কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহতের ঘটনায় করা মামলায় আত্মসমর্পণ করা ৪ পুলিশ সদস্য ও ওই ঘটনায় পুলিশের করা মামলার ৩ সাক্ষীসহ ৭ জনকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
বুধবার (১২ আগস্ট) মামলার তদন্ত কর্মকর্তার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ ৭ দিনের রিমান্ডে মঞ্জুরের এ আদেশ দেন।
কক্সবাজার আদালতের পুলিশ পরিদর্শক প্রদীপ কুমার দাশ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রিমান্ড মঞ্জুর করা ৪ পুলিশ সদস্য হলেন- সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন ও আবদুল্লাহ আল মামুন। অপর তিনজন হলেন- মো. আয়াছ, মো. নুরুল আমিন ও মো. নাজিমুদ্দিন।
মেজর সিনহার মৃত্যুর পর টেকনাফ থানায় পুলিশের করা দুটি মামলার ওই ৩ সাক্ষীকে গতকাল গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)। আর সিনহা হত্যা ঘটনায় তার বোনের করা হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ওই ৪ পুলিশ সদস্য আগেই আদালতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন।
গত ৬ আগস্ট মেজর সিনহা হত্যা মামলায় ১ নম্বর আসামি টেকনাফ বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক মো. লিয়াকত, ২ নম্বর আসামি টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস ও ৩ নম্বর বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতকে ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন কক্সবাজারের সিনিয়র জুটিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের আদালত।
অন্যদিকে সহকারী উপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন ও আবদুল্লাহ আল মামুনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেয়া হয়। গত ৮ ও ৯ আগস্ট কক্সবাজার কারাগারের জেলগেটে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব। পরদিন ১০ আগস্ট তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করে র্যাব। শুনানি শেষে আদালত আজ ওই ৪ পুলিশ সদস্যকে ৭ দিন করে রিমান্ডে পাঠায়।
গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাক বাহারছড়া চেকপোস্টে নিরাপত্তা চৌকিতে তল্লাশির সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় হত্যা ও মাদক আইনে এবং রামু থানায় মাদক আইনে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করে।
হত্যাকাণ্ডের ৫ দিনের মাথায় ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসী বাদী হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালতে এসআই লিয়াকত, ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আলোচিত এ হত্যা মামলার ৯ আসামি হলেন- টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস, টেকনাফ বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক মো. লিয়াকত, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) টুটুল ও কনস্টেবল মোহাম্মদ মোস্তফা। এদের মধ্যে আসামি মোস্তফা ও টুটুল পলাতক আছেন।
ওইদিনই ওসি প্রদীপসহ ৭ পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করে অভিযুক্ত সব আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
এর একদিন পর ৬ আগস্ট ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতসহ ৭ আসামি কক্সবাজার সিনিয়র জুটিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
শুনানি শেষে আদালত ওসি প্রদীপ কুমার দাস, এসআই লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতকে ৭ দিন করে রিমান্ডে পাঠায়। বাকি ৪ জনকে ওইদিনই জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
মেজর সিনহা হত্যায় পুলিশের করা মামলায় সিনহার সঙ্গে থাকা শিপ্রা দেবনাথ গত রবিবার ও শাহেদুল ইসলাম সিফাত গত সোমবার জামিনে মুক্ত হন।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন