প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা পাবলিক নির্বাচনগুলোতে অনিয়ম হবে না এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না বলে যে মন্তব্য করেছেন তার সঙ্গে একমত নন পাঁচ সদস্যের কমিশনের চারজন নির্বাচন কমিশনার। তাঁরা সিইসির বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন, সিইসির বক্তব্য পুরোপুরি ব্যক্তিগত। কেননা আমরা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য শপথ নিয়েছি। উনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা কমিশনের বক্তব্য নয়।
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার গতকাল বৃহস্পতিবার নিজ কার্যালয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) একটি স্পর্শকাতর বিষয় অ্যারাইজ করেছেন। উনি বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম হবে না, এমন নিশ্চয়তা নেই। আমি ঠিক জানি না সিইসি কেন, কোন প্রেক্ষাপটে কথাটা বলেছেন। এটা তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত হতে পারে। তবে আমি তাঁর এ কথার সঙ্গে মোটেই একমত নই। আগামী জাতীয় নির্বাচনে যারা অনিয়ম করতে চায়, তারা এ ধরনের কথায় উৎসাহিত হতে পারে বলে আমি আশঙ্কা করি।’
আরেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা সিইসির ব্যক্তিগত মতামত। এর সঙ্গে কমিশনের কোনো সম্পর্ক নেই। কমিশনে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা নির্বাচন কমিশনার হিসেবে রাগ-অনুরাগ-বিরাগমুক্ত থেকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করার দায়িত্ব পালন করার শপথ নিয়েছি। একটা যথাযথ নির্বাচন করতে তাঁরা সব কিছুই করবেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম গত রাতে বিষয়টি সম্পর্কে কালের কণ্ঠকে বলেন, সিইসির ওই বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত নই। স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে আমরা শপথ নিয়েছি। নির্বাচনে অনিয়ম হওয়ার সুযোগ নেই। সিইসির বক্তব্য কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। উনি হয়তো ব্যক্তিগত মতামত দিয়েছেন। কেননা যে কর্মশালা শেষে সিইসি বক্তব্য দিয়েছেন, সেখানে কোনো নির্বাচন কমিশনার ছিলেন না। এমনকি এ ধরনের বক্তব্যের বিষয়ে কমিশনে কোনো আলোচনাও হয়নি।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী গত রাতে এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, সিইসি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা তাঁর নিজস্ব মতামত। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত নই। এটি কোনো অবস্থাতেই কমিশনের বক্তব্য নয়। কমিশনে এ বিষয়ে কোনো আলোচনাও হয়নি।
সিইসির ওই বক্তব্যের বিষয়ে গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের প্রতিক্রিয়া জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের বাস্তবতায় সিইসি হয়তো মনে করেছেন—এটাই সত্যি। কিন্তু তাঁর বক্তব্যে আরো সংযত হওয়া দরকার, একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে মূল দায়িত্বে তিনি আছেন।’ কথাবার্তা অবশ্য তিনি ভালোই বলেন, তবে স্লিপ অব টাং হতেই পারে। আমি আশা করি, তিনি ভবিষ্যতে এ ধরনের বক্তব্য দেবেন না।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘প্রতিবন্ধী ভোটারদের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা’ বিষয়ক কর্মশালা শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, পাবলিক নির্বাচনগুলোতে অনিয়ম হবে না সে নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।
তিনি ওই দিন বলেন, ‘বড় বড় পাবলিক নির্বাচনে কিছু কিছু অনিয়ম হয়ে থাকে আমরা সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়ে থাকি। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বেশি অনিয়ম হয়েছে, সেখানে আমরা বাড়তি ব্যবস্থা নিয়েছি। নির্বাচনে অনিয়ম হলে যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার সেভাবে আমরা নিয়ন্ত্রণ করব।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন