রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের দুই আবাসিক শিক্ষার্থীকে হল থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। ওই দুই শিক্ষার্থীকে আবাসিক হলে তুলে দিয়েছিলেন ওই হলের এক আবাসিক শিক্ষক।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, তাঁর আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। তিনি ২০১৮ সালের নভেম্বরে হলের আবাসিকতা পেয়ে হলে উঠেছিলেন। কিন্তু সে সময়েও তাঁকে হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এবার করোনার পর হল খোলার দিন সকালে তাঁকে আবাসিক শিক্ষক তানজিল ভূঞা ৪৭৫ নম্বর কক্ষে তুলে দেন। সেদিন ওই হলের কিছু রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এসে তাঁকে হুমকি দিয়ে বলেন, এখানে থাকা যাবে না। তাঁদের ছেলেপেলে আছে। বিষয়টি স্যারকে জানালে তিনি অভয় দিয়ে থাকতে বলেন।
পরের দিন ওই ছাত্র কোনো একটি কাজে বাইরে গিয়েছিলেন। পরে হলে ফিরে এসে দেখেন তাঁর সবকিছু রুম থেকে বের করে দিয়ে নতুন একটি তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে সেখানে তাঁদের কয়েকজনের সঙ্গে তাঁর কথা–কাটাকাটি হয়। এরপর ওই কক্ষ থেকে তিনি চলে আসেন।
একই ঘটনার শিকার আরেক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, তাঁর পারিবারিক অবস্থা ভালো নয়। তাই বাইরে থাকাটা কষ্টকর ছিল। বিষয়টি আবাসিক শিক্ষক তানজিল ভূঞাকে বললে তিনি আবেদন করতে বলেন। পরে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি হলে ওঠার অনুমতি পান এবং ওই শিক্ষকই তাঁকে ১৫৬ নম্বর কক্ষে তুলে দেন। কিন্তু এরপর তিনি এক দিনও ওই কক্ষে থাকতে পারেননি। তাঁর বেডিংপত্রসহ জিনিসপত্র দুই দফা বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। পরে অন্য আরেকটি কক্ষে তিনি থাকছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আবাসিক শিক্ষক তানজিল ভূঞা প্রথম আলোকে বলেন, সোহরাওয়ার্দী হলে গত দুই বছরে ১০০টির বেশি সিট খালি হয়েছে। কিন্তু হল কর্তৃপক্ষের কাছে নেই সিটগুলো। বেশির ভাগই দখলে নিয়েছে ছাত্রলীগ। এ কারণে হলের আবাসিকতা পেয়েও হলে উঠতে পারছেন না সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
তানজিল ভূঞা আরও বলেন, হলের আবাসিকতা ছিল দুজন শিক্ষার্থীর। একজন করোনার আগে আবাসিকতা নিয়েছেন। অন্যজনেরও হলের আবাসিকতা আছে। তাঁদের দুজনকে তিনি সিট ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে ১৫৬ ও ৪৭৫ নম্বর কক্ষে তুলে দেন। তুলে দেওয়ার সময় ওই হলের ছাত্রলীগের মাজহারুল ইসলাম তাঁকে জানান, এই সিটগুলোতে তাঁর ছেলেরা উঠবে। তাই তিনি তাঁদের উঠতে না করেন। কিন্তু তবুও তিনি ওই দুই শিক্ষার্থীকে হলে তুলে দেন। পরে তাঁদের সবকিছু বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। তিনি পরে ওই দুই শিক্ষার্থীকে অন্য দুটি কক্ষে তুলে দিয়েছেন। এই বিষয়গুলো তিনি হলের ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষকে জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। বর্তমানে ওই হলের দায়িত্বে আছেন মাজহারুল ইসলাম নামের একজন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদের অনুসারী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যে কক্ষগুলোতে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মী–সমর্থকেরা থাকতেন, এখন লেখাপড়া শেষ করে তাঁরা চলে গেছেন। সেই কক্ষগুলোতে তাঁরা ছাত্রলীগের কর্মীদের তুলছেন। ওই দুই শিক্ষার্থীকে তাঁরা ওই নির্দিষ্ট কক্ষ ছেড়ে দিতে বলেছেন।
তাঁদের বেডিংপত্র ফেলে দেওয়া হয়নি। তাঁদের পরে অন্য কক্ষে তুলে দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বলেন, সবাইকে বলা আছে, কোনো আবাসিক শিক্ষার্থীকে যেন হল থেকে বের করা না হয়। তিনি এ ধরনের অভিযোগ কেবল শুনলেন। তিনি এ বিষয়ে খোঁজখবর নেবেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন