অনশনরত একমাত্র ছেলে আসিফ ইকবালকে দেখতে ঢাকা থেকে ছুটে আসেন ব্যাংক কর্মকর্তা হাসিবুর রহমান। সোমবার সন্ধ্যায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েছবি: প্রথম আলো
বাবা–মাকে না জানিয়েই অনশনে বসেছেন ছেলে। দ্বিতীয় দিনেই গণমাধ্যমে ছবি দেখে তা জানতে পারেন বাবা। এরপর বার বার ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু দূর থেকে ছেলের আলাদা খবর পাচ্ছিলেন না। এর মধ্যে অনশনের ১২৩ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত ছেলের খোঁজখবর নিতে সোমবার (২৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ঢাকা থেকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটে আসেন ব্যাংক কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান।
গত বুধবার বেলা ২টা ৫০ মিনিট থেকে ২৪ শিক্ষার্থী শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন। তাঁদেরই একজন গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ ইকবাল। তাঁকে দেখতে সোমবার ছুটে আসেন বাবা হাফিজুর রহমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশনরত ছেলেকে দেখে অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় তিনি ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে ছেলের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন।
বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনা শুনে তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। শুধু অভিভাবকেরা নন, সারা জাতি উদ্বিগ্ন। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অনশনের ছয় দিন পার হয়ে গেল। এখনো তাঁরা অনশনে আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের পাঠিয়েছেন পড়াশোনার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কিংবা শিক্ষকেরা কী ভূমিকা নিলেন? বিষয়গুলো তাঁরা জানেন না। প্রশাসন ও শিক্ষকেরা প্রাথমিক পর্যায়ে জোরালো ভূমিকা নিলে বিষয়টি এ অবস্থা পর্যন্ত গড়াত না বলে মনে করেন তিনি।
ছেলের আন্দোলনে সমর্থন আছে কি না, জানতে চাইলে হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আন্দোলনে থাকলে কিছুটা ক্ষতি হবে। তবে ভালো উদ্দেশ্যে আন্দোলন হলে অবশ্যই আমার সমর্থন থাকবে। তবে বিষয়টি কী হয়েছিল? কেন হয়েছিল সে ব্যাপারে তদন্ত কিংবা এর কোনো প্রতিবেদন পাইনি। এর প্রকৃত চিত্র কী? এ পর্যায়ে গেল কেন? এটা কি কারও কাম্য?’
হাফিজুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দীর্ঘায়িত হচ্ছে, সেটি এখনই শেষ করা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পরিবেশ দ্রুত ফিরে আসুক, সেটিই আমাদের কাম্য।’
আসিফ ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন হচ্ছে সেটি পরিবারের সদস্যরা জানতেন। কিন্তু তিনি অনশনে বসেছেন, সেটি জানাননি। অনশনের দ্বিতীয় দিন গণমাধ্যমে ছবি দেখে বাবা বিষয়টি জানতে পারেন। পরে মা–ও বিষয়টি জানতে পারেন। সেটি জানার পর মা কান্নাকাটি শুরু করেন।
আসিফ ইকবাল আরও বলেন, ‘এরপরও আমি অনশন চালিয়ে যাচ্ছি। অবশেষে আজ (সোমবার) বাবা আমাকে দেখতে এসেছেন। তবে তিনি আমাকে আনশন থেকে সরে আসার জন্য বলেননি। আমি বলেছি, আমরা যৌক্তিক দাবিতেই আন্দোলন করছি।’
আসিফ জানান, অনশন শুরুর পর প্রায় ১২৩ ঘণ্টা অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে শরীর অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু মনোবল ভাঙেনি। আশা করছেন দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরতে পারবেন।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ছাত্রীদের আন্দোলনে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে ও তাঁদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন