বর্ধিত সভার পর গণফোরামের দুই অংশের নেতারা দুদিকে হাঁটছেন। একাংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেন এবং অন্য অংশের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও মোস্তফা মহসিন মন্টু। এদিকে বর্ধিত সভার পর সুব্রত-সাইয়িদ-মন্টুরা কাউন্সিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বর্ধিত সভা করা নেতারা এখনো ড. কামাল হোসেনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে জানিয়েছেন, তিনি ভুল শুধরে নিলে তাকে নিয়ে গণফোরাম করব। আর না হলে তাকে বহিষ্কার করা হবে। অন্যদিকে ড. কামাল হোসেন ও ড. রেজা কিবরিয়ারা অন্য অংশের নেতাদের বহিষ্কারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে যারা বোমা ফাটিয়েছিলেন তাদের সঙ্গে দল করা যায় না। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া এসব লোকদের নিয়ে রাজনীতি করতে চান। এসব লোক গণফোরামে থাকলে আমরা সেই গণফোরামে থাকতে চাই না।’
কে বোমা হামলা করেছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে গণফোরাম নেতা মোস্তাক আহমেদ ১৪ আগস্ট ১৯৭৫ ঢাবি ক্যাম্পাসে বোমা হামলা করেছিলেন। তখন তিনি জাসদের গণবাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে জাসদ হেন কাজ নেই যা করেনি।’
মোস্তাক আহমেদের বিষয়ে জানতে চাইলে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘কাচের ঘরে বসে বাইরের কাউকে ঢিল মারা ঠিক না। কার অতীত কী তা দেশবাসী জানে।’
মোস্তাক আহমেদ দেশ রূপান্তরকে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘তখন আমি জাসদের গণবাহিনীর সদস্য ছিলাম। আমার ওপর জ্যেষ্ঠ নেতারা যে দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন আমি তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছি। তখন বয়স কম থাকায় ভালো কি মন্দ সে বিচার করিনি। নেতাদের দায়িত্ব সততার সঙ্গে পালন করেছি। অবশ্য এজন্য আমাকে গ্রেপ্তার হতে হয়েছে। অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। পরে আমি জাসদ ত্যাগ করেছি।’
এদিকে মোস্তাকের বিষয়ে আক্ষেপ করে অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘তাকে দ্বিতীয় যুগ্ম সম্পাদক করা হয়েছিল। আমি প্রতিবাদ করে তাকে প্রথম যুগ্ম সম্পাদক করেছিলাম। যে ৭০ নেতা সভা ডাকার জন্য দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দিয়েছিলেন তাদের একজন মোস্তাক। অথচ আজকে এই মোস্তাক আমাদের দল থেকে বের করে দেওয়ার চক্রান্ত করছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত ২৭ বছর আমরা ড. কামাল হোসেনকে আগলে রেখেছিলাম। তার ওপর কোনো কালিমা লেপন করতে দিইনি। আজকে তিনি আমাদের কথা শুনছেন না। এভাবে উনি ভুল পথে চলতে থাকলে তাকে আমরা বহিষ্কার করতে বাধ্য হবো।’
এদিকে বর্ধিত সভায় অংশ নেওয়া নেতাদের বিষয়ে গণফোরাম কী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে জানতে চাইলে রেজা কিবরিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাউকে বহিষ্কার করতে হলে একটি প্রক্রিয়ায় মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সেজন্য আগে কারণ দর্শাও নোটিস দিতে হয়। তার উত্তর পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আমরা সে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আসলে যারা বর্ধিত সভা করেছে তারা মূলত নিজেরাই নিজেদের গণফোরাম থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। তারা এখন গণফোরামের কেউ নন। তারা আর গণফোরাম করবে না বলে মনে করছি।’
বর্ধিত সভার পর আপনাদের পরবর্তী কার্যক্রম কী জানতে চাইলে মোস্তফা মন্টু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা শিগগিরই কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির সদস্যদের নিয়ে বসব। এরপর বিভিন্ন কমিটি, উপকমিটি করব। সেই কমিটি সারা দেশ সফর করে জেলার সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করবে। পরবর্তী সময়ে সারা দেশের কাউন্সিলরদের ভোটে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হবে। কারণ বর্তমানে গণফোরামের নেতাদের কারও কোনো পদ নেই।’
যারা বর্ধিত সভায় অংশ নিয়েছেন তাদের বহিষ্কারের পথে হাঁটছে গণফোরাম। দলটির সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়ার এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মন্টু বলেন, ‘উনি আমাদের বহিষ্কার করার কে? দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়ার পদই তো অবৈধ। তারা কাউন্সিল না করে কারও কোনো অনুমতি না নিয়ে নিজেরা নিজেদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা বরং গঠনতন্ত্র মেনে বারবার তাদের সভা ডাকার বিষয়ে বলেছি। কিন্তু তারা তাতে কর্ণপাত করেননি। সর্বশেষ দলের ৭০ নেতা চিঠি দিয়ে সভা ডাকার কথা বললেও তাতে সাড়া দেননি কামাল হোসেন। বাধ্য হয়ে আমরা বর্ধিত সভা ডেকেছি।’
গতকাল রেজা কিবরিয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত শনিবার গণফোরামের নাম করে প্রেস ক্লাবের বর্ধিত সভায় যারা উপস্থিত ছিলেন, তারা কার্যত গণফোরামের রাজনীতি থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করেছেন। আমরা গভীর অনুতাপের সঙ্গে লক্ষ করছি যে গণফোরামের কতিপয় সদস্য দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন এবং দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে সচেষ্ট হয়েছেন। গণফোরামের পদ-পদবিহীন কিছু সদস্য দলীয় সিদ্ধান্ত ছাড়াই দলের নাম ব্যবহার করে একটি সভা অনুষ্ঠান করেন, যেটিকে তারা ভুলভাবে গণফোরামের সভা হিসেবে পরিচয় দেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, যারা দলীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত মানতে চান না তারা স্বেচ্ছায় দল ছেড়ে যেতে পারেন, কিন্তু দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার মিথ্যা দাবি করে তাদের কাউকে বিভ্রান্ত করা উচিত নয়। বাংলাদেশের প্রতিটি বড় রাজনৈতিক দলের দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অতীতে যারা ক্রমাগত গণফোরামের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করেছে দল তাদের ক্ষমা করে দেবে সে আশা করা উচিত নয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন