১৩ আগস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি দিয়ে প্রস্তাবিত কওমি শিক্ষা আইনের অনুমোদনের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি নিয়ে শঙ্কা যেমন খানিকটা দূর হয়েছে তেমন শক্ত ভিত্তি পেয়েছে কওমি শিক্ষা আইন।
কওমি ধারার নীতি নির্ধারক আলেমগণ আশাবাদী সরকার তার বর্তমান মেয়াদেই আইনটি জাতীয় সংসদে উঠাবেন এবং সংসদের অনুমোদন গ্রহণ করবেন।
গত ১১ এপ্রিল গণভবনে কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি ঘোষণার পর দ্রুততম সময়ে তার আইনি প্রদান এবং মন্ত্রীসভার বৈঠকে অনুমোদনের পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃতিত্বকেই বড় করে দেখছেন কওমি শিক্ষা কমিশন ‘আল হাইআতুল উলয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়্যাহ, বাংলাদেশ-এর নেতৃত্ববৃন্দ।
প্রধানমন্ত্রী সাহসী ও আন্তরিক না হলে দেশ-বিদেশের নানান প্রশ্ন উপেক্ষা করে দ্রুততম সময়ে কওমি শিক্ষা আইনের অনুমোদন মন্ত্রিসভায় হতো না।
সাথে সাথে তারা মাননীয় স্বরাষ্টমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব, প্রস্তাবিত খসড়া আইন নিরীক্ষণের জন্য গঠিত সরকারি কমিটি প্রতিনিধিগণ সকলকে আন্তরিক সমযোগিতার জন্য ধন্যবাদ দিয়েছেন।
অন্যদিকে, মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পূর্বে প্রস্তাবিত আইনটি বিস্তারিতভাবে নিরীক্ষণের সুযোগ না পাওয়ায় এবং ভবিষ্যতে এ আইন কওমি মাদরাসার স্বকীয়তা নষ্ট এবং তার ওপর সরকারের হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
আশা ও আনন্দ, ভয় ও সংশয়ের কথাগুলো বলেছেন, কওমি শিক্ষা সনদের মান বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত ‘আল হাইআতুল উলয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়্যাহ’-এ অংশিদার ৬ শিক্ষা বোর্ডের প্রতিনিধিগণ।
তারা স্পষ্ট বলেছেন, আমরা আনন্দিত, তবে আনন্দের জোয়ারে ভেসে যাবো না। বরং জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় আজ যেমন সজাগ আগামীতেও তেমন থাকবো। এখানে স্বীকৃতি বিষয়ে বোর্ড নেতৃবৃন্দের মতামত তুলে ধরা হলো।
২০১০ সালেই সংসদে কওমি মাদরাসাকে স্বকীয়তা বজায় রেখে স্বীকৃতি পাস হয়েছে
মুফতী রুহুল আমিন
বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়্যা বাংলাদেশ
যে কোনো জিনিসের অগ্রগতিতেই মানুষ আনন্দিত হয়, মন্ত্রিসভায় কওমি শিক্ষা আইনের নীতিগত অনুমোদন হওয়া একটি বড় ধরনের অগ্রগতি। আল হামদুলিল্লাহ! আমি আনন্দিত।
আমি মনে করি, কওমি শিক্ষাধারার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল স্তরের মানুষ; ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারী ও অভিভাবক সবাই এ সংবাদে আনন্দিত। তবে চূড়ান্ত আনন্দ প্রকাশ ততোক্ষণ পর্যন্ত উচিৎ হবে না, যতোক্ষণ না আমরা জানতে পারবো প্রস্তাবিত আইনে কী আছে আর কী নেই।
আমরা আশা করছি, আমাদের প্রত্যাশা ও দাবি অনুযায়ী সব হয়েছে। মৌলিকত্ব ঠিক রেখেও কোনো ধারার সংযোজন ও বিয়োজন হয়েছে কি না তা আমরা নিশ্চিত হতে চাই। সেলক্ষ্যে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত আইনের খসড়া সংগ্রহের চেষ্টা করছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যতোটুকু আন্তরিকতা দেখিয়েছেন, তাতে আমরা আশা করছি দ্রুতই সংসদে কওমি শিক্ষা আইন উত্থাপিত হবে। কোনো কারণে যদি তা উত্থাপন করা নাও যায় তাতেও কোনো সমস্যা নেই। কারণ, ২০১০ সালে সংসদে যে জাতীয় শিক্ষানীতি পাশ হয়েছে তার ৬ এর ক ধারায় কওমি শিক্ষা ব্যবস্থার স্বকীয়তা রক্ষা করে স্বীকৃতি প্রদানের কথা বলা হয়েছে।
সুতরাং মন্ত্রীসভায় অনুমোদিত আইনটি পূর্বেই অন্য একটি আইনের ধারা হিসেবে পাশ হয়ে আছে।
দ্বিতীয়ত, আলিয়া মাদরাসার সরকারি মান ঘোষণার পর থেকে আজ পর্যন্ত সংসদে আইন হিসেবে পাশ হয় নি। কিন্তু তাদের সার্কিফিকেট গ্রহণযোগ্য হচ্ছে, তারা চাকরি করছে। শিক্ষাসংক্রান্ত কোনো সমস্যা তাদের হচ্ছে না।
আজ মন্ত্রিসভায় কওমি শিক্ষা আইনের নীতিগত অনুমোদন যদি কোনো সাফল্য হয়, তবে তা আমাদের সবার অর্জন। সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় এতোদূর এসেছে। আমরা সবাই তা করেছি, আল্লাহর জন্য। এ দেশ, জাতি ও তার রক্ষক কওমি মাদরাসার জন্য।
আমার মনে হয়, আমাদের সন্তানদের (কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীগণ) একটা বিষয় খুব ভালো করে বোঝানো দরকার। তাহলো, আমরা কওমি মাদরাসার শিক্ষা সনদের স্বীকৃতির জন্য কেনো কাজ করলাম? সেটা কি চাকরি করার জন্য? সরকারি সুযোগ-সুবিধার জন্য? না, এ স্বীকৃতি আমাদের যোগ্যতা ও মর্যাদার স্বীকৃতি।
সরকারি হিসেবে আমাদের বড় বড় বিদ্যানরা মূর্খ হিসেবে গণ্য হতেন। সেটা ছিলো অপমানকর। আজ তার অবসান হলো। এ ছাড়া আর কিছু না।
সুতরাং জাতির প্রতি আমাদের দায়িত্ব, আমাদের ত্যাগ ও নিবেদন, সেবা সবকিছু আগের মতোই থাকবে। ইলমে দীন চর্চায় সততা ও নিষ্ঠায় যদি কোনো ঘাটতি তৈরি হয় তবে স্বীকৃতি আমাদের ক্ষতিগ্রস্থই করবে।
স্বীকৃতিতে সরকারের হস্তক্ষেপের সুযোগ থাকবে না
মুফতি নুরুল আমিন
বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ
আমরা আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা আদায় করছি, কওমি মাদরাসার স্বীকৃতির বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অতিক্রম করলো। প্রধানমন্ত্রী তার কথা রাখায় আমরা খুশি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ যাদের আন্তরিকতায় ‘কওমি শিক্ষা আইন’ মন্ত্রিসভা পর্যন্ত উঠেছে সবাইকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানাই।
বিশেষত প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ। তিনি অনেক বেশি সহযোগিতা করেছেন।
তবে একটু ভয়ের জায়গা রয়ে গেছে। তাহলো, আমরা এখনও জানি না কিভাবে পাশ হয়েছে। আশা করি, খুব শিগগির আমরা অনুমোদিত আইনের কপি আমরা হাতে পাবো।
আবার আমরা একেবারে জানি না তাও বলা ঠিক হবে না। কারণ, আইনটি মন্ত্রিসভায় ওঠানোর পূর্বে আল্লামা আহমদ শফীর কাছে পাঠানো হয়েছিলো। হজরতের ছেলে মাওলানা আনাস মাদানী তা পাঠ করে শোনান। হুজুর বলেন ঠিক আছে।
আইন পাশ হওয়ার পর আমাদের প্রধান দায়িত্ব হলো, আইনানুযায়ী হাইআতুল উলয়াকে পরিচালনা করা এবং শিক্ষার মান নিশ্চিত করা।
অনেকেই ভয় পাচ্ছে স্বীকৃতির ফলে হয়তো সরকারের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ তৈরি হবে।
আমি বলবো, সরকার যদি আমাদের দাবি অনুযায়ী আইনটা জাতীয় সংসদে পাশ করে তবে হস্তক্ষেপের সুযোগ থাকবে না। এরপরও যতোটুকু ভয় থেকে যায় উলামায়ে কেরাম ঐক্যবদ্ধ থাকলে তা অতিক্রম করা সম্ভব।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন