ক্ষুধার জ্বালায় কান্নারত শিশুকে গলাটিপে হত্যা করেছে অভাবের তাড়নায় অতীষ্ঠ এক মা। অভাবের তাড়নায় এতটাই হতাশাগ্রস্ত ছিলেন যে, তাঁর আপন সন্তানকে গলাটিপে হত্যা করলেন। এমন ঘটনাই মঙ্গলবার (৫ জুলাই) ঘটেছে নারায়নগঞ্জের ফতুল্লায়। অথচ, জুন মাসে শুধু পদ্মা সেতুর জয়গান ও উন্নয়নের গল্প শুনতে শুনতে মানুষের কান ঝালাপালা করছে। যতই পদ্মা সেতু আর মেগা প্রজেক্টের মেগা দুর্নীতির উন্নয়ন হউক, মানুষের মৌলিক অধিকার অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান ও চিকিৎসার নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে, এটারই সর্বশেষ প্রমান নারায়নগঞ্জের ফতুল্লার এই ঘটনা।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় আড়াই বছর বয়সী মেয়েকে গলা টিপে হত্যায় মা শারমিন আক্তারকে (২২) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হয়ত এখন তাঁর কপালে জুটবে প্রথমে রিমান্ড এবং কারাগার। কারা প্রকোষ্ঠে তাঁকে নিজের খাবার নিয়ে হয়ত: আর চিন্তা করতে হবে না। তবে সন্তান হারানো মাকে কি জবাব দেবে রাষ্ট্র? শুধু কি এই শারিমনের ঘটনাই ঘটেছে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসা দেশটিতে? প্রতি মাসেই ক্ষুধার জ্বালা ও অভাবের তাড়নায় আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর দেশে!
নারায়নগঞ্জের ঘটনায় হতভাগ্য মা শারমিন পুলিশকে জানিয়েছে, ২০১৯ সালে ফতুল্লার পাগলা এলাকার শাকিল নামে একজনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের সংসারে জন্ম নেয় জান্নাতুল। মেয়ের বয়স যখন ছয় মাস, তখন মা-মেয়েকে ফেলে আবার বিয়ে করে অন্য জায়গায় চলে যায় শাকিল। শারমিন ও মেয়ে জান্নাতুলের খোঁজ নিত না সে। এরপর মেয়েকে নিয়ে শারমিন তার বাবার বাড়িতে থাকতেন। মা-বাবাও তাকে বকাঝকা করতেন। ঠিকমতো খেতে দিতেন না। শিশুটিও ক্ষুধার যন্ত্রণায় কান্না করত।
শারমিন পুলিশকে আরও জানান, ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর মেয়ে সোমবার সকালে কান্না শুরু করলে তার গলা টিপে ধরেন তিনি। একপর্যায়ে মেয়ে নড়াচড়া বন্ধ করে দিলে শারমিন তার বাবার বাসায় এসে মাকে ঘটনা জানান। তখন তার মা তাকে নিয়ে স্থানীয় ফার্মেসিতে যায়। ফার্মেসির লোকজন তাদের নারায়ণগঞ্জ দেড়শ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল পাঠান। সেখানে গেলে চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।
মাত্র ৪ দিন আগের ঘটনা। গত ১ জুলাই নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে অভাব-অনটনের তাড়নায় হেলাল উদ্দিন (৩৮) নামে এক কৃষক গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার খবর আওয়ামী মিডিয়াতেই বের হয়েছিল। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. বাহার উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল, হেলাল প্রায় নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলেন। আগে তার গরু-মহিষ ছিল। কিন্তু নদী ভাঙনের কবলে পড়ে সব শেষ। নতুন বাড়ি করলেও সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকতো। মাঝে মধ্যে না খেয়েও দিন কাটিয়েছেন। ব্যক্তি হিসেবে তিনি অন্যরকম ছিলেন। ধার দেনা করতে অপছন্দ করতেন।
২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী দালাল মিডিয়ায় প্রকাশিত আরেকটি খবরে প্রকাশিত হয়েছিল অভাবের তাড়নায় এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জয়গান নিয়ে যখন উন্নয়নের ফানুস উড়ে তখনই খবর বের হয় অভাবে তাড়নায় আত্মহত্যা করেছেন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী। ঘটনাটির খবরে বলা হয়েছিল- চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে গাছের ডালে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রশিদ আহাম্মদের স্ত্রী শামসুন্নাহার (৬০)। ১৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ধলই ইউনিয়নের মুনিয়া পুকুরপাড় এলাকায় এই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।
আওয়ামী দালাল মিডিয়া গুলোতে এই খবর গুলো প্রকাশিত হয় অত্যন্ত গুরুত্বহীনভাবে। বিপরীতে ফ্যাসিবাদি সরকারের উন্নয়নের ফানুস তারা উড়ান বেশ গুরুত্ব দিয়ে। প্রশ্ন উঠেছে, দেশ যদি এতই উন্নয়নের জোয়ারে ভাসে অভাবের তাড়না আর ক্ষুধার জ্বালায় মানুষ আত্মহত্যা করেন কেন?
উল্লেখ্য, যুগে যুগে পৃথিবীর সকল স্বৈরশাসক উন্নয়নের ধাপ্পা দিয়েই জনগণকে বোকা বানানোর চেষ্টা করেছেন। শেখ হাসিনাও গত চৌদ্দ বছর ধরে সেই পুরনো কৌশল অবলম্বন করে তার ফ্যাসিস্ট শাসন সাফল্যের সাথে চালিয়ে যাচ্ছেন। ‘উন্নয়ন নাকি গণতন্ত্র’, এই মার্কা শ্লোগান দিয়ে তিনি কেবল বাংলাদেশের জনগণের সকল অধিকারই হরণ করেন নাই, বহির্বিশ্বকেও যথেষ্ট পরিমাণে বিভ্রান্ত করেছেন। বাংলাদেশে পদ্মা সেতু নিয়ে তিন কোটি সংবাদ প্রচারের পরও হাসিনা গোষ্ঠীর আত্মপ্রশংসার খায়েশ মেটে নাই। মহা ধুমধামে উদ্বোধনের পর সেই সেতু নিয়ে গোলাম মিডিয়ার এখনকার নিউজের স্যাম্পল হলো, ‘কলকাতার প্রথম বাস সেতু পার হলো’ কিংবা ‘আজকের পদ্মা সেতুর টোলের রেকর্ড’ অথবা ‘পদ্মা সেতুর কারণে প্রায় চল্লিশটি দেশের সাথে সংযোগ সৃষ্টি হবে’, ইত্যাদি, ইত্যাদি।
এদিকে বন্যায় সিলেট, সুনামগঞ্জের কৃষক যে পথে বসেছে, অসহনীয় দ্রব্যমূল্যের চাপে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত যে ক্রমেই দিশেহারা হয়ে পড়ছে, পঞ্চাশ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভের গালগল্প যে শূন্যে মিলিয়ে গেছে সেদিকে সরকার কিংবা গোলাম মিডিয়ার কোন ভ্রুক্ষেপ নাই। অভাবের কারণে খোদ রাজধানীতে পারিবারিক কলহের জের ধরে এক মাঝবয়সী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তার স্ত্রীকে হত্যার পর নিজে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনাও প্রকাশিত হয়েছিল কিছুদিন আগে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন