দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার মীর্জার মাঠে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি মসজিদ। এর নাম ‘আওকর মসজিদ’ অর্থাৎ কথা বলা মসজিদ।
মসজিদটির এমন নামকরণের পেছনে রয়েছে অলৌকিক একটি ইতিহাস। প্রায় ২৫০ বছরের প্রাচীন এ মসজিদটিকে ঘিরে রয়েছে নানান কথা।
লোকমুখে জানা যায়, মসজিদটির মাঝামাঝি অংশে দাঁড়িয়ে কেউ কথা বললে মসজিদটিও নাকি কথা বলতো! কথার উত্তর ভেসে আসতো! সেই থেকে মসজিদটির নাম হয় 'আওকর মসজিদ'!
এখনো মানুষ পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শব্দ করে কথা বলে প্রতিধ্বনি শোনার আশায়। কিন্তু মসজিদের দেয়াল ফেটে নষ্ট হয়ে গেছে। এর গায়েও আগাছায় ভরা। ফলে আগের মতো আর প্রতিধ্বনি শোনা যায় না।
অযত্ন আর অবহেলা এবং দীর্ঘকাল সংস্কার না হওয়ায় ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে মসজিদটি। অথচ সংস্কার করলে এটাও হতে পারে পর্যটকদের একটি বড় আকর্ষণ।
উপজেলা পরিসংখ্যানের তথ্যে পাওয়া গেছে, এ মসজিদটি ২৫২ বছর আগে ১১৭২ বঙ্গাব্দে নির্মিত। মীর্জা লাল বেগ এটি নির্মাণ করেন। চিকন ইট আর চুন-সুড়কি ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে মসজিদটি। এর দেয়ালে রয়েছে আকর্ষণীয় কারু কাজখচিত নকশা। মসজিদটি উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া বেলান নদীর পূর্ব তীরে মীর্জার মাঠে অবস্থিত।
ওই এলাকার প্রবীণদের ধারণা, এক সময় মসজিদটির আশপাশে মুসলিম বসতি ছিল। যে কারণে এখানে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ব্রিটিশ সরকারের আমলে অথবা অন্য কোনো কারণে তারা মসজিদটির আশপাশ এলাকা ছেড়ে চলে যান। ফলে এটি অযত্ন-অবহেলায় পরিত্যক্ত অবস্থায় দীর্ঘকাল পড়ে থাকে। পরে সংস্কারের অভাবে ধীরে ধীরে ধ্বংস হতে থাকে মসজিদটি। তবে ওই মসজিদকে ঘিরে মীর্জার মাঠে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। যা পরে সরকারিকরণ হয়। এ ছাড়াও একই স্থানে এলাকাবাসীর উদ্যোগে ‘মীর্জার মাঠ আওকর মসজিদ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ নামে আরো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়।
ওই এলাকার একাধিক প্রবীণ ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করেও মসজিদটিতে সর্বশেষ কত সালে নামাজ আদায় হয়েছে তা জানা যায়নি।
তবে মীর্জা লাল বেগের ওই মাঠে এখন জমজমাট দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফলে রয়েছে মানুষের আসা-যাওয়া। বাসিন্দারাও বেশিরভাগ মুসলমান। কিন্তু উপজেলার একমাত্র ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ‘আওকর মসজিদ’ রক্ষায় এগিয়ে আসেনি সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান। ধর্মভীরু মুসলিম বিত্তশালীদের কেউও এর প্রতি দৃষ্টিপাত করছেন না। ফলে মসজিদটির যে অংশটুকু এখনো অবশিষ্ট রয়েছে তাও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
তাই এলাকাবাসীর দাবি, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কিংবা সরকারি কোনো বিভাগ যদি পদক্ষেপ নিয়ে মসজিদটির সংস্কার করে তাহলে এটি হতে পারে দেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন