প্রতিবছরের মতো চলতি বর্ষা মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড়ে মেঘনা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। মেঘনার তীব্র স্রোতের কারণে ইতোমধ্যে প্রাচীন জনপদ চালতলপাড় ইউনিয়নের চকবাজার এলাকার বৃহৎ এলাকার অন্তত শতাধিক বাড়িঘর ও স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সহায় সম্পদ হারিয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন অনেকে। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্তরা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকেও ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
এলাকাবাসী এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, গত ২০১৭ সালের শুরু থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সর্বশেষ উত্তরের উপজেলা নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড়ে তীব্র নদী ভাঙন শুরু হয়। এর থেকে গত তিন বছরের ব্যবধানে আগ্রাসী মেঘনার তীব্র ঢেউ আর স্রোতের কারণে চাতলপাড়ের প্রাচীন বাজার চকবাজারের একাংশসহ আশপাশের অন্তত শতাধিক স্থাপনা বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। সহায় সম্পদ হারিয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন অনেকে।
ভাঙন কবলিত চকবাজার এলাকার চকবাজার ও বিলেরপাড়ের একমাত্র মসজিদটিও বর্তমানে বিলীন হওয়ার পথে। বালির বস্তা ফেলে মসজিদটিকে কোন ক্রমে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ভাঙন আতংকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা।
নদীপাড়ের বাসিন্দা গুলজাহান বেগম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভাঙনের স্থান দেখিয়ে বলেন, ওই স্থানে আমার বসতঘর ছিল। হঠাৎ করে নদী আমার স্বপ্নের সংসারটারে তছনছ কইরা দিল। দুটি ঘর মুহূর্তেই নিয়ে যায় রাক্ষুসী নদী।
৮ ছেলে সন্তান নিয়ে গুল জাহান বেগম এখন ভিটেমাটি ছাড়া। ঠাঁই হয়েছে প্রতিবেশি জুলহাস মিয়ার বাড়িতে। গুলজাহান আক্ষেপ করে বলেন, স্বামী ভাঙ্গারী ব্যবসা করেন। তার মধ্যে বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে গেল নদী। এখন ৮ সন্তান নিয়ে কী করবো বুঝতে পারছি না। সরকারের পক্ষ থেকে শুনেছি অনেক লোকজনকে সাহায্য সহযোগিতা করেছে। আমাদের খবর কেউ নেয় না। আমরা সরকারের কাছে সাহায্য ও সহযোগিতা কামনা করছি।
একই এলাকার নদী ভাঙনের শিকার মোর্শেদা বেগম জানায়, তার স্বামী সৌদি আরবে থাকেন। সেখানে তিনি কষ্টে আছেন। যার কারণে ঠিক মতো বাড়িতে টাকা পয়সা পাঠাতে পারেন না। এর মধ্যে সহায় সম্বল বলতে যে বসতভিটা ছিল তা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি এখন ২ মেয়ে ১ ছেলে নিয়ে কষ্টে জীবন যাপন করেছেন। অসহায় অবস্থায় থাকলেও কেউ খোঁজ খবর নেন না। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সহযোগিতা কামনা করেছেন।
চাতলপাড় ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ফরিদ মিয়া জানান, চাতলপাড়ের বিলের পাড়ে আমার ১০ শতাংশ জমি ছিল। এখন তা কেবল ইতিহাস।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কেউ কারো নয়। আমরা যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি কেউ খবর নেয় না। তবে নদী ভাঙনের শিকার ক্ষতিগ্রস্থদের সরকারি ভাবে সহযোগিতা করা উচিৎ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
চাতলপাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল আহাদ বলেন, গত ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে চাতলপাড় নদী ভাঙন শুরু হয়। ইতোমধ্যে চাতলপাড় চক বাজার এবং বিলের পাড়ের অন্তত শতাধিক স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে চকবাজার এবং বিলের পাড় এলাকার একমাত্র মসজিদটি বিলীনের পথে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ২০ লাখ টাকার বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে। বালির বস্তা ফেলে মসজিদটিকে বিলীনের হাত থেকে রক্ষা করার শেষ চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের এলাকার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসন) সংসদ সদস্য বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম গত ৬ জুলাই নদী ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করে একটি মসজিদ ও ক্ষতিগ্রস্ত ১৭টি পরিবারের মাঝে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় তহবিল থেকে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকার আর্থিক অনুদানের চেক প্রদান করেন। পরবর্তী সময়ে আরো সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন এমপি। তবে ভাঙন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তিনি।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জনকুমার দাস জানান, মেঘনা, খাগালিয়া ও বেমালিয়া এই তিন নদীর মোহনার কারণে চাতলপাড় চকবাজার এলাকায় পানির স্রোতের তীব্রতা বেড়েছে। ভাঙনরোধে বর্তমানে ২০ লাখ টাকার জিও ব্যাগে করে বালি ফেলা হয়েছে। এছাড়া ২ কিলোমিটারের বেশি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ এবং ৮৪০ মিটার নদী খননের জন্যে ১২০ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন