করোনা দুর্যোগে ঈদ যাত্রার প্রথম দিকে যাত্রীর চাপ ছিল কম। মানা হচ্ছিল স্বাস্থ্যবিধিও। শেষ প্রান্তে এসে যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনের নির্দেশনা গুরুত্ব হারায়। ভেঙে পড়ে স্বাস্থ্যবিধি। বাড়িয়ে নেওয়া হয় বাসের ভাড়াও। তবে কয়েকটি পরিবহন ছিল এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। যাত্রীর চাপ সত্ত্বেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চালিয়েছে, ভাড়াও বেশি নেয়নি। ঈদ উদ্যাপন শেষে ঢাকায় ফিরছে মানুষ। এবারও দেখা যাচ্ছে একই চিত্র। মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। একই সঙ্গে আদায় করা হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
ঈদ-পরবর্তী তৃতীয় দিন গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা থেকে রাজধানীর গাবতলী টার্মিনালে যাত্রী নিয়ে প্রবেশ করে ‘রয়েল পরিবহন’। পরিবহনটিতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাসের প্রতি দুই আসনে একজন যাত্রী বহন করার কথা। সে হিসাবে করোনাকালে দুই আসনে একজন যাত্রী হিসেবে সরকার ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকা পর্যন্ত বাসের ভাড়া হয় ৭০০ টাকা। এখন স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে প্রতি আসনেই যাত্রী বহন করা হচ্ছে। ভাড়াও নেওয়া হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা।
ওই পরিবহনে ঢাকায় ফেরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে মোসলেম উদ্দিন সুজন বলেন, ‘প্রতি আসনেই বাড়তি ভাড়ায় যাত্রী বহন করা হয়েছে। জীবাণুনাশকও ছিটানো হয়নি। মাস্ক ছিল না চালক ও বেশির ভাগ যাত্রীর।’
একই দৃশ্য দেখা যায় চুয়াডাঙ্গা থেকে গাবতলীতে আসা ‘পূর্বাশা পরিবহনে’। ওই পরিবহনের যাত্রী নাসিম আলী বলেন, ‘ভাড়া বেশি নিয়েছে আবার স্বাস্থ্যবিধিরও কোনো বালাই নেই।’ ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থেকে আসা ‘সুবর্ণ’ ও ‘সাউদিয়া পরিবহনে’ও একই দৃশ্য।
মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকায় ফেরা যাত্রীর অতিরিক্ত চাপ নেই। তার পরও বাসগুলো স্বাস্থ্যবিধি না মেনে যাত্রী বহন এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। টাঙ্গাইল থেকে ‘নিরালা সুপার সার্ভিসে’ ঢাকায় আসেন হাসান লিটন নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, করোনার কারণে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। আবার প্রতি আসনেই যাত্রী বহন করা হচ্ছে। বাসে স্বাস্থ্যবিধি পালন হচ্ছে না। একইভাবে বাড়তি ভাড়ার সঙ্গে প্রতি আসনে যাত্রী বহন করছে নেত্রকোনা থেকে মহাখালী আসা ‘নেত্র পরিবহন’। আর তা জানা গেল ওই পরিবহনে ঢাকায় ফেরা যাত্রী নিশাদ আহমেদের বক্তব্যে।
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গতকাল ঢাকামুখী যাত্রীর চাপ দেখা যায়নি। হানিফ পরিবহনের একটি বাস টার্মিনালে প্রবেশ করে দুপুর দেড়টার দিকে। বাসের প্রতি আসনেই যাত্রী দেখা যায়। তবে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে তথ্য মেলেনি।
ওই সব পরিবহনের কন্ডাক্টর ও চালকরা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তাঁরা শুধু বলেন, ‘এগুলো মালিকদের কাছ থেকে জানুন; আমরা কিছু বলতে পারব না।’
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতউল্লাহ এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটা ঠিক যে অনেক পরিবহনই স্বাস্থ্যবিধি মানছে না এবং ভাড়াও বেশি নিচ্ছে। এগুলো দেখার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকার কথা। তা আছে কি না জানি না।’ তবে গতকাল পর্যন্ত সড়ক ও বাস টার্মিনালগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালত কার্যকর থাকার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন