দুই মণ স্বর্ণ খোঁজার চেষ্টায় আপাতত ক্ষান্ত দেয়া হয়েছে বাড়ির ঝুঁকির কথা ভেবে। ফলে দ্বিতীয় দিনের খননকাজ আর হয়নি।
শনিবার রাজধানীর মিরপুরে একটি বাড়ির দুটি কক্ষ চার ফুটের মতো খনন করার পরদিন আবার নতুন করে খনন করার কথা ছিল। কিন্তু সেই খনন আর হয়নি।
কারণ, বাড়িটি এরই মধ্যে ঝুঁকিতে পড়ে গেছে। আবার নতুন করে মটি খুঁড়লে সেটি ধসে পড়ে কি না, এ নিয়ে আছে শঙ্কা। তাই ‘গুপ্তধন’ উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে পরে অভিযান শুরুর কথা জানানো হয়েছে। আর ততদিন বাড়িটি থাকবে পুলিশের হেফাজতে।
ঢাকা জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ ঢাকাটাইমসকে এ তথ্য জানিয়েছেন। রবিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের তিনি জানান, বাড়িটি বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেয়া হবে। বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েই আবারও উদ্ধার কাজ শুরু করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘বাড়িটি পুরোনো আর ঝুঁকিপূর্ণ। ঘরের ভেতরে খননের কারণে সেটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যেই জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদপ্তরেররের একজন প্রকৌশলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তার পরামর্শেই উদ্ধার কাজ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
খননের আগে কেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি জানতে চাইলে এ নির্বা্হী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘বাড়ির নিচে গুপ্তধন থাকার খবর এলাকাবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করছিল। আর সেজন্যই প্রাথমিকভাবে খননকাজ শুরু করা হয়। যেহেতু চার ফিট মাটি খনন করার পরও কিছু পাওয়া যায়নি, তাই এখন বিশেষজ্ঞদের পারামর্শ নেয়া প্রয়োজন।’
যিনি গুপ্তধনের গুজব ছড়িয়েছেন তার ব্যাপারে জানতে চাওয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘তার ব্যাপারে কক্সবাজারে পুলিশের মাধ্যমে খোঁজ নেয়া হয়েছে। তিনি যে নাম ঠিকানা ব্যবহার করে জিডি করেছেন তার সত্যতা মিললেও তার সন্ধান মেলেনি।’
এর আগে শনিবার মিরপুরে বাড়ির নিচে দুই মণ সোনা আছে, এই তথ্যে হুলস্থুল পড়ে যায়। গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ার পর ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বাড়িটিতে খননকাজ শুরু করা হয়। তবে মেঝেতে প্রায় চার ফুট খোঁড়ার পর বিকালের দিকে কাজ স্থগিত করা হয়। রবিবার দ্বিতীয় দিনের মতো সকাল থেকে আবারো কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়।
কথিত গুপ্তধনের খোঁজে দুনিয়া জুড়েই নানা সময় নানা অভিযান হয়েছে। আর সেই কাহিনি লিখে বিখ্যাতও হয়েছেন অনেকেই। তবে মিরপুরে কী হবে, সেটি জানতে করতে হবে অপেক্ষা।
মিরপুর-১০ নম্বর সেকশনের সি ব্লকের ১৬ নম্বর সড়কের ১৬ নম্বরের ওই বাড়ির মালিকের নাম মনিরুল আলম। গত ১৪ জুলাই তিনি মিরপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এতে বলা হয়, বাসার মাটির নিচে গুপ্তধন রয়েছে বলে এলাকার লোকজন গুঞ্জন ছড়িয়েছে। এ কারণে বাড়িটির সামনে প্রতিদিন লোকজন ভিড় করছেন। যেকোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
বাড়িটি খননে কোনো আপত্তি নেই। খননের খরচও বহন করবেন জানিয়ে মনিরুল বলেন, যদি সত্যি সত্যি গুপ্তধন পাওয়া যায়, তাহলে তা বেওয়ারিশ সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে। এ ছাড়া বিধি মোতাবেক তা সরকারি কোষাগারে জমা হবে।
জিডির কথা উল্লেখ করে পুলিশের পক্ষ থেকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়।
বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ সদরের বাসিন্দা তৈয়ব নামে এক ব্যক্তি মিরপুর থানায় আরও একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। তিনিও ওই বাড়িতে গুপ্তধন থাকার কথা জানান।
এই ডায়েরিতে বলা হয়, বাড়ির মূল মালিক দিলশাদ খান। তিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তান চলে যান। দিলশানের দূরসম্পর্কের আত্মীয় সৈয়দ আলম তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আলমও পাকিস্তানে থাকেন। মাঝে মধ্যে দেশে আসেন। বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। আলম তাকে তথ্য দেন, মিরপুরের ওই বাড়িটির নিচে দুই মণের বেশি স্বর্ণালঙ্কার ও দামি জিনিসপত্র রয়েছে।
পাকিস্তানে থাকাকালে আলমকে ওই তথ্য দেন দিলশাদ। এরপর আলমকে নিয়ে তৈয়ব মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা এ সম্পদ দখলে নিতে টেকনাফ থেকে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় আসার পর তৈয়বকে আড়ালে রেখে গোপনে বাড়িটির বর্তমান মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আলম। তারা মাটির নিচের সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করেন।
বিষয়টি টের টেয়ে তিনি মনিরুল পূর্ব পরিচিত রাবেয়া চৌধুরী নামে এক নারীকে নিয়ে থানায় যান। তারা বিষয়টি জানিয়ে জিডি করার সিদ্ধান্ত নেন।
ঢাকাটাইমস/
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন