কুমিল্লার পূজাম-পসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলার পরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাননি তা জানতে চেয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আপনি কি একটি কথার উত্তর দেবেন? আজ সাত দিন হয়ে গেছে, আপনি কুমিল্লাসহ এই জায়গাগুলো পরিদর্শনে যাননি কেন? প্রথম দিন যদি আপনারা কুমিল্লায় যেতেন, তা হলে আজকে আর এসব ঘটনা ঘটত না।’
কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজাম-প, মন্দির, ঘরবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ ও নোয়াখালীর চৌমুহনীতে হত্যাকা-ের প্রতিবাদে গতকাল গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আপনি যদি চৌমুহনী গিয়ে ইসকন’র মন্দিরটা দেখতেন, তা হলে ১৫ আগস্টের জন্য আপনি যত কাঁদেন তার চাইতে কম বেদনা আপনার হতো না। পীরগঞ্জ আপনার শ্বশুরবাড়ি, আপনার ছেলে তো সম্ভবত ওখানকার ভোটার। আপনার তো নৈতিক দায়িত্ব আছে তাদের খোঁজখবর নেওয়ার। অনুগ্রহ করে সেখানে যান।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, আপনি দেশের জন্য অনেক খেটেছেন, এখন বিশ্রাম দরকার। দয়া করে শেখ রেহানার কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিন। প্রধানমন্ত্রী এত পরিশ্রম করেছেন, যার ফল তার শরীরে এসেছে।’
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমরা যদি নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিগত ঘটনা দেখি কিংবা গাইবান্ধার ঘটনা- যেখানে প্রশাসন মেয়েদের ফুটবল খেলতে দেয় নাই; আহমাদিয়াদের ঘরের ভিতরে মিটিং করতে দেয় নাই। এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কোনো বক্তব্য নাই। তার ওয়াজ মাহফিলের কথা একটাই- কঠিন শাস্তি দিব, কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না। এসব বলে তিনি পুলিশের আয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। অর্থাৎ যাকে পার, তাকে ধর। তবে জাফরুল্লাহকে ধইরো না, জেলখানায় মারা যেতে পারে। সে জন্যই হয়তো ধরে না। তার বিরুদ্ধে মাছ চুরির মামলা দাও। কোর্টে দাঁড়িয়ে থাকুক ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ওটা কিন্তু জেলে যাওয়ার চাইতেও খারাপ।
তিনি বলেন, জেলে নেওয়ার চেয়ে আমাকে বেশি কষ্ট দিয়েছে। এর কারণ আমি সত্য কথা বলেছি, আমি ন্যায়ের কথা বলেছি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে যে লুট হয়েছিল, যে ডাকাতি হয়েছিল- সেই লুটের অংশ নিয়ে অনেক দরকষাকষি হয়েছে। এটাতে সবচেয়ে বেশি সাহায্যকারী পুলিশের প্রথম দাবি অর্জন করেছিল পুলিশের আইজিপিকে সিনিয়র সচিব করতে হবে। তারা আরও কিছু দাবি করেছিলেন; সেগুলো এখনো পাননি। ফলে পুলিশের একটি ক্ষোভ রয়ে গেছে।
ডা. জাফরুল্লাহ এও বলেন, পূজাম-পের ঘটনার ১০ দিন আগে থেকেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এমপি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, এবার পূজাম-পে কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে না। প্রতিটা মন্দির নিরবচ্ছিন্নভাবে রক্ষা করবেন বলে আমাদের কথা দিয়েছিলেন। তিনি নিজে থেকে আমাদের কথা দিয়েছেন। কিন্তু তার কিছু গোয়েন্দা বাহিনী আছে। যে বাহিনীর আসল হর্তাকর্তা ‘র’। মোদিবিরোধী আন্দোলনে গ্রেপ্তার আলেমদের মুক্তির দাবিতে আমাদের আলেমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে একাধিকবার দেখা করেছেন। সেটা ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী পছন্দ করেন নাই। তাই তাকে একটু অপমান করল।
তিনি বলেন, ‘আপনারা লক্ষ্য করেছেন আমাদের দেশের নোয়াখালীর সূর্যসন্তান ওবায়দুল কাদের আঙুল নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলে থাকেন- এটা বিএনপি করেছে, জামায়াত করেছে আর তারা পুতপবিত্র। কিন্তু একবারও তিনি নোয়াখালী ঘুরে আসেননি।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, মুক্তিযোদ্ধা ইসতিয়াক আজিজ উলফাত, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, ’৬৯ গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আসাদের ছোট ভাই ডা. নূরুজ্জামান, ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান প্রমুখ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন