ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের ভূমিকা ও পরিণতি নিয়ে পশ্চিমারা যে অভিমত ছড়িয়ে দিচ্ছে, এর বিপরীত চিত্র উঠে এসেছে রুশ নাগরিকদের ওপর পরিচালিত এক জনমত জরিপে। আগের থেকে ভ্লাদিমির পুতিন রুশদের কাছে আরও বেশি জনপ্রিয় বলে দেখা গেছে।
রুশ বার্তা সংস্থা তাস গতকাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এক সপ্তাহে পুতিনের জনপ্রিয়তা ০.৭ শতাংশ বেড়েছে। সর্ব-রুশ জনমত গবেষণা কেন্দ্র শুক্রবার তাদের জরিপের ফল প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, শতকরা ৭৯.২ ভাগ রুশ নাগরিক পুতিনের পক্ষে।
জরিপটি ২৩-২৯ জানুয়ারি পরিচালিত হয়। এতে অংশ নেয় এক হাজার ছয়শ রুশ, যাদের বয়স আঠারো বছরের বেশি।
জরিপ সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ভøাদিমির পুতিনের ওপর কতটুকু আস্থা আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে ৭৯.২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী ইতিবাচক উত্তর করেছেন।’ পুতিনের কাজে সন্তুষ্ট ৭৫.৭ শতাংশ রুশ, যা আগের সপ্তাহের থেকে ০.২ শতাংশ বেশি।
জরিপে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিনের গ্রহণযোগ্যতাও বেড়েছে, তার কাজের প্রতি রায় আছে ৫৩.৫ শতাংশ মানুষের, আর তার প্রতি আস্থা অটুট আছে ৬২.৫ শতাংশ মানুষের। দুই ক্ষেত্রেই তিনি আগের সপ্তাহ থেকে বেশি পয়েন্ট পেয়েছেন। এছাড়া রাশিয়ার সরকারের কাজে সন্তুষ্ট ৫০.৮ শতাংশ মানুষ।
রাশিয়াই জিতবে
স্তালিনগ্রাদ যুদ্ধ শেষের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে পুতিন বলেছেন, ৮০ বছর পর রাশিয়া আবার জার্মানির ট্যাংকের মুখোমুখি হচ্ছে। তার ভাষায়, ‘ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে। এটা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। জার্মানির লেপার্ড ট্যাংকের মাধ্যমে আবার রাশিয়াকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’ কিন্তু তিনি বলেন, এ যুদ্ধে রাশিয়াই জিতবে।
ভাষণে পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যারা যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়াকে হারানোর আশা করছে, তারা হয়তো জানে না, রাশিয়ার সঙ্গে আধুনিক যুগের যুদ্ধ তাদের জন্য অনেক ভিন্ন হবে। আমরা আমাদের ট্যাংকগুলো তাদের সীমান্তে পাঠাচ্ছি না। তবে জবাব দেওয়ার জন্য আমাদের হাতে আরও উপায় আছে। আমরা শুধু সাঁজোয়া যুদ্ধাস্ত্রগুলো ব্যবহারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকব না। এটা সবার বোঝা উচিত।’
পুতিনের এই বক্তব্য সম্পর্কে সাংবাদিকেরা জানতে চেয়েছিলেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভের কাছে। তবে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি। এটুকু বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলো যেহেতু একত্রিত হয়ে ইউক্রেনকে নতুন নতুন অস্ত্র দিচ্ছে, তাই এর জবাবে রাশিয়া নিজেদের শক্তিশালী অস্ত্রগুলোর সর্বোচ্চ কাজে লাগাবে।
৮০ বছর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের স্তালিনগ্রাদে জার্মান নাৎসি সেনাদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন সোভিয়েত সেনারা। ওই স্তালিনগ্রাদ যুদ্ধে প্রায় ৯১ হাজার জার্মান সেনাকে আটক করেছিল সোভিয়েত বাহিনী। স্তালিনগ্রাদের বর্তমান নাম ভলগোগ্রাদ।
কিয়েভে ইইউ ‘সম্মেলন’
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে গতকাল ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা দেশটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ বৈঠককে তারা ইইউর সম্মেলন বলে অভিহিত করেছেন। যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনের সঙ্গে ইইউর এটিই প্রথম সম্মেলন।
ভলোদিমির জেলেনস্কি মিত্র নেতাদের কাছে আরও বেশি যুদ্ধাস্ত্র, বিশেষ করে দূরপাল্লার আক্রমণকারী ক্ষেপণাস্ত্র চেয়েছেন। তবে ইইউ এখনো এমন অস্ত্র দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়নি। এমনকি দ্য গার্ডিয়ান গতকাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এ বৈঠকে ইইউ নেতারা একদিকে জেলেনস্কিকে বোঝাবেন যে, এখনই সদস্যপদ পাচ্ছে না তার দেশ। অন্যদিকে তাকে মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও শক্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও প্রতিরক্ষার জন্য আরও আধুনিক ট্যাংক দেওয়ার ব্যাপারটি আলোচনা করবেন।
দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, জার্মান সরকার এরই মধ্যে ৮৮টি লেপার্ড ১ ট্যাংক ইউক্রেনে পাঠানোর অনুমোদন দিয়েছে। আর আগে জানুয়ারিতে ১৪টি লেপার্ড ২ ট্যাংক পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল দেশটি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন