কতভাবেই ঘটছে ব্যাংক জালিয়াতি। কিন্তু এসবের কোনো সুরাহা হয় না। সময় গড়ালে সবই চাপা পড়ে যায়। অপরাধীরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ কারণে লেগেই আছে ব্যাংক কেলেঙ্কারী। কোনোভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না। বিগত সময়ের কেলেঙ্কারীগুলোর তদন্তে গতিপ্রকৃতি অনুসন্ধানে এ তথ্য বেরিয়ে আসে।
বিশ্লেষকরা জানান, ঘটনা ঘটার পর সঙ্গে সঙ্গে তদন্তে ঝাঁপিয়ে পড়েন সংশ্লিষ্টরা। এক সময় এর গতি হারায়। এরই মধ্যে ঘটে যায় আরেক ঘটনা। কিন্তু রহস্য আর উন্মোচিত হয় না। তাদের মতে, তাৎক্ষণিক হৈচৈ চলার সময় কিছুদিন ঘটনাগুলোর তদন্ত চলে গুরুত্ব দিয়ে। একপর্যায়ে দেখা দেয় সেই চিরাচরিত ঢিলেমি। ফলে চাপা পড়া চাঞ্চল্যকর আর্থিক কেলেঙ্কারিগুলোর কোনো সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, গত ৮ বছরের মধ্যেই ঘটেছে ৭ টি বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা। এ ৭ টিতেই ৩১ হাজার কোটি টাকার বেশি চুরি বা আত্মসাৎ করা হয়েছে। পুঁজিবাজার, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, বেসিক ব্যাংক, ডেসটিনি ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির পর যুক্ত হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা চুরির ঘটনা। সবশেষ ঘটে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত সোনার অনিয়ম ও ক্রিসেন্ট গ্রুপের আর্থিক কেলেঙ্কারীর ঘটনা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনায় সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া দরকার ছিল। তিনি বলেন, দেশের ব্যাংকগুলোকে বেশি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। বেশি নিয়ন্ত্রণ করাটা খারাপ।
সূত্র জানায়, ক্রিসেন্ট গ্রুপ ভুয়া রপ্তানির কাগজপত্র তৈরী করে জনতা ব্যাংক থেকে সরকারী নগদ সহায়তা তহবিলের ১ হাজার ৭৫ কোটি তুলে নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত ৯৬৩ কেজি স্বর্ণের বেশীরভাগ ক্ষেত্রে অনিয়মের ঘটনা ঘটে। ২০১৬ সালে বিদেশি হ্যাকাররা অ্যাকাউন্ট ‘হ্যাক’ করে ৮০০ কোটি টাকার সমমূল্যের প্রায় ১০ কোটি ডলার হাতিয়ে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে। একই বছর ৪টি বেসরকারী ব্যাংকের এটিএম কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাহকের প্রায় ২১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার তথ্য পায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখাসহ একাধিক শাখার মাধ্যমে হলমার্ক নামের ব্যবসায়ী গোষ্ঠী তুলে নেয় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আলোচনায় আসে ৫টি ব্যাংক থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া বিসমিল্লাহ গ্রুপ। হলমার্ক ও বিসমিল্লাহ কেলেঙ্কারির ডামাডোলের মধ্যেই আলোচনায় আসে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকে লুটপাটের ঘটনা। কিছু প্রতিষ্ঠান বেসিক ব্যাংক থেকে আত্মসাৎ করে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন