ছোট বেলায় গুপ্তধনের গল্প প্রায় আমরা প্রায় সবাই শুনেছি। কিন্তু ২০১৮ সালে এসেও যে বাংলাদেশে গুপ্তধন পাওয়া যাবে এটা অবশ্য অবিশ্বাস্য ব্যাপার। তবে হ্যাঁ সত্যিই রাজধানীর মিরপুরের পুরাতন একটি বাড়িতে গুপ্তধনের সন্ধান পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, এখানে ২ মণেরও বেশি স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে।
মিরপুর মডেল থানায় দায়েরকৃত একটি সাধারণ ডায়েরিকে (জিডি) কেন্দ্র করে গুপ্তধনের খোঁজে নেমে পড়েছে প্রশাসন। ঘরের মেঝেতে কোথা থেকে কীভাবে আসলো এই গুপ্তধন? কোন বিশ্বাসে প্রশাসন এভাবে গুপ্তধন খুঁজছে? সত্যিই কি গুপ্তধন আছে? নাকি অন্য কিছু?
শনিবার (২১ জুলাই) ঢাকা জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ারুজ্জামানের উপস্থিতিতে একতলা ওই বাড়িতে গুপ্তধন রয়েছে এমন সন্দেহে ২০ জন শ্রমিক খননকাজ শুরু করেন। সকালে শুরু হওয়া এ অভিযান বিকেল পৌনে চারটার দিকে স্থগিত করা হয়।
আজ রবিবার (২২ জুলাই) স্থগিত হওয়া খননকাজ আবারও শুরু হবে বলে জানিয়েছেন মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দাদন ফকির। সকালে তিনি ব্রেকিংনিউজকে জানান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসে পৌঁছালে পুনরায় খননকাজ শুরু হবে।
দুই কাঠা জমির ওপর নির্মিত টিনশেডের ওই বাড়ির সাতটি কক্ষের মধ্যে দুটি কক্ষের প্রায় চার ফুট গভীর পর্যন্ত শাবল, কোদাল দিয়ে খনন করেন তারা। দাবি করা হয়েছিল ওই দুই কক্ষে গুপ্তধন রয়েছে। কিন্তু সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ৩টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত সাড়ে ৪ ফুট খনন কাজ চলে। গুপ্তধনের সন্ধান পেতে ১০ থেকে ১২ ফুটের মতো খনন করা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা।
স্থানীয়রা বলছেন, তারা শুধু লোক মুখে শুনেই যাচ্ছেন যে, এই বাড়িতে গুপ্তধন আছে। কিন্তু কী আছে সেটি কেউ বলতে পারে না। আসলেই কি আছে, নাকি পুরোটা গুজব?
বাড়িটির বর্তমান মালিক দাবিদার মনিরুল আলম ব্রেকিংনিউজকে গতকাল বলেছিলেন, এই খোঁড়াখুঁড়িতে যদি কোনো গুপ্তধন কিংবা স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যায়। তাহলে আমি বিধি মোতাবেক সব সরকারি বা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেবো। এমনকি খোঁড়াখুঁড়িতে যত টাকা লাগে সেটাও যদি আমাকে দিতে আমি তা দিবো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খননকাজে জড়িত একজন জানান, ‘এখানে গুপ্তধন পাওয়া যেতে পারে। কারণ কিছুদূর খুঁড়তেই আমরা পোড়ামাটি দেখতে পেয়েছি। তবে এখনও নিশ্চিত না আমি।’
মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দাদন ফকির ব্রেকিংনিউজকে জানান, ‘গত ১০ জুলাই তারিখে জনৈক আবু তৈয়ব যার বাড়ি টেকনাফের কক্সবাজারে। সে থানায় এসে একটি জিডি করেন। তিনি জিডিতে উল্লেখ করেন তার নিকট আত্মীয়রা এই বাড়িতে বসবাস করতেন। কিন্তু তারা যখন পাকিস্তান চলে যায় তখন তারা এই বাড়িতে কিছু স্বর্ণালঙ্কার রেখে যায়। এই জিডির প্রেক্ষিতে নিরাপত্তার জন্য আমরা পুলিশ মোতায়েন করি। এরপর আমরা চিঠির মাধ্যমে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে জানায়। তাদের উপস্থিতিতে গতকাল (শনিবার) খনন কাজ শুরু হয়।’
এদিকে গতকাল খননকাজ বন্ধ করার পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, বাড়ির অবকাঠামো বেশ দুর্বল। মজবুত কাঠামোর ওপর এই বাড়ির ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়নি। এখানে খননকাজ করা হলে ঘরগুলো ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আজ খননকাজ বন্ধ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, গুপ্তধন সন্ধানে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করলে কৌতূহলবশত প্রচুর মানুষ সেখানে ভিড় করে। তাদের সবার মনে প্রশ্ন আর কৌতূহল—‘মাটির নিচ থেকে কী বের হয়ে আসে? আসলেই কি মাটির নিচে কিছু গচ্ছিত আছে? ভিড় করা লোকজন এই আলোচনাতেই মশগুল হয়ে আছেন।’
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন