আশালয় হাউজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মোহা. হিলালীকে শুক্রবার উত্তরা থেকে তুলে নেওয়ার পর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। গুমের পর চোখ বেধে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় ও সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে তাঁকে রবিবার মধ্যরাতে সাভারের হেয়াময়েতপুরে ছেড়ে দেওয়া হয়। ছেড়ে দেওয়ার সময় তাঁর চোখ বাঁধা ছিল। তাঁকে শুক্রবার রাতে উত্তরা থেকে অপহরণ করা হয়।
পরিবার ধারণা করছে র্যাব-১ এর সদস্যরা তাঁকে তুলে নিয়েছিল। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি কেনায় দুর্নীতির মামলা তাঁর নিকট থেকে জোর করে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে বলে দাবী করেন আমিন মোহাম্মদ হিলালীর ভাই রফিকুল ইসলাম।
মুক্তি পাওয়ার পর হিলালী এখন তিনি পরিবারের সঙ্গে আছেন। গুম থেকে মুক্তির পর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে অপারাগতা প্রকাশ করছেন তিনি। তবে গুমের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন তাঁর (ভুক্তভোগী) ভাই রফিকুল ইসলাম হিলালী। তিনি গণমাধ্যমে জানান, তাঁর ভাই শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ নন। কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। তবে ফিরে এসে পরিবারের সদস্যদের যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা বর্ণনা করেছেন রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আমিন মোহা. হিলালী বলেছেন শুক্রবার রাত আটটার দিকে উত্তরা থেকে অপহরণের (গুম) পর প্রায় দুই ঘণ্টা মাইক্রোবাসে করে ঘোরানো হয়। তারপর ছয়–সাত বর্গফুটের একটি কক্ষে তাঁকে রাখা হয়। সেখানে চোখ বেঁধে পাঁচ–সাত দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের বিষয় ছিল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের জন্য জমি কেনা-বেচা নিয়ে। বিক্রিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাকে কত টাকা দিয়েছেন, কীভাবে দিয়েছেন, তা জানতে চান অপহরণকারীরা। তিনি যা জানেন, তা বলেছেন। তাঁকে ঘুষের বিষয়টি স্বীকার করতে বলা হয়। তাঁর ১০ আঙুলের ছাপও নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, নর্থ সাউথের নতুন ক্যাম্পাসের জন্য নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আশালয় হাউজিং থেকে ২৫০ বিঘা জমি কেনা হয়। এর দাম ধরা হয় ৫০০ কোটি টাকা। এই জমি কেনায় বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে গত ৫ মে একটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ট্রাস্টিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে করা এ মামলায় আমিন মোহা. হিলালী ৬ নম্বর আসামি।
রফিকুল ইসলাম বলেন, এই জমি কেনাবেচায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাকে কত টাকা ঘুষ দেওয়া হয়েছে, তা স্বীকারোক্তিতে বলতে বলা হয় তাঁর ভাইকে। তখন তিনি মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। স্বীকারোক্তি নেওয়ার সময় ভিডিও ধারণা করা হয়েছিল। স্বীকারোক্তিতে ঘুষ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। এ সময় তাঁকে বলা হয়, তিনি যেন হাসিমুখে স্বাভাবিকভাবে কথা বলেন। তবে কারা তাঁকে অপহরণ ও স্বীকারোক্তি নিয়েছেন, তা তিনি বুঝতে পারেননি। আমিন মোহা. হিলালীর কাছ থেকে জোর করে কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, তাঁর ভাইকে কাগজে স্বাক্ষর করতে বলেন অপহরণকারীরা। তবে সেখানে কী লেখা ছিল, তা তিনি জানেন না। রফিকুল ইসলাম হিলালী জানান, গত শুক্রবার রাত আটটার দিকে বাসা থেকে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের অফিসের উদ্দেশে বের হয়েছিলেন আমিন মোহা. হিলালী। উত্তরার জমজম টাওয়ার থেকে ১৩ নম্বর সেক্টরের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় রাস্তায় পরপর তিনটি মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে ছিল। তিনজন তাঁকে কোলে করে একটি মাইক্রোবাসে তুলে চোখ বেঁধে ফেলেন। দুই ঘণ্টা পর ছোট্ট কক্ষে রাখা হয়।
রফিকুল ইসলাম বলেন, রোববার রাত আটটার দিকে চোখ বেঁধে মাইক্রোবাসে তোলা হয় তাঁর ভাইকে। তারপর বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে হেমায়েতপুর এলাকায় আসার পর তাঁকে মাইক্রোবাস থেকে নামান অপহরণকারীরা। তখন তাঁকে সোজা হেঁটে যেতে বলা হয়। তিনি চোখ বাঁধা অবস্থায় ধীরে ধীরে হেঁটে সামনের দিকে যান। একসময় তিনি অপহরণকারীদের কাছে জানতে চান, আরও সামনে যাবেন কি না। তখন কোনো সাড়া না পেয়ে চোখের বাঁধন খুলে দেখেন, জঙ্গলের মতো একটা স্থানে আছেন। সেখান থেকে একটু হেঁটে হেমায়েতপুরের তেঁতুলতলা এলাকার রাস্তায় যান। এক অটোরিকশাচালকের সহায়তা নিয়ে তিনি মোবাইল ফোনে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারপর পুলিশের সহায়তায় তাঁকে উদ্ধার করা হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন