রাজনৈতিক মতাদর্শের দিক থেকে ভিন্নতা থাকলেও একটি বিষয়ে ইসলামিক শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন ও আহলে হাদিসের মতো ধর্মভিত্তিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক কাতারে দাঁড়ালেন ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের কর্মীরা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর বিরুদ্ধে ফেইসবুক পোস্টে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে তার শাস্তি দাবিতে শনিবার দুপুরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করলেন তারা।
অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ওই ছাত্রীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশ বলছে, ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট ‘হ্যাক করে’ আজেবাজে পোস্ট দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ওই শিক্ষার্থী একটি জিডি করেছেন। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গত বছর এপ্রিলেও ফাহাদ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উঠলে তার শাস্তির দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামিক সোসাইটি নামের একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে, ওই সংগঠনের উদ্যোগেই শনিবার ক্যাম্পাসে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
সংগঠনটির নেতৃত্বে থাকা আল ইমরান বাবু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র শিবির, আহলে হাদিস, তাবলীগ ও চরমোনাইয়ের অনুসারীসহ সব মতাদর্শের শিক্ষার্থীরাই অংশ নিয়েছেন।
“আমাদের কাছে যখন তথ্য আসে তখন আমরা সবাই মিলে মানববন্ধনের ডাক দেই।”
মানববন্ধনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অংশ নিয়েছিলেন কি না জানতে চাইলে সংগঠনটির বিগত কমিটির দপ্তর সম্পাদক এবং আগামী কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ প্রত্যাশী শাহবাজ হোসেন তা স্বীকার করেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইসলামকে কটূক্তি করে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়েছে, যার ফলে আমাদের কিছু কর্মীও এই কর্মসূচিতে গিয়েছিল।”
ছাত্রলীগের আরেক পদ প্রত্যাশী সৈয়দ শাকিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ বিষয়ে আমাদের কেন্দ্রীয় কোনো নির্দেশনা এখনও পর্যন্ত নাই। খুব দ্রুতই আমরা কর্মসূচি দেব আরকি।
“কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ যদি নির্দেশনা দেয় তাহলে আমরা এ রকম আন্দোলনে যাব। না দিলে হয়ত আমাদের বিবেকের তাড়না থেকে কোনো প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করলেও করতে পারি, সেটা আমাদের মাঝেও কথাবার্তা চলছে।”
এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যলয় ছাত্রদলের শীর্ষস্থানীয় পদ প্রত্যাশী শাহাদাৎ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের কিছু নেতাকর্মী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে আজকের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার স্থায়ী বহিষ্কারসহ আইনি ব্যবস্থা চাই।”
অভিযোগের মুখে থাকা ওই ছাত্রী সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার একটি সম্পাদক পদে ছিলেন। তবে তার শাস্তি চেয়ে কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন এই সংগঠনের কর্মীরাও।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মী তৌসিব মাহমুদ সোহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি একজন মুসলিম। কেউ যখন আমার ধর্ম নিয়ে কথা বলে সে যেই হোক, তা আমারও লাগে। সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবেই তাদের প্রোগামে যুক্ত ছিলাম।”
এদিকে ওই ছাত্রীকে এরইমধ্যে সংগঠনের দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মিশু।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাকে সাত কর্ম দিবসের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। কারণ দর্শানোর পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেব। তার যে ফেইসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে তাতে দখা যায়, সে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। সে সংগঠনের নিয়ম অমান্য করেছ, সে কারণে তাকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।”
মানববন্ধনে ছাত্রলীগকর্মী কোণিক স্বপ্নীল (ছবিতে ডান থেকে দ্বিতীয়)মানববন্ধনে ছাত্রলীগকর্মী কোণিক স্বপ্নীল (ছবিতে ডান থেকে দ্বিতীয়)গত বছর ফাহাদ নামের ওই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ফেইসবুক পোস্টে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ উঠলে তার শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা। সে সময় এসব সংগঠনের তৎপরতার প্রতিবাদ জানায় ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্টসহ বামধারার ছাত্রসংগঠনগুলো।
ইসলামিক শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনসহ ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলোর উদ্যোগে গঠিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামিক সোসাইটির নেতা আল ইমরান বাবু বলছেন, ওই ছাত্রীর স্থায়ী বহিষ্কার চেয়ে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেবেন তারা।
“আমরা তার স্থায়ী বহিষ্কার চাই। রাষ্ট্রীয়ভাবে যে ধর্ম অবমাননার শাস্তি আছে, তা তাকে দেওয়া হোক।”
গত বছর তাদের দাবির মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফাহাদকে পুলিশে দিয়েছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এবারের বিষয়টিও ‘পর্যালোচনা করছেন’ জানিয়ে পুরান ঢাকার এই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোস্তফা কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মঙ্গলবার যেহেতু অফিস খোলা, ওই দিন আমরা এটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ দিলে ভালো হয়। কেউ যদি অভিযোগ দেয় তাহলে আমরা সেই অভিযোগের আলোকে সিদ্ধান্ত নেব।”
ফাহাদের ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফেইসবুকে মন্তব্যের ক্ষেত্রে সতর্ক করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
তবে এক্ষেত্রে কী ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়ে জানতে ওই ছাত্রীর মোবাইলে ফোন করে বন্ধ পাওয়া যায়। তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্টও পাওয়া যায়নি।
তবে মিরপুরে বসবাসকারী এই ছাত্রী তার ক্ষতি করা হতে পারে শঙ্কা প্রকাশ করে পল্লবী থানায় একটি জিডি করেছেন বলে জানিয়েছেন ওই থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেয়েটি বলেছে, আমার ফেইসবুক আইডি হ্যাক করে কেউ উল্টা-পাল্টা লিখেছে। তার বক্তব্যের সত্যতা যাচাইয়ে আমরা সাইবার ক্রাইমের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করতেছি। বিষয়টি কালকে আমরা সাইবার ক্রাইমে পাঠাব।”
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন