তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে রাজি নয় সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কারে গঠিত কমিটি। শুরুতে সংস্কার প্রস্তাবনা তৈরিতে মাত্র ১৫ দিন সময় নেয়া ঠিক হয়নি বলে মনে করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব গঠিত কমিটির মুখপাত্র আবুল কাশেম মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। নতুন করে সময় বাড়িয়ে নেয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
কোটা সংস্কারে গঠিত কমিটির সদস্য সচিব সরকারের এ কর্মকর্তা বলেন, প্রয়োজনীয় সময় বাড়িয়ে নিয়ে উপযুক্ত একটি প্রস্তাবনা তৈরি করা হবে যাতে কোনো পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
কোটা সংস্কারে গঠিত কমিটি অনুমোদনের পর প্রজ্ঞাপন জারি হয় গত ২ জুলাই। এর পর ছয় দিনের মাথায় মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে ওই কমিটি একটি সভা করে। সেই সভায় গৃহীত হয় বেশকিছু সিদ্ধান্ত।
ওই বৈঠক শেষে কমিটির মুখপাত্র আবুল কাশেম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, কোটা সংস্কার সংক্রান্ত যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেটির আজ প্রথম মিটিং। মিটিংয়ে মূলত এই কমিটির কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই কর্মপন্থার প্রথম ধাপ হচ্ছে- কোটা সংক্রান্ত দেশে-বিদেশে যে তথ্য রয়েছে বা আমাদের বিভিন্ন সময়ে গঠিত কমিশন বা কমিটির যে প্রতিবেদন রয়েছে তা যত দ্রুত সংগ্রহ করা।
সরকারের এই কর্মকর্তা ওইদিন আরও বলেছিলেন, এই প্রতিবেদন বা তথ্য প্রাপ্তির পর কমিটি দ্বিতীয় মিটিংয়ে বসবে। আমরা চেষ্টা করছি। এই মুহূর্তে আমাদের কর্মপরিধি দেয়া রয়েছে ১৫ দিন। আমরা ১৫ দিনের মধ্যেই একটি প্রস্তাবনা তৈরির চেষ্টা করব।
কোটা সংস্কার কমিটির কাজের অগ্রগতি জানতে চাইলে আবুল কাশেম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আমাদের আরও সময় লাগবে। একাজে ১৫ দিন সময় চাওয়া আসলেই কম হয়ে গেছে। এটা নিয়ে আমরা কেবিনেট সেক্রেটারি স্যারের সাথে আলোচনা করব। তিনি হয়তো প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলে কমিটির কাজের জন্য আরও সময় চাইবেন।’
গত ১২ কর্মদিবসে কতটুকু কাজ হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা বেসিক বেশকিছু তথ্য সংগ্রহ করেছি। দেশ-বিদেশ থেকে আমরা কোটা সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু পেপারস সংগ্রহের চেষ্টা করেছি। তবে আরও কিছু তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। এরপর আমরা হয়তো দু-চার দিনের মধ্যে বসব।’
কমিটির মুখপাত্র বলেন, বর্তমানে কেবিনেট সেক্রেটারি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তিনি আসলে মিটিং হবে। মিটিংয়ের পর আমরা বলতে পারব- আমাদের আরও কতদিনের সময় নিতে হবে। তবে তা কতদিন বর্ধিত করা হবে তা এখনই পরিষ্কার করে বলা মুশকিল।
নতুন করে ৯০ দিন পর্যন্ত সময় চাইতে পারে কমিটি- একাধিক সংবাদমাধ্যমের এমন প্রতিবেদনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এই যুগ্ম-সচিব বলেন, ‘শুরুতে যেখানে ১৫ দিন সময় নেয়া হয়েছে, এখন সেটা বাড়িয়ে এক সপ্তাহ বা সর্বোচ্চ একমাস নেয়া হতে পারে। কিন্তু তিনমাস সময় চাওয়া হতে পারে বলে মনে করি না।’
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যাতে কোনো ধরনের পরিবর্তন আনা না হয় সেজন্য সব ধরনের চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, আমরা গত ২০১২ সালে প্রথম আদালতের নির্দেশনা পাই মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিষয়ে। এরপর ২০১৫ সালে দ্বিতীয় দফায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের সরকারি চাকুরিতে কোটা বিষয়ে পরিষ্কার রায় দিয়েছেন। আদালতে রায় অনুসারেই এতোদিন কোটা পদ্ধতি পরিচালিত হয়ে আসছে। ফলে এ বিষয়ে ভিন্ন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গেলে অবশ্যই আদালতের নির্দেশনার পরিপন্থি কোনো কিছু করার সুযোগ নেই।
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা সুফি আবদুল্লাহিল মারুফ পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের সরকারি চাকুরিতে কোটা বিষয়ে বিগত সময়ে পাওয়া আদালতের দুটি রায় আমরা বাংলায় অনুবাদ করে সামনে এনেছি। এবিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী নিজেও পরিষ্কার বলে দিয়েছেন। আমরা আশা করব- মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়ে কোনো ভিন্ন সিদ্ধান্ত আসবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেছেন, কোটা সংস্কারে গঠিত কমিটিকে দেয়া ১৫ কর্মদিবস প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি এখন অত্যন্ত স্পর্শকাতর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে এ বিষয়ে উপযুক্ত প্রস্তাবনা তৈরি করতে আরও প্রয়োজনীয় সময় নিতে পারে এই কমিটি।
তিনি বলেন, এটা দ্রুত সমাধানে প্রধানমন্ত্রী নিজেও খুবই আন্তরিক। এটা নিয়ে তড়িঘড়ি করলে চলবে না। বিষয়টি তো এমন নয় যে আজ একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, কিছুদিন পরে আরেকটি সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। ফলে যেই সিদ্ধান্ত নেয়া হোক না কেন তা যেন যুগোপযোগী হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী সোমবার এই কমিটি আবারো বৈঠকে বসতে পারে। সেখানে সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এরপর একটি প্রস্তাবনা তৈরি করা হবে। তবে যেই প্রস্তাবনা তৈরি করা হোক না কেন তা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশনার সাথে সমন্বয় রেখেই করা হবে।
কমিটি কী ধরনের প্রস্তাবনা তৈরি করতে যাচ্ছে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, দেখুন একটা কিছু হবে। একেবারেই অপরিবর্তিত থাকবে তা হয়তো হবে না। যেহেতু কোটা সংস্কারের একটা দাবি উঠেছে, ফলে একটা কিছুতো হবেই।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কারে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো- কোটা সংস্কার করে ৫৬ থেকে ১০ শতাংশে কমিয়ে আনা, কোটা প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া, চাকরি নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেয়া এবং চাকরি ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন কাট মার্ক ও বয়সসীমা নির্ধারণ করা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন