দলীয় কিংবা জাতীয় দিবসের ছলে আলো উৎসবের নামে বিদ্যুতের অপচয় নিয়মিত করেছে ভোট চুরি করে ক্ষমতা ধরে রাখা আওয়ামী লীগ। হরেক রকম উৎসবের নামে লুটপাট ও বিদ্যুতের লাগামহীন অপচয় হলেও, এখন জনগণকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার সবক দিচ্ছেন তারা।
এদিকে বিদ্যুতের বর্তমান এই সঙ্কটে উন্নয়নের মিথ্যা বুলি প্রকাশ হয়ে পড়েছে। লোডশেডিংয়ের এই যন্ত্রণায় বিদ্যুৎ খাতে সীমাহীন দুর্নীতির বিষয়টিও মানুষের সামনে এখন স্পষ্ট। শেখ হাসিনা সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ২০১০ সালে বিদ্যুৎ খাতে ইনডেমনিটি দিয়ে দুর্নীতি লুটপাট করছে। উন্নয়নের জয়ধ্বনি দেওয়া হলেও বিদ্যুৎ নিয়ে মানুষ এখন চরম ভোগান্তিতে রয়েছে। দফায়-দফায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হলেও গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে লোডশেডিংয়ে। শেখ হাসিনা সরকারের দুর্নীতির দায় বিদ্যুৎ-গ্যাসের বাড়তি মূল্য দিয়ে মিটাচ্ছে দেশের মানুষ।
গত কয়েকদিন ধরে তীব্র গরমের মাঝে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিংয়ের ভয়াবহ যন্ত্রণা সইতে হচ্ছে। গ্রাম-গঞ্জে দিনভর থাকছে না বিদ্যুৎ। কারখানাগুলোতেও ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। এই সঙ্কট যে সহসাই কাটিয়ে উঠা সম্ভব নয় তাও প্রকাশ পাচ্ছে ফ্যাসিবাদি শেখ হাসিনার মন্ত্রীদের কথা-বার্তায়।
সরকারি হিসাবে লোডশেডিং সাড়ে ১২শ মেগাওয়াট বলা হচ্ছে। বাস্তবে এটি আড়াই হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে বলে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো সূত্রে জানা গেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩৫০০ মেগাওয়াট কমে যাওয়ায় শিল্পকারখানা ও আবাসিকে লোডশেডিংয়ে নাভিশ্বাস উঠছে।
অথচ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে খোদ নসরুল হামিদ বিপুর বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে। আইন লঙ্ঘন করে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নিজেই। মাতারবাড়ী এলপিজি টার্মিনাল প্রকল্পে এই প্রতিমন্ত্রীর দুর্নীতির খবর এরই মধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
তবে, গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ করতে ব্যাপকভাবে টাকা ঢেলেছেন রাজধানী ঢাকায় কর্মরত সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)-তে। সাংবাদিকদের এই সংগঠনের ভবন গড়তে অনুদান দেয়ার পর তার নামেই একটি মিলনায়তনের নামকরণ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের দালালে পরিণত হওয়া বেশিরভাগ সাংবাদিক এই প্রতিমন্ত্রী ও তার মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি নিয়ে সবসময়ই মৌনতা অবলম্বন করে আসছে।
নিজেদের অযোগ্যতা আড়াল করতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বর্তমান বিদ্যুৎ পরিস্থিতির জন্য দায়ী করছেন বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যকার যুদ্ধকে। এজন্য তিনি জনগণকে গ্যাস-বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হবার জ্ঞানও দিচ্ছেন। গত ৭ এপ্রিল তাঁর ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে এক স্ট্যাটাসে বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার এই সবক দিয়েছেন।
এদিকে ৫ জুলাই (মঙ্গলবার) শেখ হাসিনা এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
অপরদিকে নিজেদের দুর্নীতি ও অযোগ্যতা ঢাকতে এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর প্রভাব সব জায়গায় পড়েছে। কোভিডের ধাক্কা যখন সবাই কাটিয়ে উঠছিল তখনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি সারা বিশ্বকেই গভীর এক সংকটে ফেলেছে। এই সংকট শুধু উন্নয়নশীল দেশেই না, অনেক উন্নত দেশেও এর আঁচ লেগেছে। যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানি মার্কেট চরম অস্থিতিশীল করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক খাদ্য পণ্যের বাজারও বেসামাল। বৈশ্বিক এই সংকট আমাদেরকেও বিপদে ফেলে দিয়েছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সংকটের বিষয়ে নসরুল হামিদ বলেছেন, আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ১৬০০-১৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন। সেখানে আমরা দিতে পারছি মাত্র ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এর বেশি গ্যাস আমরা দিতে পারছি না। কারণ আমাদের অগ্রাধিকার দিতে হচ্ছে কৃষি ও শিল্পখাতকে। কৃষির জন্য সার অপরিহার্য। সার উৎপাদনেও আমাদেরকে অনেক পরিমাণ গ্যাস দিতে হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের উৎপাদন ২৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদার বাকি বৃহৎ অংশ এলএনজি আমদানি করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সময়ও গ্যাসের উৎপাদন ছিল মাত্র দৈনিক ১৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট। সেখান থেকে আমরা উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়েছিলাম দৈনিক ২৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত। ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমরা এ সক্ষমতায় গ্যাস উৎপাদন করেছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের নিজস্ব গ্যাস উৎপাদন কমতে শুরু করেছে, আমাদের খনিগুলোর রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন