বালুবাহী ট্রাক চলাচলের কারণে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার শৈলমারি ওয়াপদা বেড়িবাঁধের দুই কিলোমিটার সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়েছে। এতে করে ৮ গ্রামের মানুষের পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।
সরেজমিনে দেখা যায়, শৈলমারি নদীর ট্রলার ঘাট এলাকায় অবৈধ একাধিক বালু বেড (বালু রাখার স্থান) রয়েছে। এসব বালু বেড থেকে বালু ভর্তি করে প্রতিদিন অসংখ্য ট্রাক চলাচল করে। এতে শৈলমারি ট্রলার ঘাট থেকে কৈয়া বাজার পর্যন্ত সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মানুষের চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ এ বালু ব্যবসার সঙ্গে স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত। তারা স্থানীয় জলমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই বছরের পর বছর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা অবৈধ বালু বেড বন্ধ করে দুর্ভোগের হাত থেকে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীকে রক্ষার দাবি জানিয়েছেন। ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরী জনদুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে এ প্রতিবেদককে বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও জলমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বটিয়াঘাটা উপজেলার শৈলমারি ট্রলার ঘাট কেন্দ্রিক একাধিক অবৈধ বালু বেড গড়ে উঠেছে। রূপসা নদী ছাড়াও বিভিন্ন বালু মহল থেকে উত্তোলিত বালু নৌযানে করে শৈলমারি ট্রলার ঘাটে আনলোড করা হয়। এরপর সেখান থেকে মিন্টু শিকদার, অরূপ, জাহাঙ্গীর ও সত্যজিৎ চন্দ্র চন্দসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা স্ব স্ব বেডে নিয়ে বালু বিক্রি করে থাকেন। মূল সড়কের ওপর ভারি ট্রাক রেখে স্কেভেটর দিয়ে বালু লোড করায় সড়কের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এসব ব্যবসায়ীর বালু ভর্তি ট্রাক আসা-যাওয়ার কারণে সড়কটি মানুষের চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এ কারণে এ সড়কের ওপর নির্ভরশীল পার্শ্ববর্তী হোগলবুনিয়া, ছয়ঘরিয়া, বদনাখালি, হাটবাড়ি, দশ শৈলমারি, পাথুরিঘাটা, জয়পুর ও শৈলমারি গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
এছাড়া উত্তর শৈলমারি দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় এএফসি এগ্রো বায়োটেক লিমিটেড নামক একটি ওষুধ কোম্পানির যানবাহন চলাচলও বন্ধের উপক্রম হয়েছে।
১০৮ নম্বর উত্তর শৈলমারি দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশীষ কুমার বৈরাগী ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভানেত্রী রেক্সোনা বেগমসহ ৭০জন গ্রামবাসী স্বাক্ষরিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিদ্যালয়ের সামনের সড়কের ওপর অবৈধ ভাবে বালু ব্যবসার কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাদের নাকে-মুখে বালু ঢুকে শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে। ট্রাক চলাচলের সময় বালু উড়ে শ্রেণি কক্ষের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। ফলে পাঠদান চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। এছাড়া অনিয়ন্ত্রিতভাবে ট্রাক চলাচলের কারণে শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য সড়কে চলাচল করাও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ কারণে অভিভাবকরা সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। সরেজমিন তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানানো হয় আবেদনে।
অপরদিকে এএফসি এগ্রো বায়োটেক লিমিটেড নামক ওষুধ কোম্পানির সিনিয়র ম্যানেজার মো. আবুল কাশেম স্বাক্ষরিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ী সড়কটির দু’পাশ বালুর বেড হিসেবে ব্যবহার এবং সড়কের ওপর গাড়ি রেখে লোড করায় সড়কটি ভাঙনের কবলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া সড়কটি দিয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় যানবাহন চলাচলেও প্রতিনিয়ত সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে। সড়কটির সঠিক সংরক্ষণের দাবি জানান তিনি।
শৈলমারি পানি ব্যবস্থাপনা দলের সাধারণ সম্পাদক হরিপদ মল্লিক বলেন, সড়কটি দিয়ে ভারি ট্রাক চলাচলের কারণে স্থানীয় ৮টি গ্রামের মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন। এমনকি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লেও সড়ক দিয়ে কোনো অ্যাম্বুলেন্স, ভ্যান বা অন্য কোনো হালকা যানবাহন ব্যবহার করে হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রীকে অবহিত করা হলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
বালু ব্যবসায়ী, বেড মালিক সত্যজিৎ চন্দ্র চন্দ বলেন, তিনি অল্প কিছুদিন ব্যবসা করছেন। তবে, মিন্টু, অরূপ ও জাহাঙ্গীর অনেক বছর ধরে এ ব্যবসা করছে। ট্রাক চলাচলের কারণে বর্ষার সময় একটু সমস্যা হয়। তবে, সড়কটি পিচ ঢালাইয়ের জন্য এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে অনুরোধ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জলমা ইউপি চেয়ারম্যান আশিকুজ্জামান আশিক তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বালুর ট্রাকের কারণে সড়কটি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি তিনি তিন মাস আগে উপজেলা সমন্বয় সভায় উত্থাপন করেছিলেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তবে, পরিষদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট বালু বেড মালিকদের নোটিশ করা হবে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড, খুলনা জোনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে ভারি ট্রাক চলাচল করায় সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে, বিষয়টি তিনি খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন