বজ্রপাতে নেত্রকোণায় আটজন সহ চার জেলায় ১২ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন ৯ জন। নেত্রকোণার কেন্দুয়া, খালিয়াজুরী, মদন ও পূর্বধলা উপজেলায় বজ্রপাতে ৮ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন ৯ জন।
মঙ্গলবার (১৮ মে) বেলা ৩টা থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে বজ্রপাতে নিহতের এসব ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে খালিয়াজুরীতে তিনজন নিহত ও পাঁচজন আহত, কেন্দুয়ায় ২ জন নিহত ও মদনে ২ জন নিহত এবং চারজন আহত হয়েছেন।
সকাল থেকে জেলায় ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এর সঙ্গে বজ্রপাত। জেলার খালিয়াজুরী উপজেলায় মাঠে কাজ করার সময় তিন কৃষকের মৃত্যু হয়। নিহত তিনজন হলেন: জগন্নাথপুর গ্রামের ছেলু ফকিরের ছেলে ওয়াছেক মিয়া (৩৫), আমীর সরকারের ছেলে বিপুল মিয়া (৩২) ও বাতুয়াইল গ্রামের মঞ্জুরুল হকের ছেলে মনির হোসেন(২৮)।
খালিয়াজুরী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম আরিফুল ইসলাম জানান, বিকাল সোয়া ৩টার দিকে খালিয়াজুরী উপজেলাতে বজ্রপাতসহ ভারি বৃষ্টি হচ্ছিলো। এসময় উপজেলার পুটিয়ার খালে ওয়াছেক, বিপুল ও মনির হোসেন মাছ ধরছিলেন। তখন বজ্রপাতের আঘাতে তারা ঘটনাস্থলেই মারা যান।
এছাড়া, কেন্দুয়া উপজেলায় মাঠে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে দুইজন কৃষক মারা গেছেন। মারা যাওয়া কৃষকেরা হলেন: পাইকুড়া ইউনিয়নের বৈরাটী গ্রামের মো. বায়েজিদ মিয়া (৪২) ও কান্দিউড়া ইউনিয়নের কুণ্ডলী গ্রামের মো. ফজলুর রহমান (৫৫)। নিহত বায়েজিদ বৈরাটী গ্রামের আসন খানের ছেলে আর নিহত ফজলু মিয়া কুণ্ডলী গ্রামের তরব আলীর ছেলে।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে কৃষক বায়েজিদ মিয়া ও ফজলুর রহমান তাদের নিজ নিজ বাড়ির সামনে সবজি ও ধানক্ষেতে কাজ করছিলেন। এসময় হঠাৎ করে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। এক পর্যায়ে বজ্রপাতে তাদের শরীর ঝলসে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পিয়াস পাল তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, মদন উপজেলায় বজ্রপাতে আরো দুুইজনের মৃত্যু হয়। নিহতা হলেন: উপজেলার ফতেপুর গ্রামের আব্দুল মন্নাফের ছেলে আতাবুর (২১) ও আব্দুল কাদিরের ছেলে শরিফ (১৮)।
মদন থানার ওসি ফেরদৌস আলম জানান, বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের মধ্যে বাড়ির সামনে মাঠে তারা খেলা করছিলো। এসময় বজ্রপাতের শিকার হয়ে ২ জন মারা যায় আর চারজন আহত হয়। এছাড়া বাড়ির সামনে কাজ করার সময় বজ্রপাতে আহত হন সুরমা আক্তার নামে এক নারী। আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়েছেন।
এছাড়া, জেলার পূর্বধলা উপজেলায় একজন নিহত হয়েছেন। নেত্রকোণার পুলিশ সুপার মো. আবকর আলী মুন্সি নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নিহত ও আহত সকলেই মাঠ করছিলেন।
এদিকে, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পৌলী ও গিলন্ড গ্রামে পৃথক বজ্রপাতে এক দিনমজুর ও স্কুলছাত্র নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এঘটনায় আহত হয়েছে আরো দুজন। নিহতরা হলেন: জেলার ঘিওর উপজেলার দিনমজুর আজমত আলী (৫০) ও সদর উপজেলা গিলন্ড গ্রামের স্কুল ছাত্র আসিফ মোল্লা (১৪)।
পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. কবীর হোসেন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নিহত আজমত আলী পৌলী এলাকার কৃষক আব্দুল হকের বাড়িতে দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন। বিকেলে ধানক্ষেত থেকে ধানের বোঝা মাথায় নিয়ে তিনি বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় তার ওপর বজ্রপাত হলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।
এদিকে একই সময়ে সদর উপজেলা গিলন্ড গ্রামে বজ্রপাতে স্কুলছাত্র আসিফ ও তার দুই বন্ধু গুরুতর আহত হয়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে আসিফ মারা যায়।
অন্যদিকে, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়নের তেগাঙ্গা গ্রামের তাজ উদ্দিনের ছেলে আবু তাহের বজ্রপাতে মারা গেছেন।
স্থানীয়রা জানান, আবু তাহের বিকালে গ্রামের কাছের বন্দেহরি বিলে মাছের পোনা ধরে বিক্রি করার জন্য বাজারে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বিলের পাড়েই বজ্রপাতের শিকার হন তিনি। বজ্রপাতের তার বুকসহ শরীরের সামনের অংশ ঝলসে যায় এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জনাব মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, নিহত আবু তাহেরের পরিবারকে নগদ ২০ হাজার টাকা সহয়তা দেওয়া হবে। এছাড়া, কিশোরগঞ্জের নিকলীতে বজ্রপাতে এক কিশোর রাখাল নিহত হয়েছেন।
শীর্ষনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন