শিক্ষাজীবনের সবস্তরে প্রথম শ্রেণি বাধ্যতামূলক হলেও সব দ্বিতীয় শ্রেণি পাওয়া প্রার্থী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। বার বছর আগে নিয়োগ পাওয়া ওই শিক্ষক ড. আবু ছালেহ মোহাম্মদ ওয়াদুদুর রহমান (তুহিন ওয়াদুদ)। তিনি বর্তমানে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে ক্যাম্পাসে আলোচনা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। সম্প্রতি ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও আবেদনের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে আসে।
জানা যায়, ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় (পরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ করা হয়) প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১ম উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম লুৎফর রহমান কয়েকটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। প্রভাষক নিয়োগের শর্ত হিসেবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতকোত্তর শিক্ষাজীবনের সব স্তরে প্রথম শ্রেণি চাওয়া হয়। আবেদনের শেষ দিন ছিল ১৭ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখ।
জানা গেছে, ওই বিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ পান বাংলা বিভাগে আবেদনকারী তুহিন ওয়াদুদের শিক্ষাজীবনে মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত সব পর্যায়ে দ্বিতীয় বিভাগ থাকলেও তাকে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। উক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলা ও ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক নিয়োগে এমফিল অথবা পিএইচডি ডিগ্রিধারী ও অভিজ্ঞ প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা থাকলেও একাডেমিক জীবনের রেজাল্টের শর্ত শিথিল করার কথা বলা হয়নি। সে সময় অনেক যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে তুহিন ওয়াদুদকে বাংলা বিভাগে নিয়োগ দিতেই ভয়াবহ এই জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৯ সালের ৩ মার্চ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন তুহিন ওয়াদুদ। বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড থেকে ১৯৯২ সালে দাখিল ও ১৯৯৪ সালের আলীম পরীক্ষায় অংশ নিয়ে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন তিনি। এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে স্নাতক ও ১৯৯৮ সালের স্নাতকোত্তর পরীক্ষায়ও তিনি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। ২০০৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
পিএইচডি থাকার কারণে তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে বলে জানান তুহিন ওয়াদুদ। তবে বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষাগত যোগ্যতার ফলাফলে ছাড় দেওয়ার কথা বলা নেই, এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোটামুটি ওপেন সিক্রেট। এ পর্যন্ত সব উপাচার্যই বিষয়টি জানলেও রহস্যজনকভাবে কেউ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। বরং এই অযোগ্যতা নিয়েই এক যুগ ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন তিনি। অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য সম্প্রতি আবেদন করেছেন বলেও একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বেগম বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন রেজিস্ট্রার প্রফেসর আলাউদ্দিন মিয়া ও উপাচার্য প্রফেসর ড. এম লুৎফর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
তুহিন ওয়াদুদ বলেন, একই বিভাগে সম্প্রতি অধ্যাপক পদেও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে, সেখানেও পিএইচডি ডিগ্রীদের জন্য প্রথম শ্রেণি বাধ্যতামূলক করা হয়নি। উচ্চ্তর ডিগ্রি ও গবেষণাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে । বেরোবিতে যোগদানের আগে ২৬তম বিশেষ বিসিএসে ক্যাডার হয়ে সরকারি কলেজে শিক্ষক ছিলাম।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বেরোবি উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ তুহিন ওয়াদুদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ও পদোন্নতি পাওয়ার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন