হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স শাহেদ আলম বলেছেন, আসলে কলরেট কমলো। দেশের মোটকলের মধ্যে অননেট হলো ৬৫ এবং অফনেট হলো ৩৫ শতাংশ। এর মধ্যে দামের পার্থক্য ছিল ১৪৫ শতাংশ। নতুন কলরেটের কারণে কলরেট কমলো প্রায় ৬৫ শতাংশ। অফনেট ও অননেটের মধ্যে দামের যে বৈষম্য ছিল তা দূর হলো। এমএনপি চালু হলে গ্রাহক আরও বেশি উপকৃত হবেন।
বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমানও সাংবাদিকদের বলেছেন, বাংলালিংক সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এটি গ্রাহকদের নেটওয়ার্ক বেছে নেওয়া ও একই কলরেটে অননেট ও অফনেট কল করার স্বাধীনতা দেওয়ার মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রা আরও সহজ করতে ভূমিকা রাখবে যা আগে সম্ভব ছিলো না। সব ধরনের নির্দেশ মেনে এটি বাস্তবায়নের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বাংলালিংক তার গ্রাহককে সবসময় বেশি সুবিধা দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন