প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো তালিকায় থাকা মাদক চোরাকারবারের শীর্ষ পৃষ্ঠপোষককে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী করা হয়েছে।
মাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার জিরো টলারেন্স ঘোষণা করলেও কুসিক নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া আরফানুল হক রিফাতের নাম জেলার মাদক চোরাকারবারিদের ১৬ জন পৃষ্ঠপোষকের তালিকার প্রথমে রয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেশের মাদক চোরাকারবারি, তাদের পৃষ্ঠপোষক ও এর সঙ্গে সংশ্লিস্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তালিকা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চট্টগ্রাম বিভাগের তালিকাসহ একটি চিঠি পাঠায়। চিঠিতে তালিকাটি যাচাই-বাছাইয়ের পর তালিকাভুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
গণমাধ্যমের হাতে আসা ওই তালিকায় দেখা যায়, কুমিল্লার মাদক চোরাকারবারিদের ১৬ জন পৃষ্ঠপোষকের প্রথমে রয়েছেন রিফাত। তালিকায় তাকে কুমিল্লা শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
রিফাত বর্তমানে কুমিল্লা জেলা যুবলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বর্তমানে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তিনি কুমিল্লা-৬ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এ কে এম বাহাউদ্দিন বাহারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত।
গত শুক্রবার বিকেলে গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের এক সভায় কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে রিফাতের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়। এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এমপি বাহাউদ্দিন বাহারের সভাপতিত্বে কুমিল্লা শহর আওয়ামী লীগের একটি বিশেষ বর্ধিত সভায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রিফাতকে দলীয় মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে প্রস্তাব পাঠায়।
রিফাতের ঘনিষ্ঠ সূত্র ও আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন, তিনি স্থানীয় মাদক চোরাকারবারি ও অপরাধীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন এবং মাদক চোরাকারবার থেকে কমিশন পান। তবে এ অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রিফাত অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ও দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এ বিষয়ে বলেন, রিফাত ছাত্রলীগ থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন। দল যখন সংকটে ছিল, তখন তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ নেতা।
হানিফ আরও বলেন, বিএনপি সরকার তার বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যা মামলা করেছে। আমি জানি না, ওই তালিকা তৈরির সময় ওই মামলাগুলো বিবেচনা করা হয়েছিল কি না। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে করা মাদক সংক্রান্ত কোনো তালিকায় রিফাতের নাম আছে কিনা, সে বিষয়ে কোনো ধারণা নেই বলে জানান হানিফ।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ জানান, এ ধরনের কোনো তালিকা সম্পর্কে তিনি অবগত নন। এ বিষয়ে জানতে সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহারকে ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন