হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রিয়নবির একনিষ্ঠ সহচর ও প্রিয়ভাজন সাহাবি ছিলেন। তিনি এক ইয়াহুদির ক্রীতদাস ছিলেন। ইসলামের আগমনের পর প্রিয়নবির কাছে এসে নবুয়্যতের সত্যতা পরখ করেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।
হজরত সালমান ফারসির সে ঘটনা প্রিয়নবির মোহরে নবুয়্যত অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে। যেখানে বর্ণিত হয়েছে হজরত সালমান ফারসিকে মুক্ত করতে প্রিয়নবির নিজ হাতের শ্রম এবং মুজিযার ঘটনা। যে ঘটনা মুসলমানের ঈমানকে তাজা করে। আর তা ইসলামের সত্যতার এক জলন্ত দৃষ্টান্তও বটে। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু বুরায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় হিজরতের পর একবার সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু একটি পাত্রে কিছু কাঁচা খেজুর নিয়ে আসলেন এবং তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে রাখলেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘হে সালমান! এগুলো কিসের খেজুর? (অর্থাৎ হাদিয়া না সাদকা?) তিনি বললেন, ‘এগুলো আপনার ও আপনার সঙ্গীদের জন্য সাদকা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এগুলো (খেজুর) তুলে নাও। আমরা সাদকা খাই না। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি তা তুলে নিলেন।
পরের দিন তিনি অনুরূপ খেজুর নিয়ে আসলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে পেশ করলেন। তখন প্রিয়নবি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, সালমান! এসব কিসের খেজুর? সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আপনার জন্য হাদিয়া। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবাগণকে বললেন, তোমরা হাত প্রসারিত করো (হাদিয়া গ্রহণ করো)।
এরপর সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পৃষ্ঠদেশে মোহরে নবুয়্যত দেখতে পেলেন। অতঃপর ঈমান আনলেন।
[হজরত সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রিয়নবিকে ‘সাদকা ও হাদিয়া’ উপস্থাপনের মাধ্যমে পরীক্ষা করেছিলেন এবং মোহরে নবুয়্যত দেখে নিশ্চিত হয়েছিলেন।
কারণ পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবে এ সংবাদ ছিল যে, শেষ নবি ও রাসুল যিনি হবেন তিনি সাদকা গ্রহণ করবেন না এবং তাঁর পৃষ্ঠদেশে থাকবে মোহরে নবুয়্যত। আর তিনি তা পরীক্ষা করেই ইসলাম গ্রহণ করলেন।
কিন্তু হজরত সালমান তখনো এক ইয়াহুদির ক্রীতদাস। তিনি কিভাবে মুক্তি পাবেন। তাঁকে ক্রীতদাস থেকে মুক্ত করতে অনেক অর্থ ও কঠিন শর্তের মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি মুজিযা প্রকাশ পেয়েছিল আর সে ঘটনাটি এ হাদিসেই বর্ণিত হয়েছে।]
বর্ণনাকারী আবু বুরায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু এক ইয়াহুদির গোলাম ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে এত দিরহামের বিনিময়ে এবং শর্তে ক্রয় করেন যে-
‘সালমান তার ইয়াহুদি মনিবের জন্য একটি খেজুর বাগান করে দেবেন এবং তাতে ফল আসা পর্যন্ত (সে বাগানের) তত্ত্বাবধান করতে থাকবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম একটি চারা ছাড়া তাঁর নিজ হাতে সবগুলো চারা রোপন করেছিলেন। সে বছরই সব গাছে খেজুর আসল। কিন্তু একটি গাছে খেজুর আসল না।
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এ গাছটির এ অবস্থা কেন? ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! এটি আমি রোপন করেছিলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওই চারাটি ওঠিয়ে আবার রোপন করলেন। ফলে সে বছরই তাতে খেজুর আসল।’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, মুসনাদে বাযযার)
আল্লহর রহমতে বিশ্বনবির পবিত্র হাতের বরকত দীর্ঘ দিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এভাবেই দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছিলেন হজরত সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু আনহু।
হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহুর অসামান্য ত্যাগ ছিল ইসলামের জন্য। আল্লাহ তাআলা তাঁকে মুক্ত করতে প্রিয়নবির এক জলন্ত মুজিযা প্রকাশ করেছিলেন। আর তিনিও ইসলাম গ্রহণের আগে পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবের কথা সত্য কিনা তা পরখ করে দেখেছিলেন।
আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদির অন্তরে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসা বৃদ্ধি করে দিন। ইসলাম তথা কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনার তাওফিক দিন। আমিন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন