বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ছোড়া একটি গোলা এসে পড়েছে উখিয়া সীমান্তের নাফনদ তীরের আনজুমানপাড়া ওয়াকফ স্টেটের ধানক্ষেতে। এতে অল্পের জন্য রক্ষা পান এক কৃষক। মিয়ানমার সীমান্তে এই গোলাগুলি ও বিস্ফোরণ অব্যাহত রয়েছে। গতকালও সীমান্তের নাইক্ষ্যংছড়ি অংশের তুমব্রু ও ঘুমধুম এবং কক্সবাজারের উখিয়ার আনজুমানপাড়া পয়েন্টে মুহূর্মুহু গোলাগুলি এবং মর্টারশেলের শব্দে কেঁপেছে সীমান্ত এলাকা।
অব্যাহত গোলাগুলি এবং মর্টারশেলের ভয়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির পাহাড়ি জনপদের সীমান্ত এবং কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
গতকাল দুপুরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সীমান্তে যাওয়ার পথে এই সাংবাদিকের গাড়িটি আটকে দেওয়া হয় ঘুমধুম ইউনিয়নের বেতবুনিয়া বাজার সংলগ্ন বিজিবি ক্যাম্পে। কর্তব্যরত বিজিবির দুই সদস্যদের পরিচয় দিয়ে সীমান্তে যাবার প্রয়োজনের কথা জানালে তাদের একজন তাৎক্ষণিক ৩৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সুবেদার শহিদুল্লাহর কাছে ওয়াকিটকির সাহায্যে অনুমতি চাইলেন। জবাবে ওয়াকিটকিতে (কথোপকথন সবাই শুনতে পাচ্ছিলেন) বিজিবির সুবেদার জানালেন, ‘ওখানে যাওয়া দরকার হলে আগে গাড়িটি বুলেটপ্রুফ করিয়ে নিতে বলেন। অন্যথায় ওনার দায়-দায়িত্ব আমরা নিতে পারব না। ’ এমন অবস্থায় গ্রাম পুলিশ আবদুর রহিমও জানালেন ওদিকে না যেতে।
বিজিবির বাধা পেয়ে যেতে হলো হাইওয়ে সড়ক দিয়ে ঘুমধুম বিজিবির অপর পয়েন্টে। সেখানে অবস্থানকারী ঘুমধুম বিজিবি ক্যাম্পের কর্তব্যরত সদস্যরা দক্ষিণ দিকের ‘লাল ব্রিজ’ এলাকায় যেতে বাধা দিলেন। সদ্যনির্মিত এশিয়া হাইওয়ে সড়কের মিলনস্থলটি হচ্ছে সেই লাল ব্রিজের সাথে। এই লাল ব্রিজটিই হচ্ছে মিয়ানমার-বাংলাদেশের মধ্যকার যোগাযোগের সেতুবন্ধন। অথচ সেই সেতুটি এখন নিরব-নিথর দাঁড়িয়ে রয়েছে। আশপাশের বাড়ি-ঘরের কোনো লোকজনেরও দেখা মিলছে না। যে যার মতো করেই সময় কাটাচ্ছে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার (সদস্য) আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ‘এশিয়া হাইওয়ে সড়কের শেষ প্রান্ত (লাল ব্রিজ সংলগ্ন) থেকে সোজা নাইক্ষ্যংছড়ি হয়ে জেলা সদর বান্দরবানের সাথে সংযোগ হবার কথা সীমান্ত সড়কের। সেনাবাহিনী কাজও শুরু করেছিল বেশ জোরেশোরে। কিন্তু মিয়ানমার বাহিনী আমাদের সীমান্ত এলাকায় এসে ফুটাফুটি (গোলাগুলি) করায় নিরাপত্তাহীনতার মুখে সড়ক নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ’ তিনি জানান, সীমান্ত এলাকায় গোলাগুলি শুরুর পরেও বাংলাদেশের সেনাবাহিনী কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হতে দেখে তারা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে, জানান ইউপি মেম্বার আনোয়ারুল।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডটি হচ্ছে নাফনদের তীরবর্তী এলাকা। উক্ত ওয়ার্ডেও ইউপি মেম্বার (সদস্য) জাফরুল ইসলাম বাবুল গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার এলাকার কৃষক আবু ছিদ্দিক অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। কৃষক ছিদ্দিক নাফনদ তীরে আনজুমান পাড়া ওয়াকফ স্টেটের জমিতে ধানক্ষেতের আগাছা সাফ করার সময়েই আকস্মিক একটি গোলার অংশবিশেষ এসে পড়ে ধানক্ষেতে তার পাশে। একটুর জন্য বেঁচে গেছেন। ’
ইউপি মেম্বার জানান, গতকাল সীমান্তের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ হয়েছে। উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী আনজুমান পাড়ার ধানক্ষেতে গুলি এসে পাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন