ময়মনসিংহের ফুলপুরে কংশ নদীর ভাঙনে ডেফুলিয়া বাঁশতলা উচ্চ বিদ্যালয় ও ময়েজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়সহ হুমকিরমুখে শতাধিক পরিবার। ঠাকুরবাখাই বাজার সংলগ্ন কংশপাড়, কেন্তার ডোবা, শিলপুর লুৎফর মেম্বারের বাড়ি সংলগ্ন বড়বাখাই, বাতিকুড়া গ্রামের কয়েক স্থানে ও বাখাইয়ের পুবের মাথার শহর আলীর বাড়ি থেকে শাহেদ আলীর বাড়ি পর্যন্ত কংশের ভাঙন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
ভাঙন আতঙ্কে ওইসব এলাকার মানুষের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। বাতিকুড়া গ্রামের শাহেদ আলী জানান, ‘রাইত অইলে হুত-তারি না। হজাগ তাহন লাগে। পানির অড়অড় শব্দে একটু হ ঘুম অয় না। হডাৎ কইরা কইলজার মধ্যে চেৎ কইরা উডে। মনে অয় এই যেন ঘর ভাইঙা পইরা যাইতাছে।
ঠাকুর বাখাইয়ের সমলা খাতুন বলেন, 'দুই বছরের মধ্যে তিনবার ঘর সরাইছি। অহন হিরাবার নদীর মধ্যে ঘর পইরা যাইতাছে। আমরা কোন টেহা পইসা চাই না। আমরা মাইনষের বাড়িত কাম কইরা খামু। তবু নদীর ভাঙন থাইক্যা আমরারে বাঁচাইন। '
শুধু ঘর নয় কংশপাড়ে অবস্থিত বাখাই ময়েজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, ডেফুলিয়া বাঁশতলা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঠাকুরবাখাই মসজিদ-মাদরাসা, বাজার ও মিল ফ্যাক্টরীসহ বাড়িঘর রক্ষার দাবি নিয়ে গত বছর বাখাই গ্রামের প্রায় একশত নারী-পুরুষ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরীর নিকট যান। পরে তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বাস দিলেও সামান্য কিছু অনুদান ব্যতিত এ পর্যন্ত নদী ভাঙন ফেরানোর কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
সরেজমিন ওইসব এলাকায় দেখা যায়, একরের পর এক জমি কংশের বুকে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আর গাছ গাছালী ও বসতঘরের নিচের মাটি পানির স্রোতের তোড়ে হারিয়ে যাচ্ছে। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন কংশপাড়ের মানুষ। অনেকে বাড়িঘর হারিয়ে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন।
ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এটি মূলত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ। এ নিয়ে আমি অনেক দৌঁড়াদৌঁড়ি করেছি কিন্তু কোন কাজ হয়নি। সরচাপুর বধ্যভূমি রক্ষার কাজটি শুরু করলেও এক বছরেও তা শেষ করা হয়নি। কংশের ভাঙনে শত শত পরিবার নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। ভাঙন এলাকায় গেলে তাদের কান্নায় বুক ফেটে যায়। জরুরী ভিত্তিতে এসব ভাঙন রোধ করতে না পারলে ডেফুলিয়া বাঁশতলা উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অচিরেই কংশের বুকে বিলীন হয়ে যাবে আরো শতাধিক ঘরবাড়ি ও স্থাপনা।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী অপু দাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি ভাঙন এলাকা শিগগিরই পরিদর্শনের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, বাজেট নেই। আমরা আবেদন পাঠিয়েছি। বাজেট পেলেই ব্যবস্থা নিব।
বিডি প্রতিদিন
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন