অনিয়ম আর দুর্নীতির মহোৎসব চলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণাধীন স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরে। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে সরকারি অর্থের লুটপাট তো অনেক পুরনো বিষয়। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা প্রকল্প শুরুর আগেই লুটে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। কাজের সিডিউল ঘোষণার পরই পকেট ভর্তিতে নেমে পড়েন তারা। সিডিউল বিক্রির টাকাই তারা সরকারি তহবিলে না দিয়ে প্রাইভেট ব্যাংকে নিজেদের অ্যাকাউন্টে জমা করে নিয়েছেন।
জাতীয় সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৯০তম বৈঠকে সংশ্লিষ্ট অধিদফতরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের এসব অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। প্রতিষ্ঠানটির ২০১০-১১ এবং তদপূর্ববর্তী অর্থ বছরগুলোর হিসাবের ওপর করা অডিট প্রতিবেদনে মোট ৬টি অডিট আপত্তির সঙ্গে জড়িত ৬ কোটি ৪২ লাখ ১৬ হাজার ৯৩৩ টাকা অনিয়মের বিষয়টি তুলে ধরেন তারা।
কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস, মো. রুস্তম আলী ফরাজী, মো. শামসুল হক টুকু এবং রেবেকা মমিন অংশ নেন। সিঅ্যান্ডএজি মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অডিট অফিস এবং জাতীয় সংসদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, সিডিউল বিক্রয়লব্ধ এবং অন্য অর্থ বাবদ ২ কোটি ১৬ লাখ ১৩ হাজার ৮৫৫ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে প্রাইভেট ব্যাংকে নিজস্ব হিসাবে জমা রেখে সংশ্লিষ্টরা সরকারি আদেশ উপেক্ষিত করেছেন। উত্থাপিত এই অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটির পক্ষ থেকে অনধিক ৩০ দিনের মধ্যে টাকা জমা দিয়ে প্রমাণক অডিট অফিসে জমাদানের অনুশাসন প্রদান করা হয়। তবে এ ধরনের ব্যত্যয় আর যাতে না ঘটে সে বিষয়টি নিশ্চিতকরনসহ আর্থিক বিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন করার পাশাপাশি বিষয়টি নিষ্পত্তির সুপারিশ করা হয়।
এদিকে ঠিকাদারকে প্রদত্ত অগ্রিম সমন্বয় না করেই চূড়ান্ত বিল পরিশোধ করায় সরকারের ৮৫ লাখ টাকা এবং সুদ বাবদ ২৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭৫১ টাকাসহ মোট ১ কোটি ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৭৫১ টাকা আর্থিক ক্ষতি মর্মে উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটির পক্ষ থেকে অনধিক ৩০ দিনের মধ্যে টাকা জমা দিয়ে প্রমাণক অডিট অফিসে জমাদানের অনুশাসন প্রদান করা হয়। এ ধরনের ব্যত্যয় আর যাতে না ঘটে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে বলেছে কমিটি।
বৈঠকে পিপিআর-২০০৮ এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রাক্কলন অনুমোদন না করা সত্ত্বেও অতিরিক্ত কাজের মূল্য বাবদ ৪৮ লাখ ৩৯ হাজার ৫৮১ টাকা ঠিকাদারকে পরিশোধ মর্মে উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটির পক্ষ থেকে বিষয়টি নিষ্পত্তির সুপারিশ করা হয়। চুক্তির শর্ত মোতাবেক অসমাপ্ত কাজের জন্য ঠিকাদারের কাছ থেকে অবশিষ্ট কাজের অতিরিক্ত কাজের ব্যয়িত টাকার ২০ শতাংশ আদায় না করায় সরকারের ৫৭ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৯ টাকা ক্ষতি মর্মে উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটির পক্ষ থেকে অনধিক ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে কাজটি সমাপ্ত করে প্রতিবেদন অডিট অফিসে দাখিল করতে বলা হয়।
বৈঠকে সরকারের বিধি উপেক্ষা করে বরাদ্দের অব্যয়িত সর্বমোট ১ কোটি ৭৪ লাখ ৩৪ হাজার ৪৭৭ টাকা সরকারি খাতে সমর্পণ না করা মর্মে উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটির পক্ষ থেকে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার সুপারিশ করা হয়। কার্যসম্পাদনে অনীহা ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে ৫ বছরেও কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় চুক্তিপত্র বাতিলসহ ঠিকাদারের পারফরমেন্স সিকিউরিটি ৩৬ লাখ ৯১ হাজার বাজেয়াপ্ত না করায় আর্থিক ক্ষতি এবং জনগণ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত মর্মে উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটির পক্ষ থেকে অনধিক ৩০ দিনের মধ্যে অনাদায়ী টাকা আদায় করে প্রমাণক অডিট অফিসে জমাদান এবং ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্তি করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার সুপারিশ করা হয়।
মানবকণ্ঠ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন