বিরোধী দল আন্দোলন বেগবান করতে চাচ্ছে, ধাপে ধাপে আন্দোলনকে এগিয়ে যাচ্ছে। সামনে অক্টোবর-নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরে আন্দোলনকে তারা একটা চূড়ান্ত রূপ দিতে চায়। এই সময় আন্দোলন আরও মারমুখী হয়ে উঠবে বলেই বিএনপি নেতৃবৃন্দরা জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে বিএনপির নেতারা কর্মসূচিতে রড-লাঠিসোটা নিয়ে আসার জন্য কর্মীদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। বিএনপি নেতারা বলছেন যে, বিএনপির সমাবেশগুলোতে এখন কর্মীদের সংখ্যা বাড়ছে, উৎসাহ-উদ্দীপনাও বাড়ছে। বিএনপি নেতৃবৃন্দ আগামী ডিসেম্বর মাসকে টার্গেট ধরে এগুচ্ছেন। সেই ডিসেম্বরে আন্দোলনের একটি চূড়ান্ত রূপ দিতে পারে। এবার বিএনপির আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য হল ঢাকা দখল। ঢাকা শহরকে ঘিরে বিএনপি সমস্ত কর্মসূচি করছে। আর তাই যেখানেই যে ঘটনাগুলো ঘটছে তার প্রতিবাদ কর্মসূচি ঢাকায় করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঢাকাতে ১৭টি এলাকা বিভক্ত করেছে বিএনপি এবং ১৭টি এলাকাতেই বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি আগামী তিন মাস রাখার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বিএনপি যখন এই আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণ করেছে তখন আওয়ামী লীগও বসে নেই। আওয়ামী লীগের এখন মূল চিন্তা দলের কাউন্সিল অধিবেশন। আওয়ামী লীগ বলছে যে, বিরোধী দলের যেকোনো আন্দোলনের কর্মসূচি মোকাবেলা করার মত সক্ষমতা আওয়ামী লীগের আছে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি এখন অনেক বেশি। ঢাকা মহানগরীতে আওয়ামী লীগ ইউনিট পর্যায় পর্যন্ত কমিটি গঠন করেছে। এই বাস্তবতায় বিএনপির আন্দোলন নিয়ে তারা খুব একটা বিচলিত নয়। তবে আন্দোলন নিয়ে বিচলিত হোক না হোক বিএনপির আন্দোলনকে সামাল দিতে পারে এমন যোগ্য নেতা এখন খোঁজা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের ডিসেম্বরের যে কাউন্সিল অধিবেশন হচ্ছে সে কাউন্সিল অধিবেশনে নির্বাচন যেমন মাথায় থাকবে তেমনি মাথায় থাকবে বিএনপির আন্দোলনও। এমন একজন ব্যক্তিকে তারা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করতে চায় যে ব্যক্তির সঙ্গে কর্মীদের সুনির্দিষ্ট যোগাযোগ আছে, কর্মীবান্ধব এবং কর্মীদেরকে উদ্বেলিত করতে পারবে। আওয়ামী লীগ মনে করছে যে, নির্বাচন এবং আন্দোলন -দুটি ক্ষেত্রেই প্রয়োজন হলো শক্তিশালী সংগঠন এবং সাংগঠনিক দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা। আর এই বিবেচনায় থেকে যারা মাঠের রাজনীতি করছে তাদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিবেচনাটি সামনে এসেছে। আওয়ামী লীগের মধ্যে আগে একটি ধারণা ছিল যে, দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকেই হয়তো আবার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করা হতে পারে। কিন্তু যতই আন্দোলন এবং নির্বাচন নিয়ে জটিলতা হচ্ছে ততই তৃতীয় দফায় ওবায়দুল কাদেরের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে। কারণ, ওবায়দুল কাদের অসুস্থ এবং গত দুই মেয়াদে তিনি সারাদেশে যে সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক তা বিস্তৃত করতে পারেনি। এমনকি আওয়ামী লীগের যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, তা মেটানোর ক্ষেত্রেও তিনি সফল হননি বলে অনেকে মনে করছেন।
সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ড. রাজ্জাকের মধ্যে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির কথাও আলোচিত হচ্ছিলো। কিন্তু ড. রাজ্জাক প্রকৃচি থেকে আসা একজন নেতা। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বিষয়ে তার খুব একটা দক্ষতা নেই এবং তিনি মাঠের রাজনীতির সঙ্গে কখনোই সম্পৃক্ত ছিলেন না। এ কারণে ড. রাজ্জাকও ক্রমশ বাস্তব রাজনৈতিক মেরুকরণে পিছিয়ে পড়ছেন বলে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে। এছাড়াও ড. হাছান মাহমুদ বা ডা. দীপু মনির মত নেতারা, যারা রাজপথে আন্দোলনের ক্ষেত্রে কখনোই পরীক্ষিত নন তারা হিসেবের তালিকা থেকে ক্রমশ বাদ পড়তে যাচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্রগুলো মনে করছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগকে একটি বড় ধরনের আন্দোলন মোকাবেলা করতে হবে। এ কারণে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে এবং তৃণমূলকে জাগাতে হবে। আর সেরকম বিবেচনা থেকে যারা মাঠ থেকে উঠে আসা নেতা তারাই গুরুত্ব পাচ্ছেন। সে বিবেচনায় জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের মত নেতারাই সামনে চলে আসছেন। তবে শেষ পর্যন্ত ডিসেম্বরের কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কে হবেন, তা নির্ধারণ করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন