তাসনিম নাজির
বাংলাদেশে দুঃখজনক এক সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকার সর্বত্র ব্যাপক বিক্ষোভে নেমেছিল শিক্ষার্থীরা। তারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের মাধ্যমে সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানায়, কিন্তু বাংলাদেশের পুলিশ ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের উপর লাঠিচার্জ করে এবং মোবাইল সংযোগ বন্ধ করে দেয়। বিক্ষোভকারীরা এটাও জানিয়েছে যে তাদের উপর টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেটও নিক্ষেপ করা হয়েছে। কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী এতে মারাত্মক আহতও হয়েছে। সরকারের এই প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অমানবিক।
সেই সাথে এই বিক্ষোভ নিয়ে নিজের মতামত জানানোর কারণে শীর্ষ ফটোগ্রাফার শহিদুল আলমকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। হতাশাজনক সত্য হলো, বাংলাদেশের কোন নাগরিকই যেন তার মত প্রকাশ করতে পারছে না, যেখানে তাদেরকে সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হতে না হচ্ছে।
যদিও জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিক্ষোভকারীদের উপর সরকারের দমন নিপীড়ন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে, কিন্তু বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে সহিসংতার মাত্রাও বেড়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে যখন সড়ক ব্যবস্থাপনায় অবহেলার অভিযোগ উঠেছে, তখন বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার জন্য সড়ক দুর্ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আইন প্রণয়নের আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া বার্নিকাটকে পরিবহনকারী একটি গাড়িও সশস্ত্র ব্যক্তিদের হামলার শিকার হয়েছিল কিন্তু তিনি নিরাপদে সরে যেতে পেরেছেন বলে দূতাবাস জানিয়েছে। মার্কিন দূতাবাস আরও জানিয়েছে যে, যদিও তারা অবাধে জনগণের সম্পদ ধ্বংসকে সমর্থন করেন না, কিন্তু কোনভাবেই তারা হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের উপর সহিংস হামলাকে সমর্থন করতে পারেন না, তারা নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার অনুযায়ী আন্দোলন করছে।
একজন সাংবাদিক হিসেবে আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের কোন জাতীয় প্রকাশনায় যদি আমি বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে কিছু লিখি, তাহলে সম্ভবত আমাকে গ্রেফতার করা হবে। মিডিয়াকে নিরব করে দেয়া এবং জনগণকে তথ্য থেকে বঞ্চিত করার বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক এবং সত্যকে সত্য হিসেবে তুলে ধরতে হবে। বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রতি এটা একটা অন্যায় এবং তাদেরকে তাদের পূর্ণ অধিকার দিতে হবে।
সরকার কেন বিক্ষোভকারীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও পোস্ট করা থেকে বাধা দিচ্ছে? যদি লুকানোর কিছু না-ই থাকে, তাহলে কেন মোবাইল ইন্টারনেট কানেকশান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে? নিজেদের এবং নিজেদের পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে সাক্ষাতকারদাতারা নিজেদের নাম পর্যন্ত প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছে। নাগরিকরা যখন নিজেদের সরকারকে ভয় পায়, নাগরিকরা যখন নিজেদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে ভয় পায়, তখন তারা কার কাছে যাবে?
বাংলাদেশ সরকারকে এটা বুঝতে হবে যে, দায়বদ্ধতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার জন্য নিজেদের ভুলের ব্যাপারে সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে। সমালোচনার ব্যাপারে সরকারের অসহিষ্ণুতাকে প্রকাশ করার পথে অনেক বাধাকে এখনও অতিক্রম করতে হবে। শক্তিশালী বহু রাষ্ট্র নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে আইনের অপব্যবহার করে নিজেদের ভুলগুলো আড়াল করে আন্তর্জাতিক সমালোচনা থেকে বাঁচার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের জন্য ন্যায় বিচার পাওয়াটি খুবই কঠিন হয়ে গেছে এবং সরকার কোথায় ব্যর্থ হচ্ছে, সেটা বলাটাও কঠিন হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হিসেবে আমাদেরকে এটা বলতে হবে যে, কোনটা ভুল এবং তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে, যাদের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে এবং একটি অগণতান্ত্রিক সরকারের অধীনে যারা এখনও নির্যাতিত হচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন