বাংলাদেশের করোনা সংক্রমণের পর থেকেই সমালোচনায় বিদ্ধ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এখন পর্যন্ত একজন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবেনা যারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কার্যক্রমকে সমর্থন করছেন বা তাঁরা ভালো কাজ করছেন বলে মনে করেন। মোটামুটিভাবে জনগণের মাঝে একটা জাতীয় ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্যর্থতা নিয়ে। কিন্তু এরপরেও এখন পর্যন্ত বহাল তবিয়তে আছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। কিভাবে তাঁরা এখনো দায়িত্ব আছেন তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন এবং জনগণ মনে করছে যে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী শুধু করোনা মোকাবেলাতেই ব্যর্থ হচ্ছে না, এই সরকারের সমস্ত অর্জনকেও ব্যর্থ করে দিচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন ৩ কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বোচ্চ পদধারী দুজন ব্যক্তিকে সরে যাওয়া দরকার।
দায়িত্ব পালনে অযোগ্যতা-ব্যর্থতা
করোনা পরিস্থিতি যখন ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে তখন জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসেছিলেন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে করোনা মোকাবেলায় জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর। তাঁরা করোনার জন্যে কিছুই করেনি এবং ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে যখন উহান ফেরত শিক্ষার্থীরা এলো, তখন দেখা গেল যে, বাংলাদেশে কোন কোয়ারেন্টাইন সেন্টার করা হয়নি বিদেশ ফেরতদের রাখার জন্যে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কি হিসেব করেনি যে, সারাবিশ্বে করোনা ছড়িয়ে পড়লে সারাবিশ্বে যত বাংলাদেশি আছে তাঁরা দেশে ফিরতে চাইবে এবং তাঁদের জন্য একটি ব্যবস্থা রাখতে হবে। এই কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা না থাকার জন্যে ইতালি ফেরতরা বাংলাদেশে আসার পর আশকোনা হজ্ব ক্যাম্পে থাকতে চাইলো না- যেখান থেকে সঙ্কটের সূচনা। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই ব্যর্থতা-অযোগ্যতার ফিরিস্তি অনেক দীর্ঘ এবং গণমাধ্যমে তা ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে।
দুর্নীতি
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শুধু করোনার সময়ে নয়, সারা বছর জুড়েই সীমাহীন দুর্নীতি করেছে এবং সেসমস্ত দুর্নীতির অভিযোগ এখন প্রকাশিত হচ্ছে। সিএমএইচডি’র বিদায়ী পরিচালক যখন বিদায় নেন তখন জনপ্রশাসন সচিবের কাছে লেখা চিঠিতে তিনি সকলের নাম-পরিচয় উল্লেখ করে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু এই সব অভিযোগের তদন্ত হয়নি। জেকেজি’র নকল মাস্ক সরবরাহের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মিঠুর দুর্বৃত্তায়ন-দুর্নীতির বিরুদ্ধেও এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ব্যর্থ। বরং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১৪ জন ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত করলেও মিঠুর কোন প্রতিষ্ঠানকে এখন পর্যন্ত কালো তালিকাভুক্ত করা হয়নি।
দুর্নীতির সমর্থক হয়ে গেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আর প্রত্যেকটি দুর্নীতির ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক ব্যক্তির নাম জড়িয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও মহাপরিচালক এবং মন্ত্রীর নামও চলে আসছে। অথচ এই সব ব্যাপারে কোন রকমের বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে।
সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বা স্যাবোটাজ
এখন করোনা মোকাবেলায় যেভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কাজ করছে তাতে অনেকেই মনে করছেন যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আসলে সরকারের বিরুদ্ধে স্যাবোটাজ করছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী যিনি কখনোই আওয়ামী লীগার ছিলেন না। তাঁর পিতা স্বৈরাচারী এরশাদের মন্ত্রী ছিলেন। এই উড়ে এসে জুড়ে বসে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে মন্ত্রী হওয়া ব্যক্তিটি কখনো আওয়ামী লীগের শুভাকাঙ্ক্ষী নন বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই। আর তাই তিনি সরকারের বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত কিনা সেই প্রশ্ন অনেকের মধ্যে উঠেছে। একই প্রশ্ন উঠেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে। যার রাজনৈতিক পরিচয় স্বাধীনতা বিরোধী এবং যিনি সারাজীবন ড্যাব এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই দুই ব্যক্তির হাতেই সরকারের সর্বনাশ হচ্ছে কিনা সেটাও ভেবে দেখার বিষয় বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী।
এই সমস্ত বাস্তবতায় সাধারণ মানুষের প্রশ্ন এখনো কিভাবে বহাল আছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজি এবং মন্ত্রী?
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন